বাঁশির সুরে রণজিৎ বিশ্বাসকে স্মরণ

রণজিৎ​ বিশ্বাস স্মরণানুষ্ঠানে বাঁশিতে সুর তোলেন ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম। ছবি: প্রথম আলো
রণজিৎ​ বিশ্বাস স্মরণানুষ্ঠানে বাঁশিতে সুর তোলেন ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম। ছবি: প্রথম আলো

প্রথমে আলোচনা, পরে বাঁশির সুরের মূর্ছনা—এভাবেই একজন প্রয়াত লেখককে স্মরণ করা হলো। জীবনের বেশির ভাগ সময় আমলা হিসেবে কাটিয়েছেন। তবে সব ছাপিয়ে একজন পূর্ণাঙ্গ সংস্কৃতমনা মানুষ ছিলেন রণজিৎ বিশ্বাস। ছিলেন সফল লেখক। গতকাল রোববার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তিকলা মিলনায়তনে সংগীতবিষয়ক পত্রিকা ‘সরগম’ তাঁর স্মরণেই আয়োজন করে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি আজীবন অনুগত থাকা এই মানুষটি ছিলেন অত্যন্ত সজ্জন, নির্ভীক—সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব রণজিৎ বিশ্বাস স্মরণানুষ্ঠানে বক্তারা এভাবেই তাঁকে মূল্যায়ন করেন। প্রখ্যাত বংশীবাদক ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বাঁশির সুরে স্মরণ করেন প্রয়াত এই লেখককে।
স্মরণানুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। স্মৃতিচারণা করেন রণজিৎ বিশ্বাসের স্ত্রী কবি শেলী সেনগুপ্ত, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসের উপাচার্য লিয়াকত আলী, চট্টগ্রাম চারুকলা ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ সবিহ্-উল-আলম। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন কবি ও সংসদ সদস্য কাজী রোজী। স্বাগত বক্তব্য দেন ‘সরগম’ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন।
গওহর রিজভী তাঁর স্মৃতিচারণায় রণজিৎ কুমারকে দেশের মেধাবী আমলাদের একজন হিসেবে মন্তব্য করেন। শেলী সেনগুপ্ত বলেন, ‘রণজিৎকে নিয়ে ভাবা সহজ, বলা কঠিন। ৩৪ বছরের সংসারের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তাঁকে শুধু ধারণ করা যায় বুকে। ও ফুল, রং ও সুগন্ধী ভালোবাসত। সে আমার ওপর অনেক মানুষের ভালোবাসার বোঝা দিয়ে গেছে। তবে সম্পদের কোনো বোঝা দিয়ে যায়নি। ওর স্মৃতিকে সঙ্গে নিয়ে এ বাংলায় থাকতে চাই। যে দেশকে আমার স্বামী ভালোবেসেছেন, সে দেশে শেষনিশ্বাস পর্যন্ত থাকতে চাই।’
ছোট পরিসরে আলোচনা পর্ব শেষে শুরু হয় ওস্তাদ আজিজুল ইসলামের বংশীবাদন। শুরুতেই তিনি বাজিয়ে শোনান রাগ শিবরঞ্জনী। সবশেষে বেশ কিছু সময় মিশ্র ধুন বাজিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেন। আজিজুল ইসলামের সঙ্গে তবলায় মেহের ও তানপুরায় সংগত করেন জাহাঙ্গীর।
গত ২৩ জুন রণজিৎ কুমার বিশ্বাস মারা যান। ১৯৫৬ সালের ১ মে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রণজিৎ কুমার বিশ্বাস। ১৯৮১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তথ্য কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন রণজিৎ। গত বছরের ২৭ এপ্রিল অবসরে যাওয়ার দুই দিন আগে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব থেকে সিনিয়র সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। গত ৩০ এপ্রিল তিনি অবসরোত্তর (পিআরএল) ছুটিতে যান। ক্রিকেট নিয়ে তাঁর লেখা ছিল বেশ জনপ্রিয়। তাঁর কয়েকটি বইও প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ‘কুড়িয়ে পাওয়া সংলাপ’, ‘মানুষ ও মুক্তিযুদ্ধের সংলাপ’, ‘শুদ্ধ বলা শুদ্ধ লেখা’, ‘হৃদয়ের ক্ষরণ কথা’ উল্লেখযোগ্য।