অভিষেকের অপেক্ষায় ঐশী

>২০১৮ সালে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের মুকুট জেতার পর ছোট পর্দায় অভিনয়ের অনেক প্রস্তাব পান জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। কিন্তু নিজের স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে সেই সব প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন তিনি। অপেক্ষা করতে থাকেন উপযুক্ত গল্প, কাঙ্ক্ষিত চিত্রনাট্য আর মনের মতো একটা সিনেমার জন্য। ২০১৯ সালে এসে সেই সুযোগটা পেয়ে যান। একটা–দুটো নয়, পরপর তিনটি ছবিতে অভিনয় করছেন তিনি। ২০২০ সালে এই ছবিগুলো মুক্তি পাবে, পর্দায় অভিষেক হবে নায়িকা ঐশীর। 
জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী
জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী

সিনেমাই লক্ষ্য
প্রথম ছবি মিশন এক্সট্রিম-এর কাজ শেষ। এখন ঐশী কাজ করছেন আদম ও রাতজাগা ফুল নামের দুটি সিনেমায়। এই তিন সিনেমা ঐশীর দুই বছরের অপেক্ষার ফসল। মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের মুকুট মাথায় ওঠার পর থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন, তিনি সিনেমাতেই অভিনয় করবেন। আর শুরুটা এমন একটা সিনেমা দিয়ে করতে চেয়েছিলেন, যা তাঁকে সামনে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে। ঐশী বললেন, ‘প্রস্তাব তো অনেক এসেছিল। রাজি হইনি। আরও ভালো কিছুর অপেক্ষা করছিলাম। এভাবে অনেকগুলো মাস পেরিয়ে যায়। একদিন এক বিজ্ঞাপনচিত্রের শুটিং চলছিল। ওই সময় মিশন এক্সট্রিম ছবির সহকারী পরিচালকের ফোন আসে। এটা গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের কথা।’ এরপর ঐশী ধাপে ধাপে জড়িয়ে যান মিশন এক্সট্রিম ছবির সঙ্গে। নাম লেখান নায়িকা হিসেবে। ২০২০ সালে এই নায়িকা আসবেন সবার সামনে।

মিশন এক্সট্রিম শেষ করতে না করতেই আদম ও রাতজাগা ফুল নামে দুটি ছবির শুটিং শুরু করেছেন ঐশী। দুটি ছবিই মূলধারার বাইরের ভিন্ন ঘরানার। ঐশী বলেন, ‘গল্প পছন্দ হওয়ার কারণে কোনো বিরতি না নিয়েই দুটি ছবির কাজ শুরু করে দিলাম। এই কাজগুলোয় অভিনয় নিয়ে নিরীক্ষা করার যথেষ্ট সুযোগ আছে।’

তিন ছবি তিন চরিত্র
সিনেমায় কাজের শুরুতেই একটা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে ঐশীকে। তিনটি ছবিতে তিন ধরনের চরিত্রে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। মিশন এক্সট্রিম ছবিতে মারদাঙ্গা চরিত্র, আদম ছবিতে অজপাড়াগাঁর আশির দশকের এক সুবিধাবঞ্চিত মেয়ে, আর রাতজাগা ফুল ছবিতে এক চঞ্চলার চরিত্রে। ছবিগুলোতে কাজ করতে গিয়ে পরপর চরিত্র ভাঙতে হয়েছে, গড়তে হয়েছে। তবে প্রতিটির জন্য এই নবাগতা দিয়েছেন সমান শ্রম, নিয়েছেন সমান প্রস্তুতি। 

