‘যখন আমার নাম ঘোষণা হলো, তখন কিছুটা আশ্বর্যও হয়েছি’
২৩ মে ঢাকার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে দেওয়া হলো ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার’। সমালোচক ও তারকা জরিপ—দুই বিভাগে ২০২৪ সালের পুরস্কারজয়ীদের নিয়ে নিয়ে এই বিশেষ আয়োজন।
সেরা গায়ক
প্রীতম হাসান, ‘লাগে উরাধুরা’, তুফান
এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে তুফান সিনেমার ‘লাগে উরাধুরা’। গানটির জন্য সেরা গায়কের পুরস্কার পেয়েছেন প্রীতম হাসান। গানটি ইউটিউবে গানের গ্লোবাল তালিকায়ও জায়গা করে নিয়েছিল। গানটি নিয়ে প্রীতম হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি একটি আইটেম গানের ফোক ফিউশন। ড্যান্স বিটের একটি গান।’ ‘লাগে উরাধুরা’র কোরাস অংশের সুর রাজ্জাক দেওয়ানের ‘ঘুম ভাঙ্গাইয়া গেল রে মরার কোকিলে’ অংশ থেকে নেওয়া। ওই অংশের লেখক শরীফুদ্দিন। বাকি অংশ লিখেছেন রাসেল মাহমুদ এবং সুর ও সংগীত প্রীতম হাসানের। এতে দ্বৈতভাবে কণ্ঠ দিয়েছেন প্রীতম হাসান ও দেবশ্রী অন্তরা।
সেরা পরিচালক (সীমিত দৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র)
জাহিদ প্রীতম, বুক পকেটের গল্প
বুক পকেটের গল্প নির্মাণ করেই পরিচিতি পেয়েছেন জাহিদ প্রীতম। শুদ্ধতম ভালোবাসা খোঁজার তিনটি আলাদা গল্প নিয়ে এটি নির্মাণ করেছেন এই তরুণ নির্মাতা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বুক পকেটের গল্প বের হওয়ার পরপরই আমরা এই গল্পের জনপ্রিয়তার আঁচ বুঝতে পারলাম। রাতারাতি আমাদের সবার ফলোয়ার বেড়ে গেল। কাজ নিয়ে প্রতিটা সিনেমা রিলেটেড পেজগুলোতে বছরব্যাপী উচ্ছ্বাস আমাদের আনন্দ দিচ্ছিল। প্রথম ১ কোটি ভিউ আসে ১৫ দিনেই। পর্দার অচেনা চরিত্রগুলোই হয়ে উঠল দর্শকদের সবচেয়ে প্রিয়।’ এতে অভিনয় করে আলাদাভাবে পরিচিতি পেয়েছেন শাশ্বত দত্ত, মারিয়া, মীর রাব্বি, প্রিয়ন্তী উর্বী, আইশা খান, আবু হুরায়রা।
সেরা চিত্রনাট্যকার (সীমিত দৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র)
সুব্রত সঞ্জীব, রোদ বৃষ্টির গল্প
হাসান নামে এক নৃত্যশিল্পীকে নিয়ে রোদ বৃষ্টির গল্প নির্মাণ করেছেন সুব্রত সঞ্জীব। নাটকটির চিত্রনাট্যের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। নাচকে ঘিরে নানা চড়াই–উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে যায় হাসান। কেউ তাকে গ্রহণ করতে চায় না। হাসান চরিত্রে অভিনয় করেছেন খায়রুল বাসার, তাঁর প্রেমিকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাদিয়া আয়মান। নিজের বেশির ভাগ নাটকের চিত্রনাট্য নিজেই লেখেন সঞ্জীব। থাকেন বরিশালে, সেখানেই নাটক নির্মাণ করেন তিনি। ২০১৬ সালে অপেক্ষা ও বাকি সব গল্প দিয়ে টিভি নাটকে সঞ্জীবের অভিষেক। প্রায় এক দশকের ক্যারিয়ারে সুগন্ধিকলম, অভিমানী, নিথর কোলাহল, ধানসিঁড়ি, দেহতরীসহ বেশ কয়েকটি নাটক পরিচালনা করেছেন তিনি।
সেরা নবাগত অভিনয়শিল্পী
রেহান, যুগল
যুগল নাটকে আহনাফ নামের এক তরুণের চরিত্রে অভিনয় করেছেন রেহান। মডেল হওয়ার স্বপ্ন দেখে আহনাফ। চরিত্রটির সঙ্গে রেহানের নিজেরও অনেক মিল রয়েছে। রেহানের পুরো নাম ফররুখ আহমেদ। ২০১৭ সাল থেকে বিভিন্ন ফ্যাশন ব্র্যান্ডের মডেলিং করছেন। রানওয়েতেও তিনি পরিচিত মুখ। বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবেও তাঁকে দেখা গেছে। টাঙ্গাইলের ছেলে রেহান উচ্চমাধ্যমিকের পর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওয়েব সিনেমা আরারাত-এর শেষ ভাগে চমক নিয়ে হাজির হয়েছিলেন রেহান। ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প ইফতার ডে ওয়ান-এ–ও তাঁকে দেখা গেছে।
সেরা ওয়েব সিরিজ
রঙিলা কিতাব
