>আড্ডাটা মূলত তিন ভাইবোনের। ১৫ জুন সন্ধ্যায় সন্ধির স্টুডিওতে বসে আমরা শুধু দু-একটা কথা জুড়ে দিই। কেমন করে একজন চিরকুমারের সঙ্গে হলো স্বাগতার প্রেম? কৈশোরে সন্ধি কীভাবে বড় বোনের পাওয়া উপহার চুরি করে তাঁর বান্ধবীকে দিয়ে দিতেন? সভ্যতাকে কেনই-বা বড় দুই ভাইবোন ‘আঁতেল’ বলে ডাকেন? ভাইবোনদের খুনসুটির ফাঁকে জানা হলো মজার সব তথ্য। সঙ্গে অভিনয়, গান, অ্যালবাম...শব্দগুলোও ঘুরেফিরে এল বারবার। আড্ডাটা যে সন্ধি, স্বাগতা আর সভ্যতার! সঙ্গে ছিলেন মো. সাইফুল্লাহ

স্বাগতার সংসার
সন্ধির স্টুডিওতে পা রেখেই স্বাগতা কিছুটা অতিথিসুলভ আপ্যায়ন আদায়ের চেষ্টা করছিলেন! ‘সন্ধি, তোমার স্টুডিওতে এলাম, কিছু খাওয়াও।’ বড় বোনের আবদার সন্ধি খুব একটা গ্রাহ্য করলেন না। স্বাগতা বলেন, ‘আমি আর রাশেদ বাসা খুঁজছি। শিগগিরই নতুন বাসায় উঠব।’ যেন সন্ধি-সভ্যতাকে মনে করিয়ে দিতে চাইলেন, ‘ছোটবেলা থেকে দুজন অনেক জ্বালাতন করেছ। কদিন পর চলেই তো যাচ্ছি, এখন একটু খাতির-যত্ন করলেও তো পারো!’ ছোট দুজনের কাছে তাতেও খুব একটা পাত্তা পাওয়া গেল না। দুজন একসঙ্গে বললেন, ‘আগে দিদি যাক, তারপর দেখা যাবে।’ সন্ধি-সভ্যতার ঝগড়ায় যে বড় বোন রেফারির ভূমিকা পালন করতেন, এত সহজে তিনি তাঁদের ফেলে নতুন সংসারে চলে যাবেন, এটা এখনো দুজনের বিশ্বাস হচ্ছে না।
গত ৪ মে চিত্রগ্রাহক রাশেদ জামানের সঙ্গে স্বাগতার বাগদান হয়েছে। কেমন করে দুজন জুটি বাঁধলেন? স্বাগতা বলেন, ‘এমন নয় যে কাজের সুবাদে রাশেদের সঙ্গে সম্পর্ক। তার সঙ্গে আমি মাত্র দুইটা নাটকে কাজ করেছি। দেখা হতো, কথা হতো। এভাবেই ভালো লেগে গেল। তার পরিকল্পনা ছিল, চিরকুমার থাকবে। যেহেতু বিয়ে করবে না, তাই প্রেমও করবে না। প্রেম সেভাবে হয়ওনি, সরাসরি বাগদান হয়ে গেছে!’ নতুন সংসার তো আছেই, ঈদের কাজ নিয়েও ব্যস্ত এই অভিনেত্রী। জানালেন, কয়েকটা নাটক আর রান্নার অনুষ্ঠানে দেখা যাবে তাঁকে।
সন্ধির সঙ্গী
‘সন্ধির ধারণা ছিল, সুন্দরী বড় বোন দেখলে মেয়েরা পটে যাবে। সে জন্য কলেজে কোনো মেয়েকে পছন্দ হলে আমাকে দেখা করতে নিয়ে যেত।’ স্বাগতার বক্তব্যে সন্ধির তুমুল আপত্তি, ‘মোটেই না! তুমি জীবনে মাত্র দুইবার আমার সঙ্গে কলেজে গেছ।’
‘দুইবারই তোমার পছন্দের মেয়ে দেখতে গেছি সন্ধি! প্রথমটা তোমাকে পাত্তা দেয়নি, দ্বিতীয়টা তো...’
