
তাসকিন
মিনারের সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার অনেক আগে থেকেই আমি তাঁর গানের ভক্ত। ওর গাওয়া ‘সাদা’ গানটা আমার দারুণ প্রিয়। ইদানীং সে যেসব গান প্রকাশ করছে সেগুলোও শুনি। গান বানানোর পরই সে আমাকে দিয়ে দেয়। আমি গাড়িতে এই গান শুনে মতামত দিই। মিনারও আমার মতামতকে খুব গুরুত্ব দেয়।
২০১৩ সালের শুরুতে আমাদের প্রথম দেখা ও পরিচয়। আমরা দুজনেই ঢাকার বনানীতে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। দুজনের ডিপার্টমেন্ট আলাদা হলেও একটা কোর্সে আমরা একসঙ্গে ক্লাস করতাম। আমাদের নিয়মিত দেখা হতো। ক্লাস শেষে আমরা নিয়মিত আড্ডা দিতাম। আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব গাঢ় হতে থাকে। মিনারের প্রথম অ্যালবামটির সিডি আমি দোকান থেকে কিনেছিলাম। সেই অ্যালবামে বন্ধু নিয়ে একটা গান ছিল। গানটিতে ক্রিকেট নিয়ে কথা ছিল। তখনো আমি জাতীয় দলে খেলিনি। বিপিএল খেলেছি। বিপিএলে আমি ছিলাম চিটাগাং কিংসের খেলোয়াড়। মিনার চট্টগ্রামের ছেলে, তাই আমার প্রতি হয়তো ওর টানটা একটু বেশি ছিল।
মিনারের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে তার সততা। এটা বরাবরই আমাকে মুগ্ধ করেছে। সে খুবই স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড। যাকে ভালো লাগে না তার সঙ্গে ও মেশে না। উচিত কথা মুখের ওপর বলে দেয়। ওর চরিত্রটাই অন্য রকম। এটাই আমার বেশি ভালো লাগে। মিনারের একটা দারুণ ব্যাপার আছে। দেখবেন কোথাও বসে ও মাথা চুলকায়, যেন ধ্যান করছে। চুল টানতে থাকে। ক্লাসেও এটাই করত। এ জন্যই হয়তো ওর মাথার সব চুল পড়ে যাচ্ছে! (হাসি)। এ নিয়ে আমি ওরে খুব খেপাতাম।
তাসকিন: ক্রিকেটার
মিনার
ক্লাস শেষে আমরা আড্ডাবাজিটা খুব উপভোগ করতাম। শুধু বাইরে নয়, তাসকিনের বাসায়ও আড্ডা জমত। তাসকিনের সঙ্গে এত দ্রুত বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার পেছনে কাজ করেছে ওর সুন্দর মনটা। সে খুবই ভালো মনের একজন মানুষ। সমাজের অসহায় মানুষের জন্য তার খুব টান। এটা অনেকেই এখন জানেন। চিটাগাং কিংসের খেলা দেখার পরই আমার মনে হয়েছিল, সে একদিন বাংলাদেশের আইকন হবে।
অনেকেই হয়তো জানেন না, তাসকিন প্রতিনিয়ত জোকস বলতে পারে। ওকে দেখেও অবশ্য তা বোঝার উপায়ও নেই। ওর মধ্যে প্রচুর রসবোধ আছে। খুবই রসিক। বন্ধুমহলে থাকলে সে পুরো জায়গাটা মাতিয়ে রাখতে পারে। ক্রিকেট খুব ভালো খেললেও তাসকিন কিন্তু গানও গাইতে পারে। এই খবরটাও অনেকে জানেন না। তাসকিনকে তার মা গান শিখিয়েছেন। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত আন্টি এই কাজ করে গেছেন। এরপর তো সে খেলায় মনোযোগী হয়ে গেছে। তারপর আর গান নিয়ে বেশি দূর এগোয়নি।
