প্রতিদিন ১০ লাখ টাকা লোকসান

কাকরাইলের জোনাকী সিনেমা হলের দৃশ্য। ছবি: মাসুম আলী
কাকরাইলের জোনাকী সিনেমা হলের দৃশ্য। ছবি: মাসুম আলী

গত ১৮ মার্চ থেকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে দেশের সব সিনেমা হল। সিনেমা হল বন্ধ থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে হচ্ছে মালিকদের। তাতে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। বেশি দিন এ রকম চললে হলমালিকদের লোকসান বহন করা কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি। তারা আহ্বান জানিয়েছে, প্রতিটি এলাকার নিবন্ধিত সিনেমা হলের কর্মচারীদের সহযোগিতার জন্য যেন এগিয়ে আসে সরকার।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির হিসাবমতে, সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টার সিনেমাস বাদে বর্তমানে নিয়মিত ছবি প্রদর্শিত হয়, এমন সিনেমা হলের সংখ্যা প্রায় ৮০। এসব হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় হাজারখানেক। সিনেমা হলগুলো বন্ধ হলেও হলমালিকের খরচের খাতা থেমে নেই। হল থেকে কোনো আয় নেই, বরং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিল ও আনুষঙ্গিক খরচ বহন করতে হচ্ছে হলমালিকদের। আর এতে প্রতিদিনই লোকসান গুনছেন তাঁরা। তাঁরা হিসাব কষে দেখেছেন, প্রতিদিন ছোট-বড় হল থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে। ছুটির দিন লম্বা হলে লোকসান বহন করা কঠিন হয়ে যাবে হলমালিকদের জন্য।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ও চন্দ্রিমা হলের কর্ণধার কাজী শোয়েব বলেন, ‘আমরা একটা হিসাব করে দেখেছি, বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ প্রতিদিন এসব হল থেকে ১০ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে মালিকদের। পরিস্থিতি ভালো না হলে, হল না খুললে, মালিকদের এই লোকসান বহন করা একটা সময় কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কোনো কোনো হল থেকে কর্মচারী ছাঁটাইও হতে পারে।’

হল নেই। কাজ বন্ধ। তাই আজাদ সিনেমা হলের গেটে মাস্ক বিক্রি করছেন একজন কর্মী। ছবি: মাসুম আলী
হল নেই। কাজ বন্ধ। তাই আজাদ সিনেমা হলের গেটে মাস্ক বিক্রি করছেন একজন কর্মী। ছবি: মাসুম আলী

ঢাকার বলাকা হলের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৪৮। হল বন্ধ থাকলেও মাস শেষে তাঁদের বেতন দিতে হবে। সঙ্গে আছে বিদ্যুৎ বিল। হলটির ব্যবস্থাপক এস এম শাহিন জানান, সব মিলিয়ে প্রতিদিন মালিককে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য হল বন্ধ। এভাবে কত দিন মালিক এই লোকসান গুনবেন?

চট্টগ্রামের সিনেমা প্যালেসের ব্যবস্থাপক আবুল হোসেন জানালেন, তাঁদের হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা মোট ১৫। প্রতিদিনই প্রায় ১০ হাজার টাকা করে গুনতে হচ্ছে হল ব্যবস্থাপনার পেছনে। তিনি বলেন, ‘এমনিতেই সিনেমার ব্যবসা ভালো নেই। হল চালু থাকলেও ব্যবসা হতো না খুব একটা। এখন হল বন্ধ। তাই আরও লোকসানের মুখে পড়েছি।’

যশোরের মণিহার সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক তোফাজ্জেল হোসেন জানান, এই হলে মোট ৩১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। হল বন্ধ থাকার কারণে প্রতিদিনই ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা করে খরচ হচ্ছে।

চিত্রামহলের বন্ধ গেটে আড্ডা জমেছে। ছবি: মাসুম আলী
চিত্রামহলের বন্ধ গেটে আড্ডা জমেছে। ছবি: মাসুম আলী

প্রদর্শক সমিতির সহসভাপতি ও আড়াইহাজার উপজেলার সাথী সিনেমা হলের মালিক মিয়া আলাউদ্দিন জানান, প্রেক্ষাগৃহের ব্যবসা দীর্ঘদিন থেকেই খারাপ। এখন হল বন্ধ। কিন্তু কর্মচারীদের বেতন ও আনুষঙ্গিক খরচ বহন করতে হচ্ছে হলমালিকদের। পরিস্থিতি ভালো না হলে এই লোকসান চলতেই থাকবে। কত দিন ধরে এই লোকসান বহন করবেন হলমালিক, সেটা এখন ভাবার বিষয়।
এই পরিস্থিতিতে তিনি মনে করেন, সিনেমা হল বাঁচাতে হলে এখন সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘এই সময়ে অসহায় মানুষদের যেমন সহযোগিতা করছে সরকার, তেমনি সিনেমা হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি দেখার জন্য অনুরোধ করছি আমরা।’