আবৃত্তি উৎসবে চার হাজারের বেশি আবৃত্তিকর্মী অংশ নেবেন

সংবাদ সম্মেলনে উৎসবের বিস্তারিত তুলে ধরেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আহ্কাম উল্লাহ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ২৭-৩১ জানুয়ারি পাঁচ দিনব্যাপী ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় আবৃত্তি উৎসব’–এর আয়োজন করতে যাচ্ছে আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ। উৎসবের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই উৎসবে প্রদান করা হবে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় আবৃত্তি পদক’। এ ছাড়া অর্ধশতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা হবে ‘বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি স্মারক’। ‘জন্মের সুবর্ণে জাগো সম্প্রীতির স্বরে, মুক্তির ডাক দেয় পিতা আজও ঘরে ঘরে’ স্লোগানে আয়োজিত এই উৎসবে অংশ নিতে যাচ্ছেন দেশের ৬৪ জেলার ৪ হাজারের বেশি আবৃত্তিশিল্পী।
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে উৎসবের বিস্তারিত তুলে ধরেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আহ্কাম উল্লাহ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ প্রবর্তিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদক’ প্রদান করা হবে উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে।

২০২০ সালের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদক’ পাচ্ছেন গোলাম মুস্তাফা (মরণোত্তর)। ২০২১ সালে আশরাফুল আলম ও সৈয়দ হাসান ইমাম এবং ২০২২ সালের জন্য ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় ও কাজী মদিনা পদক পাচ্ছেন। জাতীয় পদক প্রবর্তনের অনুমোদন পাওয়ার পর সেই পদক জাতির জনকের নামে প্রদানের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট্রেরও অনুমোদন পেয়েছে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ। ২০২০ সাল থেকে মুজিব বর্ষ শুরু হওয়ায় ওই বছর থেকেই এই পদক প্রদান করার ঘোষণা দেয় আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ। করোনা পরিস্থিতির কারণে তিন বছরের পদক এই উৎসবে প্রথমবার দেওয়া হবে।

আহ্কাম উল্লাহ জানান, উৎসবে নতুন সংযোজন হলো—আবৃত্তিতে তিন যুগ ধরে যেসব প্রতিষ্ঠান নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি স্মারক প্রদান করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি স্মারকপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।

এ ছাড়া ব্যক্তি ও সাংগঠনিক পর্যায়ে যাঁরা আবৃত্তির ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন, তাঁদেরও বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি স্মারক প্রদান করা হবে।

বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি স্মারকপ্রাপ্ত গুণীজনেরা হলেন নাজিম মাহমুদ (মরণোত্তর), অধ্যাপক নরেণ বিশ্বাস (মরণোত্তর), ওয়াহিদুল হক (মরণোত্তর), রণজিৎ রক্ষিত (মরণোত্তর), হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য (মরণোত্তর), কাজী আরিফ (মরণোত্তর), রামেন্দু মজুমদার, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, লিয়াকত আলী লাকী, ম. হামিদ, হারুন অর রশীদ, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কেয়া চৌধুরী, ডালিয়া আহমেদ, মীর বরকত, শিমুল মুস্তাফা, নিখিল সেন (মরণোত্তর), নিরঞ্জন অধিকারী, কামরুল হাসান মঞ্জু (মরণোত্তর), কাজী আবু জাফর সিদ্দিকী (মরণোত্তর), মৃণাল সরকার (মরণোত্তর), গোলাম কুদ্দুছ, আতাউর রহমান, ফয়জুল আলম পাপপু, সুবর্ণা মুস্তাফা, বিপ্লব বালা, ইস্তেকবাল হোসেন, লায়লা আফরোজ, হাসান আরিফ, বেলায়েত হোসেন, কামাল লোহানী (মরণোত্তর), মোহাম্মদ কামাল, রূপা চক্রবর্তী, আসাদুজ্জামান নূর, মো. আহ্‌কাম উল্লাহ, রেজীনা ওয়ালী লীনা, সাগর লোহানী, ড. আবদুল মালেক, তারিক সালাহউদ্দিন মাহমুদ (মরণোত্তর), কাজী মাহতাব সুমন, মাসুদুজ্জামান, এনামুল হক বাবু, নিমা রহমান, মাহিদুল ইসলাম, প্রজ্ঞা লাবনী, ইকবাল খোরশেদ, খালেদ খান (মরণোত্তর), মুহাম্মদ সামাদ, রাশেদ হাসান, খান জিয়াউল হক (মরণোত্তর), গোলাম সারোয়ার, মীর মাসরুর জামান রনি, রফিকুল ইসলাম, আজহারুল হক আজাদ, এস এম মোহসিন (মরণোত্তর) ও ইশরাত নিশাত (মরণোত্তর)।
২৭ জানুয়ারি উৎসবের উদ্বোধনী আয়োজনটি হবে ঢাকার জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে। গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে উৎসবের উদ্বোধন ও পদক প্রদান করবেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় সারা দেশে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে স্থানীয় বিভিন্ন আবৃত্তি সংগঠনের সদস্যরা ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন উদ্বোধনী পর্বে। জাতীয় নাট্যশালায় সশরীর উপস্থিত থাকবেন ঢাকা মহানগরীর আবৃত্তি সংগঠনের সদস্যরা। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচদিনব্যাপী ৬৪ জেলায় একই সঙ্গে স্থানীয় সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণে উৎসবের অনুষ্ঠানমালা পরিচালিত হবে।

উদ্বোধনী পর্বে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘শত আবৃত্তিতে বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হবে। পাঁচ দিনব্যাপী উৎসবে প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা থেকে জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনসহ বিভিন্ন জেলায় দলীয় ও একক আবৃত্তি পরিবেশিত হবে। এ জন্য ইতিমধ্যে সারা দেশের ২৯৭টি সংগঠন নিবন্ধন করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সোহরাব হোসেন তালুকদার, যুগ্ম সম্পাদক আজহারুল হক, মীর মাসরুর জামান, মাসুদুজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আহসানউল্লাহ, অনুষ্ঠান সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, প্রকাশনা সম্পাদক জি এম মোরশেদ, অর্থ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক শিরিন ইসলাম, নির্বাহী সদস্য প্রশান্ত অধিকারী প্রমুখ।