কিঙ্কর আহসানের একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে সিরিজটি বানিয়েছিলেন অনম বিশ্বাস। হইচইয়ে প্রচারিত সিরিজটি প্রদীপ আর তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সুপ্তীর পালিয়ে বেড়ানোর গল্প। তারা কি পালিয়ে বাঁচতে পারে শেষ পর্যন্ত? নাকি রাজনীতির মারপ্যাঁচে বরণ করতে হয় অন্য কোনো পরিণতি? বাস্তবধর্মী উপস্থাপন, চরিত্র নির্মাণ, সাসপেন্স আর অ্যাকশনের কারণে আলোচিত হয়েছিল সিরিজটি। প্রধান দুই চরিত্রে মোস্তাফিজুর নূর ইমরান ও পরীমনির অভিনয়ও প্রশংসিত হয়েছিল।
সেরা অভিনেতা (ওয়েব সিরিজ)
মোশাররফ করিম, আধুনিক বাংলা হোটেল
দেশি ভূতের গল্প নিয়ে অ্যান্থলজি সিরিজ আধুনিক বাংলা হোটেল বানিয়েছেন কাজী আসাদ। চরকিতে মুক্তি পাওয়া সিরিজটির তিন পর্ব ‘বোয়াল মাছের ঝোল’, ‘খাসির পায়া’ ও ‘হাঁসের সালুন’। সব কটিরই প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম। তিনটি ভিন্ন চরিত্রে তাঁর দুর্দান্ত অভিনয় এই সিরিজের প্রধান রসদ। অনেক সাদামাটা দৃশ্য বা সংলাপও কেবল মোশারফরের অভিনয় আর অভিব্যক্তির গুণে পেয়েছে ভিন্নমাত্রা। সিরিজটি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার চরিত্রগুলোয় দেখা-অদেখার মিশ্রণ রয়েছে। চরিত্রগুলোর কিছু বৈশিষ্ট্য আমাদের আশপাশের মানুষের মধ্যে পাওয়া যায়। আবার কিছু বৈশিষ্ট্য অদেখা। কিছু বিষয় আছে, বাইরে থেকে বোঝা যায়। কিন্তু তার মনের মধ্যে যা চলছে, সেটি বোঝার উপায় থাকে না, মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব থাকে। অভিনয়ে এগুলো আনতে হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে আমি আমার নিজের অনুভূতি-চিন্তা কাজে লাগিয়েছি। আর কিছু অবজারভেশন তো থাকেই।’
সেরা চিত্রনাট্যকার (ওয়েব সিরিজ)
সালজার রহমান, কালপুরুষ
থ্রিলার ও সায়েন্স ফিকশন মিস্ট্রি ঘরানার ওয়েব সিরিজ কালপুরুষ পরিচালনাও করেছেন সালজার রহমান। আঁকাআঁকি ও অ্যানিমেশন নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি প্রকাশ পেয়েছে তাঁর লেখা কমিক বইও। করোনা মহামারিতে মাথায় আসে কালপুরুষ–এর আইডিয়া। সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা থেকেই এটি লেখেন তিনি। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ফিল্ম সিন্ডিকেটকে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই লুফে নেয় তারা। সালজার বলেন, ‘ফিল্ম সিন্ডিকেটের সঙ্গে এক বসাতেই সব চূড়ান্ত হয়ে যায়। তবে এর দৈর্ঘ্য বেশ বড় হওয়াতে সিনেমা না বানিয়ে ওয়েব সিরিজ বানানোর প্রস্তাব দেন। এভাবেই তৈরি হয় কালপুরুষ। সবার অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। এখন আরেকটি সিনেমার চিত্রনাট্যের কাজ চলছে।’ সাত পর্বের কালপুরুষ খুন আর রহস্যে ঠাসা। প্রধান তিন চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, এফ এস নাঈম, তানজিকা আমিন।
সেরা অভিনেত্রী (ওয়েব সিরিজ)
জিন্নাত আরা, সিনপাট
২০২২ সালে একেবারেই আনকোরা অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে শাটিকাপ বানিয়ে চমকে দিয়েছিলেন মোহাম্মদ তাওকীর ইসলাম। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর নির্মাণ করেন সিনপাট। সিরিজটিতে অভিনয়ের জন্য মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের সেরা অভিনেত্রী স্বীকৃতি পেয়েছেন জিন্নাত আরা। সিরিজটিতে তিনি নেশাদ্রব্য বিক্রেতা ‘দুরু’ চরিত্রে অভিনয় করেন। পরীমনি ও মেহজাবীন চৌধুরীর সঙ্গে মনোনয়ন তালিকায় থেকে এ পুরস্কার জয় তাঁর কাছে স্বপ্নের মতো। তিনি বলেন, ‘দুজন অভিজ্ঞ মানুষ থাকতেও পুরস্কার পাব, সে আশা নিয়ে এখানে আসিনি। তাই যখন আমার নাম ঘোষণা করা হলো, তখন কিছুটা আশ্বর্যও হয়েছি। তাওকীর ভাইকে অনেক ধন্যবাদ, শাটিকাপ–এর ছোট্ট চরিত্র দুরুর ওপর বিশ্বাস রেখে সিনপাটে তিনি এ সুযোগ না দিলে হয়তো এখানে আসতে পারতাম না।’