পরীমনির মামলায় গ্রেপ্তার হননি নাসিরসহ অন্যরা

ডিবি কার্যালয় থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলোন চিত্রনায়িকা পরীমনি
ছবি : প্রথম আলো

ঢাকার বোট ক্লাবে ধর্ষণচেষ্টা, হত্যাচেষ্টা ও হুমকির অভিযোগে ঢালিউডের আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি মামলা করেন ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ, তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ অজ্ঞাতনামা পাঁচজনের বিরুদ্ধে। মামলা করার দিন বিকেলেই নাসির-অমিসহ ছয়জনকে উত্তরা থেকে মাদকসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের ছয় দিনের মাথায় জানা গেল, পরীমনির দায়ের করা মামলায় নয়, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে ডিবির এসআই (উপপরিদর্শক) মানিক কুমার শিকদারের দায়ের করা মামলায়। গতকাল রোববার সকালে মামলার বাদীই প্রথম আলোকে তা নিশ্চিত করেছেন।

পরীমনির করা মামলার আসামিদের মধ্যে দুজন—নাসির ইউ মাহমুদ, অমিসহ (ডানে) পাঁচজনকে গত সোমবার গ্রেপ্তার করে পুলিশ
ছবি : সংগৃহীত

শনিবার যোগাযোগ করা হলে উপপরিদর্শক আবদুস সামাদও জানালেন, পরীমনির মামলায় নয়, নাসির ইউ মাহমুদ, আমিসহ অন্যরা গ্রেপ্তার হয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক মানিক কুমার শিকদারের দায়ের করা মামলায়। পরীমনির মামলা অন্য মামলা, যা সাভার মডেল থানায় দায়ের করা হয়। ১৪ জুন বিমানবন্দর থানায় ডিবির দায়ের করা মামলা নম্বর ১১।

ধর্ষণচেষ্টা, হত্যাচেষ্টা ও হুমকির অভিযোগে সাভার মডেল থানায় ১৪ জুন সকালে অভিযোগ দায়ের করেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে তা নিশ্চিত করেছেন।

বনানীতে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে পরীমনি
ফাইল ছবি

মানিক কুমার শিকদার বলেন, ‘নাসির-অমিসহ সবাইকে মাদকসহ গ্রেপ্তার করেছি। পরীমনির বিষয়টা নিয়ে যখন আলোড়ন সৃষ্টি হইল তখন আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হারুন স্যারের (ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ) নির্দেশে ছায়া তদন্ত শুরু হয়। একপর্যায়ে তদন্ত করতে গিয়ে আমরা তাঁদের মাদকসহ গ্রেপ্তার করি আরকি।’

তার মানে পরীমনির মামলায় নয়, আপনার দায়ের করা মাদকের মামলায় নাসির-অমিসহ অন্যরা গ্রেপ্তার হয়েছেন? ‘একটা মামলার তদন্ত করতে গেলে আসামিদের কাছ থেকে অনেক কিছু জানা যায়। পরীমনির ওই ঘটনায় আমরা দেখলাম, তাঁদের গ্রেপ্তার করা দরকার। তাঁদের গ্রেপ্তার করতে গিয়ে মাদকসহ পাই। মাদক জব্দ করি এবং চার্জ গঠন করি। এটা ঠিক, ফাইনালি এটা রেকর্ড হয়েছে মাদকের মামলা, পরীমনির অভিযোগে নয়। তদন্ত কর্মকর্তা যিনি আছেন, উদয় কুমার মণ্ডল, তাঁর তদন্তে যদি অন্য কিছু বেরিয়ে আসে সেটা অন্য কিছু।’ বললেন মানিক কুমার শিকদার।

পরীমনি
ফেসবুক থেকে

নাসির-অমিসহ অন্যরা গ্রেপ্তারের পর গত মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে যান পরীমনি। ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে তাঁর করা মামলায় তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করতে তিনি সেখানে গেছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ ও গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান তাঁর সঙ্গে সেদিনের ঘটনা ও মামলাসংক্রান্ত বিষয়ে তিন ঘণ্টা কথা বলেন।

ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পরীমনি
ছবি: প্রথম আলো

চিত্রনায়িকা পরীমনি সেদিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাকে ডিবি পুলিশ ডাকেনি, আমি নিজে থেকেই এখানে এসেছি। আমাকে কাজে ফিরতে হবে। সেই কথাটা কিন্তু কেউ ভাবেনি। হারুন স্যার অনেকটা ম্যাজিকের মতো সবকিছু করেছেন। এতটা তাড়াতাড়ি ম্যাজিকের মতো পুলিশ আমাকে সহযোগিতা করবে, সেটা আমি ভাবতে পারিনি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেখলাম অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমার বিশ্বাস, সঠিক বিচার পাব।’

এদিকে বিষয়টি নিয়ে জানতে গতকাল রোববার দুপুরে পরীমনির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। তাই চিকিৎসকের পরামর্শে বনানীর বাসায় বিশ্রামে আছেন।