ছোটবেলায় প্রিয় খাবার চুরি করে খায়নি এমন মানুষ কমই আছে। তারকারাও আছেন সে তালিকায়। এ সময়ের চার অভিনয়শিল্পী বলেছেন সে কথা

সাবিলা নূর
ছোটবেলা থেকেই দুটো জিনিসের প্রতি আমার লোভ ছিল বেশি। কপাল এত খারাপ যে দুটি জিনিসই আমাকে চুরি করে খেতে হয়েছে। একটি হলো গরুর মাংসের হাড়িয়া কাবাব, অন্যটি চকলেট। দুটি জিনিসই মা আমাকে খেতে দিতেন না। গরুর মাংসে আমার এলার্জি ছিল আর সেই সময় আমার দাঁতে পোকা লেগেছিল। ফলে চকলেট খাওয়ার ওপরও মায়ের কড়া নিষেধ ছিল। কিন্তু আমি তো নাছোড়বান্দা। মায়ের অগোচরে দুটি জিনিসই একাধিকবার চুরি করে খেয়েছি।
নানির হাতের গরুর মাংসের হাড়িয়া কাবাব আমার বেশি পছন্দ ছিল। মা-ও এই কাবাব রান্নায় নানির হাতেরই গুণ পেয়েছেন।
একটা ঘটনা বলি, আমরা এখন মালিবাগের যে বাসায় থাকি ওখানকারই ঘটনা। আমি তখন থ্রি অথবা ফোরে পড়ি। সেদিন বাসায় তিনজন মেহমান আসবেন। তাঁদের জন্য হাড়িয়া কাবার রান্না করেছেন মা। রাতে আসবেন মেহমানেরা। ছোট পাতিলে আলাদা করে রাখা হয়েছে। মা দুপুরে রান্না শেষ করে বিশ্রামে গেছেন। আমি চুপিচুপি সেই কাবাব পুরোটাই খেয়ে ফেলেছিলাম। পরে মেহমান এলে আর তাঁদের দিতে পারেননি। মা বুঝেই গিয়েছিলেন যে আমিই খেয়েছি। মেহমানদের সামনেই আমাকে সে কী বকাবকি!
এখনো সেই গরুর মাংসের এলার্জি রয়ে গেছে। তবে মা এখন আর আমাকে হাড়িয়া কাবাব খাওয়া ঠেকাতে পারেন না। কারণ জানেন যে আমাকে না খেতে দিলেও লুকিয়ে খাব। তাই নিষেধ করেন না; কিন্তু অল্প করে খেতে বলেন।

তৌসিফ মাহবুব
আমরা দুই ভাই। আমি বড়। মায়ের ভালোবাসা আমাদের দুই ভাইয়ের প্রতিই সমান। তবে আমি বড় হওয়ার কারণে হয়তো আমার প্রতি মায়ের নজর একটু বেশিই। আমি তখন অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়ি। ওই সময় যেকোনো ধরনের চানাচুর আমার খুব পছন্দ ছিল। যতটুকুই থাকুক না কেন সামনে থাকলে পুরোটাই খেয়ে সাবাড় করে দিতাম। আর এ জন্য মায়ের কাছে কম বকা খাইনি। মার একই কথা, চানাচুর খাওয়া যাবে না। পেটে অসুখ হবে। কিন্তু চানাচুর খাওয়াটা তখন আমার পুরো নেশা হয়ে গিয়েছিল। মায়ের কাছে চানাচুর চাইলে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ দিয়ে আর দিতেন না। তাই আমিও প্রায়ই চুরি করতাম।
চুরি করে চানাচুর খেতে অনেকবারই সফল হয়েছি। ধরাও খেয়েছি তিন-চারবার। একদিনের কথা মনে আছে। আমি স্কুলে যাওয়ার আগে চানাচুরের আস্ত একটা প্যাকেট মার অগোচরে ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলি। এরপর মা বই-খাতা ঢুকিয়ে দিতে গিয়ে ব্যাগে চানাচুরের প্যাকেট দেখে ফেলেন। প্যাকেটটি বের করে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। আমি তো ভয়ে শেষ! পরে কিছুক্ষণ বকাবকি করেছিলেন। তবে সেদিন চানাচুরের প্যাকেটটি আমাকে আর দেননি।

