কানের ‘মার্শে দ্যু ফিল্মে’ বাংলাদেশের ছবি

‘মুন্নি’ প্রামাণ্যচিত্রের দৃশ্য
মার্শে দ্যু ফিল্মের ওয়েবসাইট থেকে

৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের বাণিজ্যিক শাখা মার্শে দ্যু ফিল্মে নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশের তিনটি প্রকল্প। এর মধ্যে দুটি প্রামাণ্যচিত্র ‘মুন্নি’ ও ‘থার্টিন ডেসটিনেশনস অব আ ট্রাভেলার’ আর একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মুভিং বাংলাদেশ’।

প্রামাণ্যচিত্র দুটি মার্শে দ্যু ফিল্মের ডকস ইন প্রগ্রেস-এর শোকেজ সাউথ এশিয়ায় স্থান পেয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করেছে ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ইনিশিয়েটিভ অব বাংলাদেশ।

‘মুন্নি’ প্রামাণ্যচিত্রটির কেন্দ্রে আছেন একই নামের এক নারী। মেয়েদের জন্য একটি ফুটবল একাডেমি গড়ে তোলেন বাল্যবিবাহের শিকার এই নারী, যেখান থেকে ভবিষ্যৎ ফুটবলার গড়ে উঠবে। শুধু ফুটবলার বানানোই তাঁর কাজ নয়, তিনি এই মেয়েদের মধ্যে জন্ম দেন অদম্য সাহস।

ছবিটি পরিচালনা করছেন তাহরিমা খান। তাঁর প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র ‘কালার অব ওয়াটার’। এটি তাঁর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র। তাহরিমা খান বলেন, ‘মুন্নি হচ্ছে একটি নাম, যা বাংলাদেশের অসংখ্য নারীর স্বপ্নের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই মুন্নি শুধু একটা উইমেন স্পোর্টস টিমের গল্পই না, এটি তাদের প্রতিদিনের নানা প্রতিকূলতাকে জয় করারও গল্প।’

তিনি জানান, এই দলের অন্যতম উদ্দেশ্য নিজেদের বাল্যবিবাহ ঠেকানো। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের নিয়ে কাজ করছি, কারণ এই চরিত্রগুলো আমার চেনা ও জানা। আমি যে শহর থেকে এসেছি, তারাও সেখান থেকেই এসেছে।’

তাঁর মতে, একটা ছোট মফস্বল থেকে উঠে এসে স্বাভাবিক কাজের বাইরে গিয়ে খেলাকে প্রফেশন হিসেবে বেছে নেওয়া এবং তা নিয়ে এগিয়ে যেতে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এটিই তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে প্রামাণ্যচিত্রটি তৈরি করতে।

মার্শে দ্যু ফিল্মে অংশগ্রহণ নিয়ে এই নির্মাতা বলেন, ‘অবশ্যই এটা গুরুত্বপূর্ণ, বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রামার এখন এই প্রামাণ্যচিত্রটি সম্পর্কে জানতে পারবে, যা প্রামাণ্যচিত্রটি সুন্দরভাবে শেষ করতে এবং সেই সঙ্গে বিভিন্ন উৎসবে পাঠাতে দিকনির্দেশনার মতো কাজ করবে। কানের এই ডকস প্রোগ্রামের দিকে প্রামাণ্যচিত্র উৎসব বাজারের গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারকেরা নজর রাখেন। এ কারণে কানের ডকস-ইন-প্রগ্রেসে নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে ছবিটির বৈশ্বিক বাজারে অংশগ্রহণের সুযোগ বেড়ে গেল।’

‘মুন্নি’ প্রযোজনা করেছেন বাংলাদেশি পরিচালক ও প্রযোজক আবু শাহেদ ইমন। তিনি ‘জালালের গল্প’ নামে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বানিয়েছেন। প্রযোজনা করেছেন ‘ইতি, তোমারই ঢাকা’র মতো সিনেমা।

নির্মাতা জানিয়েছেন, ছবিটি ইন্টারন্যাশনাল এমার্জিং ফিল্ম ট্যালেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইইএফটিএ) মাধ্যমে ডক লাইপজিগে অংশগ্রহণ করে এবং ডকেজ নিউজিল্যান্ডে উপস্থাপনের সুযোগ পায়। ছবিটির অর্ধেক শুটিং শেষ হয়েছে।

