
‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই...’। কলকাতার সেই চিরচেনা কফি হাউসকে ঘিরে মান্না দের জনপ্রিয় গানের কথা এটি। সেই কফি হাউস আর আড্ডা এখন হয়তো শুধুই স্মৃতি। কলকাতার কফি হাউসের কথা না হয় আজ থাক। অন্য এক কফি হাউসের কথা বলি আজ।
এই কফি হাউসটির দেখা মিলবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে। চারদিকে বৈদ্যুতিক লাইট পোস্টে ঘেরা। সামনে সুবিশাল মাঠ। সঙ্গে আছে একটি মুক্তমঞ্চ। এককথায় আড্ডার জন্য বেশ চমৎকার জায়গা। মন চাইলে বইও পড়তে পারবেন এখানে বসে। একটি ছোট পাঠাগারও স্থাপন করা হয়েছে সেখানে। শিল্প-সংস্কৃতির নানা বিষয়ের ওপর লেখা বিভিন্ন বই রয়েছে সেই পাঠাগারে।
কফি হাউসটির পেছনে দেখবেন মস্ত বড় একটি বটবৃক্ষ। সন্ধ্যা নামলে সেই বৃক্ষতলের আলো-আঁধারি পরিবেশটা যেন মন কেড়ে নেয় সবার। আর শীতের সন্ধ্যায় পরিবেশটা পেয়ে যায় ভিন্ন মাত্রা। প্রতিদিন সন্ধ্যা গড়াতেই এখানে জমে আড্ডার আসর। তবে এই আসরে নেই নিখিলেশ, নেই মইদুল কিংবা রমা রায়। এখানে যাঁরা বসেন, তাঁরা দেশের বরেণ্য নাট্যজন। আগে
রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, আতাউর রহমানসহ আরও অনেকেরই দেখা মিলত এখানে। আর বিভিন্ন নাট্যদলের নাট্যকর্মী ও সংস্কৃতিকর্মীদের বিচরণ তো আছেই। সংগীত, নাটক আর চিত্রকলার নানা আলোচনা নিয়ে যেন সরগরম থাকত পুরো চত্বরটি।
কিন্তু সময় যেন পাল্টে গেছে। কফি হাউসের সেই পরিবেশটি হয়তো ঠিকই আছে। কিন্তু আড্ডার সেই পুরোনো মানুষদের নিয়মিত দেখা যায় না। শোনা যায় না সৃজনশীল আলোচনা। যেখানে দেখা যেত নাটকের পাণ্ডুলিপি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাতেন নাট্যকর্মীরা, সেখানে বসলে এখন কানে আসে অন্য আলোচনা। কেউ ব্যস্ত মিউজিক ভিডিওর গল্প নিয়ে, আবার কারও মুখে নাটক আর সিনেমার গল্প। বেশ তো। কাজের কথাই তো হচ্ছে। খারাপ কী?
কিন্তু সংশয় অন্য কারণে। এই আড্ডার মানুষেরা যেন একটু ভিন্ন। তাঁদের চলন-বলন ও পোশাক-আশাকে শিল্পের পরিচয়টা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে কমই।
২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যার কথা। জাতীয় নাট্যশালার মিলনায়তনগুলোতে চলছে নাটকের মঞ্চায়ন। শিল্পকলা একাডেমীর আর্কাইভ কক্ষে চলছে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। দর্শকদের অনেকেই চেনাজানা। অথচ নাট্যশালার পেছনেই সেই পরিচিত কফি হাউস। শুধু মানুষগুলো অপরিচিত। তাঁদের আলোচনার বিষয়গুলো অপরিচিত।