বন্ধ রাখার নির্দেশ এলেও খোলা বেশ কিছু সিনেমা হল

করোনা নিয়ে নির্দেশনা মানছেন না বেশির ভাগ হলমালিক। ছবি: প্রথম আলো
করোনা নিয়ে নির্দেশনা মানছেন না বেশির ভাগ হলমালিক। ছবি: প্রথম আলো

বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে খুলে গেল অভিসার সিনেমা হলের টিকিট কাউন্টারের সামনের কলাপসিবল গেট। তিন–চারজন ভবঘুরে অপেক্ষা করছিলেন। টিকিট কাউন্টার খুলতেই হাত পেতে দিলেন টিকিটের জন্য। ৬০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনে চলে গেলেন তিনতলার রজনীগন্ধায়। অভিসারের ওপর তলায় নেপচুনে ইংরেজি ছবি দেখতে যাঁরা টিকিট কাটলেন, তাঁদের দুজনই ছিলেন ভবঘুরে। নোংরা পোশাকে, ময়লা পুঁটলি কাঁধে, ছেঁড়া জুতা পায়ে হলের ভেতরে ঢোকেন তাঁরা।

১৮ মার্চ থেকে আগামী ২ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব সিনেমা হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি। কিন্তু গতকাল রাজধানীর কয়েকটি সিনেমা হলে গিয়ে দেখা গেল, হলমালিকেরা সমিতির নির্দেশ মানছেন না। করোনার ঝুঁকি উপেক্ষা করে হল খোলা রাখা হয়েছে। টিকিট বিক্রি চলছে, চলছে ছবির প্রদর্শনী। এর মূল কারণ মূলত সমিতির সদস্যদের নেতৃত্বে দ্বন্দ্ব।
টিকাটুলীর অভিসারে চলছে শাকিব খান অভিনীত পুরোনো ছবি ‘হিংস্র মানব’। বেলা সোয়া ১১টায় সেখানে গিয়ে দেখা গেল, হলের মূল ফটক খোলা। নিরাপত্তারক্ষীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, আজ শো চলবে কি না। তিনি জানান, সরকারের কাছ থেকে হল বন্ধের কোনো নির্দেশ তাঁরা পাননি। আজ বৃহস্পতিবারও দেখা গেছে হলটি খোলা।

দুপুর ১২টায় মতিঝিলের মধুমিতা সিনেমা হলে গিয়েও একই চিত্র পাওয়া গেল। টিকিট বিক্রি হচ্ছে। একজন দর্শক মাস্ক পরে হলের ভেতরে ঢুকলেন। ঢোকার পর মাস্ক খুলে হাতে নিয়ে দোতলায় উঠে গেলেন। তিনি দেখবেন শাকিব খান ও নুসরাত ফারিয়া অভিনীত ‘শাহেনশাহ’ ছবিটি।
নয়াপল্টনে গিয়ে দেখা গেল, জোনাকী হলের টিকিট কাউন্টারও খোলা। হলের দারোয়ানকে প্রদর্শনী বন্ধের খবর জিজ্ঞেস করলে তিনি জানালেন, এমন কোনো কথা তিনি জানেন না। জোনাকীতেও ‘শাহেনশাহ’ ছবিটি চলছে।

বলাকা হল বন্ধ করেছে গতকাল থেকে। ছবি: প্রথম আলো
বলাকা হল বন্ধ করেছে গতকাল থেকে। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার বাইরের অবস্থা জানতে যোগাযোগ করা হয় কুমিল্লার হোমনার মুন সিনেমা হলে। হলের মালিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘হল খোলা রেখেও তো লাভ হচ্ছিল না। বিক্রি নেই। তার ওপর করোনা–আতঙ্ক। আমি হল বন্ধ রেখেছি।’
হল খোলা রাখার বিষয়টি প্রদর্শক সমিতির সভাপতি কাজী শোয়েব রশিদের নজরে আনলে তিনি বলেন, ‘যাঁরা সমিতির সিদ্ধান্ত মানবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। মঙ্গলবার সরকারি ছুটি থাকার কারণে হল বন্ধের চিঠি অনেক জায়গায় পৌঁছায়নি। আজ (গতকাল বুধবার) সব হলে নোটিশ পৌঁছে যাবে। শুধু রাজধানীতে নয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও খোঁজ নিয়ে দেখা হবে হল বন্ধ রাখা হচ্ছে কি না।’
কাজী শোয়েব রশিদ জানান, হলমালিকদের অনেকে সিদ্ধান্ত মানছেন, অনেকে মানছেন না, এ ব্যাপারে তিনি অবগত। তিনি বলেন, যেখানে সরকার স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দিয়েছে, সেখানে হল খোলা রাখার যুক্তি নেই। সিনেমা নেই, ব্যবসাও নেই, এ অবস্থায় হল খোলা রেখে ঝুঁকি বাড়ানোর মানে হয় না। মালিকদের সচেতন হতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে এই সংকটে। দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে হবে।
হল খোলা রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে মধুমিতা সিনেমা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন প্রদর্শক সমিতির বর্তমান কমিটিকে ‘অবৈধ’ বলে মন্তব্য করেন। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেলেই তিনি হল বন্ধ রাখবেন বলে জানান। অন্যথায় তাঁর হল অন্য সময়ের মতোই খোলা থাকবে।
প্রদর্শক সমিতির কমিটি–সংক্রান্ত জটিলতায় হলমালিকেরা নানা ভাগে বিভক্ত হয় পড়েছেন। এ কারণেই গত বছরের অক্টোবরে গঠিত কমিটির সিদ্ধান্ত অনেক হলমালিক মানছেন না। কিছু জায়গায় হল খোলা থাকছে, কিছু জায়গায় হল বন্ধ থাকছে।