মার্শে দ্যু ফিল্মে নির্বাচিত অপর ছবি ‘থার্টিন ডেসটিনেশনস অব আ ট্রাভেলার’ অবশ্য যৌথ প্রযোজনা। বাংলাদেশের সঙ্গে এটি প্রযোজনা করছে ভারত। পরিচালনায় পার্থ দাশ। তিনি মূলত অডিও-ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট। চলচ্চিত্র, পারফরম্যান্স ও ইনস্টলেশন আর্ট তাঁর কাজের ক্ষেত্র।

‘থার্টিন ডেসটিনেশনস অব আ ট্রাভেলার’ প্রামাণ্যচিত্রের দৃশ্য
মার্শে দ্যু ফিল্মের ওয়েবসাইট থেকে

সমান্তরাল দুটো যাত্রার গল্প নিয়ে এই ছবি। এক যাত্রায় দিনের পর দিন মাইলের পর মাইল পাড়ি দেয় হাজার হাজার সুফি, সহ্য করে দৈহিক যাতনা। অন্য যাত্রার কেন্দ্রে আছে সমকালীন ভারতের এক প্রতিবন্ধী প্রান্তিক মুসলমান। জীবনটাকে সে বদলানোর চেষ্টা করে; প্রেম-ভালোবাসা আর অধরা সুখের খোঁজে শারীরিক, অর্থনৈতিক আর সামাজিক বাধার বিরুদ্ধে লড়াই করে।

এই ছবির বাংলাদেশি প্রযোজক মোখলেসুর রহমান তালুকদার সম্প্রতি প্রযোজনা করেছেন নূরুল আলম আতিকের সিনেমা ‘মানুষের বাগান’। ছবির ভারতীয় প্রযোজক সৌম্য মুখোপাধ্যায় প্রযোজনা করেছেন আশিষ অভিকুন্তকের ছবি ‘না মানুষ প্রেমের কথামালা’। রটারডম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি অংশগ্রহণ করে।

মার্শে দ্যু ফিল্ম বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র উৎসবের ফিল্ম বাজারের সঙ্গেও কাজ করে। এসব ফিল্ম বাজার থেকে এবার মার্শে দ্যু ফিল্মের কো-প্রোডাকশন ডের জন্য প্রকল্প নির্বাচন করা হয়েছে। ভারতের এনএফডিসি ফিল্ম বাজার থেকে সাতটি প্রকল্প নির্বাচিত হয়েছে। এরই একটি নুহাশ হুমায়ূনের ‘মুভিং বাংলাদেশ’। এই ছবির বাংলাদেশি প্রযোজক আরিফুর রহমান ও বিজন ইমতিয়াজ।

মুভিং বাংলাদেশ ছবির পোস্টার
নির্মাতার ফেসবুক পাতা থেকে

নুহাশ ‘হোটেল আলবাট্রস’, ‘পিৎজা ভাই’ দিয়ে প্রশংসা পেয়েছেন। অমনিবাস চলচ্চিত্র ‘ইতি, তোমারই ঢাকা’-র অন্যতম নির্মাতা তিনি। বিজন ইমতিয়াজ ‘মাটির প্রজার দেশে’ ছবিটি বানিয়েছেন। আরিফুর রহমান ও বিজন ইমতিয়াজ গুপী বাঘা প্রোডাকশন থেকে ছবি প্রযোজনা করেন। গুপী বাঘা থেকে প্রযোজনা করা হয়েছে আফগানি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘রোকাইয়া’। ছবিটি ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। নুহাশ জানিয়েছেন, আগামী বছর থেকে ‘মুভিং বাংলাদেশ’-এর শুটিং শুরু হবে।

বেশির ভাগ চলচ্চিত্র উৎসবের একটি করে বাণিজ্যিক শাখা থাকে। কান চলচ্চিত্র উৎসবের বাণিজ্যিক শাখা মার্শে দ্যু ফিল্ম। এখানে চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট মানুষ যেমন প্রযোজক, পরিচালক, পরিবেশক ও কলাকুশলীরা জমায়েত হন। তাঁরা বিভিন্ন প্রকল্পের প্রযোজনা, পরিবেশনা ও নির্মাণ বিষয়ে মতবিনিময় করেন। সিনেমাটি নির্মাণ ও বিপণন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হন। বলে রাখা ভালো, মার্শে দ্যু ফিল্মে নির্বাচিত তিনটি ছবিই নির্মাণাধীন।