ওয়েব সিরিজে আগ্রহ
সিনেমার বাইরে ঐশী কাজ করেছেন কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রে। এর বাইরে নাটক বা টেলিছবিতে অভিনয়ের আগ্রহ নেই ঐশীর। তবে ওয়েব সিরিজের প্রতি একটা আকর্ষণ আছে তাঁর। তিনি জানান, ভালো গল্প, ভালো পরিচালকের সঙ্গে ওয়েব সিরিজ করার ইচ্ছা তাঁর। এর মধ্যে দেশের বাইরে থেকে জনপ্রিয় এক তারকার বিপরীতে একটি ওয়েব প্রযোজনার কাজের প্রস্তাব এসেছে। কাজটি করার ইচ্ছাও আছে তাঁর। ঐশী বলেন, ‘এখন তো দেশের, বলিউড, টালিউডের তারকারা ওয়েব সিরিজ করছেন। ভালো গল্প, ভালো পরিচালকের সঙ্গে আমিও ওয়েবের জন্য কাজ করতে চাই। দেশের বাইরে থেকে ওয়েব সিরিজের একটি কাজ এসেছিল। কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়েছে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা শিগগিরই আসবে।’ 

জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী
জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী

ঐশীর হাত ধরে বাংলাদেশকে চেনা
চীনে ১১৮টি দেশের সুন্দরীরা মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেন। সেখানে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ঐশীও অংশ নিয়েছেন। ওই মঞ্চে অনেক দেশের প্রতিযোগীই বাংলাদেশকে চিনতেন না, জানতেন না। ঐশীকে দিয়েই বাংলাদেশকে চিনতে শুরু করেন তাঁরা। ঐশী বলেন, ‘শুরুর দিকে একটু সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু আমি সবার কাছেই দেশকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যখন তাঁদের বলেছি, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন, সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত বাংলাদেশে। শুনে অনেকই অবাক হয়েছেন।’

আগের ঐশী–পরের ঐশী
মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ হওয়ার আগে ঐশীর কাজ ছিল পড়াশোনা আর ঘোরাঘুরি। কোনো দায়িত্ব ছিল না। পরিবার, স্বজন, বন্ধুবান্ধবের বাইরে আলাদা জগৎ ছিল না। কিন্তু মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের মুকুট জেতার পর পাল্টে যায় তাঁর জীবন। পরিবারের গণ্ডি পেরিয়ে এখন ঐশী বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের একজন প্রতিনিধি। জীবনে এখন যেমন খ্যাতি আছে, তেমনই আছে সীমাবদ্ধতা। ঐশী জানান এ জীবনটা আনন্দের, উপভোগ্যও। তবে মাঝেমধ্যে লজ্জায়ও পড়েন তিনি। ঐশী বলেন, ‘আগের ঐশীকে তো সবাই চিনত না। এখন সবাই চেনে। একটা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হয়। অনেকেই যখন আমার সঙ্গে ছবি তুলতে চায়, আনন্দ লাগে। তবে মাঝেমধ্যে যখন বেশি করে কাজের প্রশংসা করেন, তখন লজ্জা লাগে।’

আগেকার ঐশীর কোন জিনিসটি আপনি মিস করেন? জবাবে ঐশী বলেন, ‘কোথাও ঘুরতে গিয়ে রাস্তার ধারে বসে ফুচকা খাওয়া, আড্ডা দেওয়াটা বেশি মিস করি। আগে রাস্তাঘাটে ইচ্ছেমতো চলতে–ফিরতে পারতাম। এখন চাইলেও তা সম্ভব হয় না।’ 

নিয়ম-অনিয়মের মধ্যে ঐশী
মানুষই সাধারণত নিয়মের মধ্য থেকে জীবন যাপন করতে চায়। চলচ্চিত্রের নায়িকা হলে তো কথাই নেই। নায়িকাদের হতে হয় নিখুঁত আর পরিপাটি। এ জন্য অবশ্যই জীবনটা নিয়মের ফ্রেমে বাঁধতে হয়। সে ক্ষেত্রেও কি এমনটা হতে শুরু করেছে? হাসতে হাসতে এ প্রশ্নের জবাব দিলেন ঐশী, বললেন, ‘ঘুমানো, ঘুম থেকে ওঠা নিয়মের মধ্যে আছে। তবে খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম মানতে পারি না। এমনকি নিয়মিত জিমেও যাওয়া হয় না। এ জন্য বাড়ির মানুষের কাছে প্রায়ই বকা খেতে হয়।’