কবির ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিকের কবিতা

নিজের প্রদর্শনীতে কবি শামসেত তাবরেজী। ছবি : সংগৃহীত

হরফের ভাষায় বলতে বলতে কবি থমকে দাঁড়িয়েছেন। বলতে চেষ্টা করেছিলেন রঙের ভাষায়। মহামারির আগের বছর ‘মুহূর্তমা’ নামের এক প্রদর্শনীতে কবি শামসেত তাবরেজী দেখিয়েছিলেন তাঁর রঙের কথামালা। মহামারি যখন শেষের পথে, তখন আবারও কবি ঘর থেকে বের করলেন আরও কিছু নতুন চিত্রকর্ম। সেগুলো কেবলই চিত্রকর্ম নয়, যেন ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিকের কবিতা।

প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া শামসেত তাবরেজীর চিত্রকর্ম। ছবি : সংগৃহীত

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় লালমাটিয়ার দ্বীপ গ্যালারিতে শুরু হয়েছে কবি ও উদীয়মান চিত্রকর শামসেত তাবরেজীর একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ‘র‍্যান্ডম ভিনেটস’। কিউরেটরের হাত ঘুরে গ্যালারির দেয়াল শোভিত হয়েছে ৫৭টি চিত্রকর্মে। ছবিগুলো প্রসঙ্গে কিউরেটর মুস্তফা জামান জানাচ্ছেন, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি যদি ‘মানসবিশ্বের এমন এক পর্যায়, যার পরিচয় অনেকেরই অজানা’—এ মত স্তর থেকে জন্মে, তবে শামসেত তাবরেজীও এমন নিশ্চেতনার স্তর থেকেই ছবি আঁকেন। রবীন্দ্রনাথের মতো তাবরেজীও প্রামাণ্য আকার-আকৃতি থেকে দূরে থেকে সাকার বর্গীয় ছবির প্রণেতা হতে চেষ্টা করেছেন। বস্তুকে অপরিচিত বা নতুনতর মাত্রায় উন্নীত করে দর্শকের সামনে তুলে ধরেন।

কবি রবীন্দ্রনাথের ছবিতে বিভিন্ন জন্তুর আকার যেমন পাখি, সরীসৃপ, এমনকি কাল্পনিক সাপ হাজির হয়েছে। এগুলো নিরাকার আর আকারের দুনিয়ার মধ্যে মধ্যস্থতা করে। এই সব আদিমভাব প্রকাশকারী মূর্তির পাশাপাশি রবিঠাকুর তুলনামূলক সাবলীলতার সঙ্গে এঁকে রেখে গেছেন অজস্র জ্যামিতিক বা আর্কিটেকচারাল মুখাবয়ব ও শরীর—এগুলো অধিকতর নিরাকারমুখী। রবীন্দ্রনাথ ও তাবরেজী দুজনে সাকারবাদী হওয়া সত্ত্বেও শান্তিনিকেতনের কবি আর ঢাকার ক্রমবর্ধমান নাগরিক জটিলতার কবির ছবি দুই বিপরীত মেরুর প্রপঞ্চ তুলে ধরে।

শামসেত তাবরেজীর চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধনী পর্বে। ছবি : সংগৃহীত

তাবরেজীর শিল্পীজীবনের শুরু হঠাৎ করেই। শিল্পীবন্ধু শিশির ভট্টাচার্য্য ও অন্যরা তাঁকে শিল্পের পরিসরে পা দেওয়ার দুঃসাহস জুগিয়েছেন। যে রসদ নিয়ে তিনি এই নতুন ক্ষেত্রে সৃষ্টিশীলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন, তা মোটেই প্রতিষ্ঠিত শিল্পভাষার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এক বছর বাদে আবারও নতুন ছবি প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয় তাঁর কাছে। লকডাউনে ঘরবন্দী হয়েই কি নতুন করে আঁকার প্রয়াস পেয়েছেন? এমন প্রশ্নে তাবরেজী বলেন, ‘লকডাউন না হলেও আঁকতাম। কারণ এসবের মধ্যে থাকতেই আমার ভালো লাগে।’

শামসেত তাবরেজীর দ্বিতীয় একক চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন শিল্পী নিসার হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের চেয়ারপারসন শিল্পী রশিদ আমিন, শিল্পী দিলারা বেগম জলি, ঢালি আল মামুন, ওয়াকিলুর রহমান, প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কবি সাজ্জাদ শরিফ প্রমুখ। প্রদর্শনীটি চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সোমবার বাদে প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দ্বীপ গ্যালারি ঘুরে আসা যাবে।