কথা ও নৃত্যে বুলবুল চৌধুরীর জন্মদিন উদ্‌যাপিত

শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এবং বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার সহযোগিতায় আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানছবি: সংগৃহীত

নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরী নৃত্যে স্বশিক্ষিত ছিলেন, তাঁর সৃজনশীলতা অত্যন্ত প্রগাঢ় ও তীক্ষ্ণ ছিল। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বুলবুল মনেপ্রাণে একজন সংস্কৃতিমান মানুষ ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, শিল্পের জন্য শিল্পী নয়—মানুষের জন্য শিল্পী। জীবনের জন্য শিল্প। তিনি অত্যন্ত সমাজসচেতন মানবহিতৈষী ব্যক্তি ছিলেন। এক অন্ধকারাচ্ছন্ন, ধর্মান্ধ ও কুসংস্কারযুক্ত সময়ে এই মহান শিল্পী জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এসব প্রতিকূলতাকে তাঁর অদম্য সাহস, ধীশক্তি, ধৈর্য ও সহনশীলতা দিয়ে অতিক্রম করতে সক্ষম হন। তাঁর নামানুসারে বুলবুল ললিতকলা একাডেমির নামকরণ করা হয়।

নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

আজ ১ জানুয়ারি নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরীর জন্মবার্ষিকী। তাঁর ১০২ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এবং বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার সহযোগিতায় আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আলোচনা শেষে শুরু হয় নৃত্য পরিবেশনা
ছবি: সংগৃহীত

শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দুটি পর্ব ছিল। প্রথম পর্বে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট নৃত্যব্যক্তিত্ব ও নৃত্য পরিচালক আমানুল হক, নিগার চৌধুরী, গোলাম মোস্তফা খান, দীপা খন্দকার, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি মিনু হক এবং সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান।

অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক সুশান্ত কুমার সরকার।

দলীয় নৃত্য পরিবেশন করছেন শিল্পীরা
ছবি: সংগৃহীত

আলোচনা শেষে শুরু হয় নৃত্য পরিবেশনা। শুরুতে আতিকুর রহমানের নৃত্য পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করে ভোরের পাখি নৃত্যকলা কেন্দ্রের শিল্পীরা। এম আর ওয়াসেকের নৃত্য পরিচালনায় ‘ও আমার দেশের মাটি’ গানের কথায় সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে নন্দন কলাকেন্দ্রের শিল্পীরা। অনিক বোসের নৃত্য পরিচালনায় ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানের কথায় সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দনের শিল্পীরা। তাবাসসুম আহমেদের নৃত্য পরিচালনায় ‘নাওয়ে নাইওর লইয়া যায়’ গানের কথায় সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে আঙ্গিকামের শিল্পীরা। সাজু আহমেদের নৃত্য পরিচালনায় কত্থক নৃত্য পরিবেশন করে কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়। সালমা বেগম মুন্নির নৃত্য পরিচালনায় ‘দে তালি বাঙালি’ গানের কথায় সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যাক্ষ। মুনমুন আহমেদের নৃত্য পরিচালনায় ‘আকাশ আমায় ভরলো আলোয়’ গানের কথায় সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে রেওয়াজ পারফরমিং আর্টস একাডেমি। ফাতেমা কাশেমের নৃত্য পরিচালনায় ‘আসমানেতে দেয়া ডাকে’ গানের কথায় সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে ঝঙ্কার ললিতকলা একাডেমি। লিখন রায়ের নৃত্য পরিচালনায় ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ গানের কথায় সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যকথা।

সোহেল রহমানের নৃত্য পরিচালনায় ‘রসিক আমার মন বান্ধিয়া’ গানের কথায় সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে শিখর কালচারাল অর্গানাইজেশন, জিনিয়া জ্যোৎস্নার নৃত্য পরিচালনায় ‘একটি গল্প শোনাবো আজ’ গানের কথায় সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে জিনিয়া নৃত্য ললিতকলা একাডেমি এবং ফারহানা চৌধুরী বেবীর নৃত্য পরিচালনায় ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ গানের কথায় সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস।
১৯১৯ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানায় জন্মগ্রহণ করা এ শিল্পী পাঁচ বছর বয়সে গৃহশিক্ষকের কাছে আরবি-ফারসি শেখার মধ্য দিয়ে শিক্ষাজীবনের শুরু হয়। ১৯৪৩ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ ডিগ্রি লাভ করেন। শৈশব থেকেই নাচ, গান, ছবি আঁকা এবং গল্প-কবিতা লেখার প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ জাগে। ১৯৩৪ সালে মানিকগঞ্জ হাইস্কুলে অনুষ্ঠিত এক চিত্র প্রদর্শনীতে তার আঁকা ছবি প্রথম পুরস্কার লাভ করে। তবে নৃত্যশিল্পী হিসেবেই তিনি অধিক খ্যাতি অর্জন করেন।
মানিকগঞ্জ হাইস্কুলের এক বিচিত্রানুষ্ঠানে স্বরচিত ‘চাতক-নৃত্য’ পরিবেশনের মাধ্যমে তাঁর নৃত্যশিল্পী–জীবনের সূত্রপাত। ছাত্রাবস্থায় প্রেসিডেন্সি কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে নৃত্যশিল্পী হিসেবে তিনি প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ১৯৩৬ সালে তিনি সাধনা বসুর সঙ্গে যৌথভাবে পরিবেশন করেন রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত নৃত্যনাট্য ‘কচ ও দেবযানী’। এটি ছিল তাঁর শিল্পীজীবনের মাইলফলক।