আমরা দুজন একসঙ্গে হলে অনেক মজা করি। এই তো মাস তিনেক আগে এক রাতে রাস্তায় বের হয়েছি। একটা ছেলে ভ্যানগাড়ি নিয়ে আমাদের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। তখন ভ্যানওয়ালা ভাইটিকে অনুরোধ করতেই সে আমাদের ভ্যানটা দিয়ে দিল। তারপর আমরা সবাই মিলে সেই ভ্যান নিয়ে ঢাকা শহরের অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি। আমাদের বন্ধুদের আরও অনেক গল্প আছে।
মিনার: সংগীতশিল্পী

সাব্বির রহমান
আগে থেকেই মিশু সাব্বিরের নাটক দেখা হতো। খুব ভালো লাগত তাঁর অভিনয়, এখনো লাগে। বছর দেড়েক আগে তাঁর সঙ্গে প্রথম পরিচয়। সেলিব্রেটি ক্রিকেট খেলতে গিয়ে। আমরা দুজন একই দলে খেলেছিলাম। ওই থেকেই দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব। বয়সে মিশু সাব্বির আমার বড়। তাই সম্পর্কটা বড় ভাই-বন্ধুর মতো।
মিশু সাব্বির খোলামনের মানুষ। সব সময়ই আড্ডায় জমিয়ে রাখেন। মন খারাপ থাকলে তাঁর কাছে গেলে মন ভালো হয়ে যায়। যতক্ষণই তাঁর সঙ্গে থাকি, ততক্ষণ প্রাণখুলে হাসতে পারি।
কোনো ম্যাচ না থাকলেও দিনের বেশির ভাগ সময়ই অনুশীলনের জন্য মাঠে থাকতে হয়। তাই সময় কম পাই। দুজনের বাসাই মিরপুরে। সময় পেলে হুট করেই তাঁর বাড়িতে চলে যাই। তাঁর মা, স্ত্রী—সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক আমার। তাঁরা খুব ভালোবাসেন আমাকে। তাঁদের বাসায় গেলে না খেয়ে আসতেই দেন না।
এখন মিশু সাব্বির মিরপুরে ‘ড্রিউড্রপ’ নামে একটি রেস্তোরাঁ দিয়েছেন। ওখানে গেলে ভালো আড্ডা জমে। আড্ডার মধ্যে কখনো কখনো মিশু সাব্বির নিজ হাতেই জুস বানিয়ে খাওয়ান। মাঝে মাঝে তাঁর শুটিং লোকেশনেও চলে যাই। বসে বসে তাঁর শুটিং দেখি। শুটিং শেষে দুজন গল্প করতে করতে বাসায় ফিরি।
সাব্বির রহমান: ক্রিকেটার
মিশু সাব্বির
আমি সাব্বিরের খেলার ভক্ত। আমার অভিনয় দেখেই নাকি ও আমাকে পছন্দ করত। সেলিব্রেটি ক্রিকেট খেলতে গিয়ে একে অপরের কাছে আসার সুযোগ হয়।
আস্তে আস্তে বন্ধুর সম্পর্ক তৈরি হয়। ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।
দেশের বাইরে খেলতে গেলেও মাঝে মাঝেই মুঠোফোনে সাব্বিরের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে। দুজনের বাসা মিরপুর হওয়ার কারণেই দেখা-সাক্ষাৎটা বেশি হয়। আমাদের সম্পর্কটা দেড় বছরের হলেও মনে হয় যেন বহুদিনের। আমার পরিবারের সঙ্গেও ওর একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে।
হঠাৎ হঠাৎ ফোন দিয়ে বাড়িতে চলে আসে। বাসায় আড্ডা হয়। ও এলে আমি ভালো খাবারদাবারের আয়োজন করি। পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে বসে আমরা খাওয়া-দাওয়া করি। আমার রেস্তোরাঁয়ও প্রায় আড্ডা হয়। দুজনের কোনো কাজ না থাকলে দীর্ঘক্ষণ চলে এই আড্ডা। মাঝে মাঝে ওর মধ্যে অভিমানও দেখি। সেই অভিমানটা আমার ওপরও করে। ভালো সম্পর্ক থাকার কারণেই হয়তো অধিকার নিয়ে এই অভিমানটা করে।