স্বাগতার না-বলা অংশটুকু ততক্ষণে আমাদের জানা হয়ে গেছে। কলেজের বন্ধু ঊর্মির সঙ্গে সন্ধির ১০ বছরের প্রেম, অবশেষে গত ২ এপ্রিল বিয়ে করেছেন দুজন। ‘বিবাহিত’ ছোট ভাইয়ের কৈশোরের কাণ্ড ফাঁস করে দেন স্বাগতা, ‘আমাকে কেউ কিছু গিফট দিলে সন্ধি সেগুলো চুরি করে তাঁর বান্ধবীকে দিয়ে দেত।’ আরও কতশত ঘটনা মনে করে তিন ভাইবোন হেসে গড়াগড়ি খান।
সন্ধি জানালেন, রোজার ঈদে এই প্রথম আসছে তাঁর অভিনীত নাটক। আর কোরবানির ঈদে আসবে নতুন অ্যালবাম। বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল করছেন নিয়মিতই। এ ছাড়া দু-একটা একক গানও অনলাইনে মুক্তি পাবে শিগগিরই। সন্ধিকে নিয়ে স্বাগতার প্রত্যাশা, ‘আমি চাই, ও কাজের ক্ষেত্রে সফল হোক। আর খুব ভালো একজন বাবা হোক।’ সভ্যতা পাশ থেকে টিপ্পনী কাটেন, ‘ভালো বাবা হবে কী, ও তো সারা দিন ঘুমাবে!’
সভ্যতার সহজ কথা
এক নির্ঝরের গান অ্যালবামে আছে সভ্যতার গাওয়া সাতটি গান। সামনে আরও কিছু নতুন গান-মিউজিক ভিডিও মুক্তি পাবে অনলাইনে। একক অ্যালবাম করার ব্যাপারে তাঁর আগ্রহ নেই। খ্যাতি তাঁকে টানে না। কেন? রচনামূলক প্রশ্নে সভ্যতার নৈর্ব্যক্তিক উত্তর, ‘ভাল্লাগে না!’ নিজের ইউটিউব চ্যানেলে মাঝেমধ্যে গান আপলোড করছেন, টিভি-রেডিওর অনুষ্ঠান, কনসার্ট—এসব নিয়েই তিনি সন্তুষ্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগে স্নাতকোত্তর করছেন, পাশাপাশি বাসায় বাচ্চাদের গানের ক্লাস নেন, সব মিলিয়ে তিন ভাইবোনের মধ্যে সভ্যতাই সবচেয়ে ব্যস্ত।
ছোট বোনকে নিয়ে সন্ধি বলেন, ‘ও হচ্ছে আঁতেল।’ স্বাগতার মতামত, ‘সে অফট্র্যাক গায়িকা। তাঁর চুল থাকবে উষ্কখুষ্ক, জামাকাপড় থাকবে নোংরা...!’ আবারও শুরু হয়ে যায় তিন ভাইবোনে খোঁচাখুঁচি!
স্বাগতার ‘নির্মাণাধীন’ সংসারের গল্প শুনলাম, সন্ধির প্রেমের গল্পও শোনা হলো, সভ্যতার গল্প কবে শুনব? ভালোবাসা দিবসের নাটক প্রতীক্ষায় সন্ধি-সভ্যতার গাওয়া ‘একটা গল্প বলি শোনো’ দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে! সেই গানে সভ্যতা গেয়েছেন, ‘...একটা শহরে ছিল এলোমেলো চুলের মেয়ে আর একটা অগোছালো ছেলে...’। এলোমেলো চুলের মেয়েটার কাছেই জানতে চাই, অগোছালো ছেলের খোঁজ কি পাওয়া গেল? সভ্যতা বলেন, ‘আমি তো এখনো ছোট। আগে ওদের (সন্ধি-স্বাগতা) মতো বড় হয়ে নিই। তারপর দেখা যাবে!’