শবনম ফারিয়া
ছোটবেলায় আইসক্রিম খাওয়ার কারণে মায়ের হাতে অনেকবার বকা খেয়েছি। ওই সময় আমার বাতজ্বর হতো। ঠান্ডার কারণে মা একদমই আইসক্রিম খেতে দিতেন না। মেহমানদের জন্য ফ্রিজে আইসক্রিম থাকত। রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে চুপি চুপি উঠে সব আইসক্রিম খেয়ে ফেলতাম। খেয়ে আইসক্রিমের খালি বাক্সটা আবার জায়গামতো ফ্রিজে রেখে দিতাম। কেউ বেড়াতে এলে আইসক্রিম দেওয়ার জন্য ফ্রিজ খুলে যখন দেখতেন বক্স পুরো খালি, তখন মা খুব করে বকা দিতেন আমাকে। এমন ঘটনা কতবার যে হয়েছে!
আলুবোখারা, বাদাম—এই দুটি জিনিসও খেতে আমার খুব ভালো লাগে। রান্নার সময় এই জিনিস দুটি বিরিয়ানি ও পোলাওয়ে মধ্যে দেওয়া হয়। সামনে পেলে আমি তা প্রাণ ভরে খাই। এ জন্য বাসায় এর আগে অনেকবার বকাও খেয়েছি।
একবার ঈদের সময়কার ঘটনা বলি। ঈদে রান্নার জন্য অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে বাজার থেকে আলুবোখারা ও বাদাম আনা হয়েছে। ঈদের আগে রাতে একটা-দুটো করে খেতে খেতে পুরোটাই খেয়ে ফেলেছিলাম। সকালে উঠে রান্না করতে গিয়ে মা দেখেন, প্যাকেটে দুটো জিনিসের একটাও নেই। কী যে বকা খেয়েছিলাম ওই দিন।

জোভান
বাবা দেশের বাইরে থাকেন। সংসারে মা, আমি ও ছোট বোন। ভাইবোনের মধ্যে বড় হওয়ার কারণে আমার প্রতি মায়ের একটু যত্ন বেশি মনে হয়। যদিও মা প্রকাশ করেন না। তবে আমি বুঝতে পারি। ছোটবেলা থেকে তা দেখেও আসছি। তবে ছোটবেলায় হাবিজাবি খেলে মা খুব বকাবকি করতেন। সেই সময় চকলেটের প্রতি খুব লোভ ছিল আমার। এখনো আছে। যা-ই হোক সেই সময় মা বেশি চকলেট খাওয়া পছন্দ করতেন না। মার ধারণা ছিল, বেশি চকলেট খেলে দাঁত নষ্ট হয়ে যাবে। সে জন্য বেশি চকলেট খেতে দিতেন না। কিন্তু আমি চুরি করে চকলেট খেতাম।
বাসায় কেউ চকলেট নিয়ে এলে মা তা লুকিয়ে রাখতেন। কিন্তু আমার তো নিশানাই ছিল চকলেটের দিকে। এমনও দিন গেছে মায়ের লুকিয়ে রাখা চকলেটের পুরোটাই খেয়ে ফেলেছি। এ জন্য মায়ের হাতে মার খেতে হয়নি, তবে কতবার যে বকা খেয়েছি তার হিসাব নেই।
ছোটবেলা থেকে আরেকটি জিনিসের প্রতি লোভ ছিল অত্যধিক। মুরগির মাংসের রান। লোভটা আজও রয়ে গেছে। এখনো সুযোগ পেলে মাকে না জানিয়ে রান্না করে রাখা মুরগির মাংস থেকে বেছে বেছে সব রান আগেই খেয়ে ফেলি। এ কারণে এখন আর মা বকা দেন না। শুটিংয়ের কারণে বেশির ভাগ সময়ই বাসার বাইরে থাকতে হয়। তাই মা তো আমাকে সব সময় কাছে পান না। এ জন্য মায়ের কাছে এখন আমার এ ধরনের সব অপরাধই মাফ।