সাব্বির তাঁর পেশার ক্ষেত্রে সিরিয়াস। স্বপ্নবান একটা মানুষ। আর ওর এই দিকটা আমার খুব ভালো লাগে। ক্রিকেট নিয়ে তাঁর এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নটা বেশি।
মিশু সাব্বির: অভিনেতা
আরাফাত সানি

ওর সঙ্গে আমার পরিচয় দেড়-দুই বছর আগে। কী একটা অনুষ্ঠানে গিয়ে পরিচয় হয়েছিল, এখন আর মনে নেই। তবে তার আগে খেলা দেখতে মাঠে আসত মৌসুমী। তখনই হাই-হ্যালো হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে গিয়ে পুরোপুরি পরিচয় হয়েছে। এরপর আমাদের সম্পর্ক ‘তুই-তুমি’তে চলে এসেছে। বন্ধু হিসেবে বলছি না, ও খুব ভালো মনের মানুষও।
একটা ঘটনার কথা বলি, বিশ্বকাপে যখন আমার দুর্ঘটনা ঘটল, তখন দেশ থেকে ফোন করে বারবার খোঁজ নিচ্ছিল মৌসুমী। আমাকে আনন্দ দেওয়ার জন্য বলছিল, ‘বন্ধু, টেনশন কইরো না। এটা হইতেই পারে। মন খারাপ কইরো না। দেশে আসো, আমরা অনেক মজা করব। আনন্দ করব।’ ওই সময়ে ওর বলা কথাগুলো আমাকে বেশ সাহস জুগিয়েছে। আর ফিরে আসার কয়েক দিন পরই মৌসুমীসহ সব বন্ধু মিলে বেশ আড্ডা মেরেছিলাম।
গত এশিয়া কাপে একটা মজার ঘটনা ঘটল। পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের ম্যাচ। তো ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে আগে দুপুরের দিকে মৌসুমী ফোন করে আমাকে বলল, ‘দোস্ত। আজকে তুমি দুইটা উইকেট পাবা।’ মজার ব্যাপার হলো, আমি ওই ম্যাচে ঠিকই দুই উইকেট পেয়েছিলাম। এটা নিয়ে ওই সময় আমরা সবাই খুব হাসাহাসি করেছি। ওর কথা কীভাবে মিলে গেল! এরই নামই সম্ভবত বন্ধুত্ব।
মাঝেমধ্যেই ও দুষ্টুমি করে বলে, ‘দোস্ত, বিয়ে করব, ছেলে দেখো।’ তখন আমি উত্তর দিই, তালগাছের মতো যে লম্বা তুমি, এ রকম ছেলে পাওয়া কঠিন। পারলে করাত দিয়ে পা দুটো একটু কাটো। তারপর ছেলে খুঁজে দিতে পারি। এখন মনে হচ্ছে ওর জন্য ছেলে খোঁজা জরুরি।
আরাফাত সানি: ক্রিকেটার
মৌসুমী হামিদ

সানি যেহেতু ক্রিকেটার, তাই খেলা দেখতে গিয়েই ওকে দেখা। মাঠে দেখতাম ও খুব পরিশ্রম করছে। এটা খুব ভালো লাগত। অবশ্য আমাদের সব খেলোয়াড়ই অনেক পরিশ্রম করেন। যা-ই হোক, আরাফাত সানির একটা গোপন নাম আছে। যেটা ধরে ডাক দিলে ও খেপে যায়। আমি আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে ওই নামটা জেনেছি। আগে তো হাই-হ্যালো হতো। তখনো ওই বিশেষ নামটা জানি না। তো একটা অনুষ্ঠানে সানিকে ওই ‘বিশেষ’ নাম ধরে ডাক দিয়েছি। তখনই ও চমকে উঠেছে। আমি ওই নাম কীভাবে জানলাম, এসব নানা প্রশ্ন। তখন কথা বলতে বলতেই বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। সানির যে গুণটা আমাকে মুগ্ধ করে তা হলো, ও খুব পরোপকারী। মানুষ হিসেবে অসাধারণ। আর প্রচুর ‘ফান লাভিং’। যেমনটা আমি পছন্দ করি। এ কারণেই ওর আর আমার মধ্যে বন্ধুত্বটা হয়েছে।
মৌসুমী হামিদ: অভিনেত্রী
অনুলিখন: মনজুর কাদের, হাবিবুল্লাহ সিদ্দিক ও শফিক আল মামুন