নারী নির্মাতাদের যাত্রায় এক ভিন্নমাত্রা

‘থ্রু হার আইস’ আয়োজনে সামিয়া জামান, রুবাইয়াত হোসেন, কিরস্টেন হাঁকেনব্রোক ও জাকির হোসেন রাজু
‘থ্রু হার আইস’ আয়োজনে সামিয়া জামান, রুবাইয়াত হোসেন, কিরস্টেন হাঁকেনব্রোক ও জাকির হোসেন রাজু

নারী নির্মাতাদের চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও তাঁদের সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের এক নতুন প্লাটফর্ম ‘থ্রু হার আইস’ যাত্রা করল সম্প্রতি। চলচ্চিত্র নির্মাতা, প্রযোজক ও উপস্থাপক সামিয়া জামানের উদ্যোগে ও গ্যেটে ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের সহযোগিতায় প্রতি মাসের তৃতীয় রোববার এই আয়োজনের ধারা অব্যাহত থাকবে।

উদ্বোধনী চলচ্চিত্র: আন্ডার কনস্ট্রাকশন
গত ২০ জানুয়ারি গ্যেটের পরিচালক কিরস্টেন হাঁকেনব্রোকের উদ্বোধনী ঘোষণার পর রুবাইয়াত হোসেন পরিচালিত আন্ডার কনস্ট্রাকশন ছবিটি প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ‘থ্রু হার আইস’–এর প্রথম আসর। এই ছবির গল্প রয়া নামে ত্রিশোর্ধ্ব এক অভিনেত্রীকে ঘিরে, যিনি পুরুষতন্ত্রের অসংখ্য দৃশ্যমান ও অদৃশ্য কাচের দেয়ালের ভেতর থেকেই রক্তকরবী নাটকের নন্দিনীকে ধারণ করেন। নন্দিনীকে নতুন করে মঞ্চে বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে নিজের আত্মপরিচয় নির্মাণ করতে চান।

প্রথম আসরের দর্শক
চলচ্চিত্র প্রদর্শনী থেকে শুরু করে প্রশ্নোত্তর পর্বের শেষ পর্যন্ত গ্যেটে ইনস্টিটিউটের হলরুম ভরা ছিল দর্শকে। প্রযোজক আরিফুর রহমান, নির্মাতা হুমাইরা বিলকিস, অভিনেত্রী বন্যা মির্জা, তাসমিয়া আফরিনসহ অসংখ্য নারী অধিকার কর্মী, শিক্ষক, গবেষক, চলচ্চিত্রবোদ্ধা, সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রশ্নোত্তর পর্ব
‘থ্রু হার আইস’ আয়োজনের আকর্ষণীয় পর্ব ছিল প্রশ্নোত্তরের অংশটি। চলচ্চিত্র সমালোচক জাকির হোসেন রাজু সঞ্চালনা করেন এই পর্ব। এতে রুবাইয়াত হোসেনের চলচ্চিত্রটি নির্মাণের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা, নারী নির্মাতাদের চ্যালেঞ্জ ও তা উত্তরণের উপায়, নির্মাতার বর্তমান ব্যস্ততা ও স্বপ্ন প্রভৃতি বিষয় আলাপচারিতায় উঠে এসেছে। প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন তরুণ চলচ্চিত্রকর্মী থেকে শুরু করে নির্মাতা, শিল্পী ও সাধারণ দর্শকও।

কেন ‘থ্রু হার আইস’?
চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে নারীদের চলার পথ একটু হলেও সুগম করাই মূলত এই আয়োজনের উদ্দেশ্য। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার মধ্যে নারী নির্মাতাদের সবকিছু উপেক্ষা করে সাহস, অধ্যবসায় আর কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছানো খুব সহজ নয়। সেই ধারণা থেকেই ‘থ্রু হার আইস’–এর মঞ্চটি গড়ে তোলা হয়েছে। প্রথম দিনেই দেখা গেল একজন নারী নির্মাতা মাইক হাতে তাঁর চলচ্চিত্রের জন্য সহযোগিতা চাইলে তৎক্ষণাৎ সামনের সারিতে বসা এক প্রযোজক এগিয়ে আসেন ছবিটির জন্য। মঞ্চে বসেই নির্মাতা রুবাইয়াত হোসেন তাঁর পরবর্তী ছবি প্রযোজনার জন্য সামিয়া জামানকে অনুরোধ জানালে উপস্থিত সবাই সেই উদ্যোগকেও করতালির মধ্য দিয়ে সাধুবাদ জানান। অর্থাৎ, প্রথম আয়োজনেই যোগাযোগ ও আলাপচারিতার মিশেলে ‘থ্রু হার আইস’ হয়ে ওঠে নারী নির্মাতাদের জন্য এক দারুণ প্লাটফর্ম।

আসরের শেষ ভাগে
পরবর্তী মাসের তৃতীয় রোববারের আয়োজনে আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রথম অনুষ্ঠানের ইতি টানা হয়। তারপর চা–কফির পেয়ালা হাতে চলতে থাকে সিনেমা ঘিরেই অনানুষ্ঠানিক আলাপচারিতা।