‘বাংকার বয়’ কিশোরের বেঁচে থাকার গল্প

‘বাংকার বয়’ সিরিজের একটি দৃশ্যে আবদুল্লাহ আল সেন্টু। ছবি: প্রথম আলো

বিজয়ের ৫০ বছর পার করছে দেশ। বিজয়ের পেছনে বাঙালির রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের অনেক গল্প নানাভাবে পর্দায় উঠে এসেছে। তবে এবার বাংকার বয় অ্যান্থলজি ওয়েব সিরিজের নতুনভাবে উঠে এল একখণ্ড একাত্তরের রণাঙ্গন। গল্পের জন্য তৈরি করতে হয়েছিল ক্যাম্প। গল্পে মা–বাবাকে হারিয়ে শরণার্থীশিবিরে এক কিশোরের মানবিক গল্প তুলে ধরা হয়েছে। পুরো গল্পেই রয়েছে টানটান উত্তেজনা। এটি বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হবে ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকিতে।
দেশের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চরকির বিশেষ আয়োজন জাগো বাহে। ৯ ডিসেম্বর চরকিতে মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে প্রথম পর্ব শব্দের খোয়াব। গত বৃহস্পতিবার প্রচারিত হয় দ্বিতীয় পর্ব লাইটস, ক্যামেরা...অবজেকশন। সিরিজের দুটি পর্বই দর্শকদের প্রশংসা পেয়েছে। বাংকার দিয়েই শেষ হবে চরকির জাগো বাহে শেষ পর্ব। এটি আজ বৃহস্পতিবার রাত আটটায় মুক্তি পাবে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত ৭১–এর গল্পে আগে এভাবে মানবিক বিষয়কে তুলে ধরতে দেখা যায়নি। ১৯৭১-এ যুদ্ধের ভয়াবহ সময়ে এক বাংকারে মুখোমুখি হাজির হয়েছে একজন বাঙালি কিশোর ও অন্যজন পাকিস্তানি সেনাসদস্য। সুযোগের জন্য ওত পেতে রয়েছে তারা। যুদ্ধের বাইরে থেকেও নিরীহ মানুষের কঠিন সংগ্রামের মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিশোর আকবরের মধ্যে দিয়ে চরিত্রটি পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন অভিনেতা আবদুল্লাহ আল সেন্টু। থিয়েটার ও টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেন। তবে এবারই প্রথম প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন।

বাংকার দিয়েই শেষ হবে চরকির জাগো বাহে শেষ পর্ব।

যোগাযোগ করা হয় আবদুল্লাহ আল সেন্টুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রথম যেদিন শুটিং টিমের একজন ডেকে গল্প শোনানোর সময় বললেন, ধরো, যুদ্ধ শুরু হয়েছে তিন মাস। তোমার চোখের সামনে তোমার মা–বাবাকে মেরে ফেলেছে পাকিস্তানিরা...পুরো গল্পের ব্রিফ শুনে তখনই আমি গল্পের চরিত্র হয়ে গিয়েছিলাম। এমন হয়েছে, শুটিংয়ের সময় কাট বললেও আমি বসে থাকতাম। টানা দুই মাসের মতো রিহার্সালে এটা সম্ভব হয়েছে।’

একটি বেদনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তিনি বলেন, ‘আমার মুখে সব সময় হাসি থাকে। কুকুরের সঙ্গে দৃশ্য ধারণের সময় পরিচালকের কড়া চোখরাঙানি, হাসা যাবে না, চরিত্রের মধ্যে থাকো। সব রেডি। আমি কাঁদতে কাঁদতে লাশের মধ্যে থেকে বের হচ্ছি। অনেকটা সময় পরে শুনলাম “আকবর” বলে ডাকছে। তখনই আমার চেতনা ফেরে। পরে তারা সবাই বলল, পরিচালক কাট বলেছেন।’

নগদ নিবেদিত চরকি অরিজিনাল অ্যান্থোলজি সিরিজ জাগো বাহের তৃতীয় পর্ব বাংকার বয়-এ আরও অভিনয় করেছেন মুস্তাফিজুর নূর ইমরান

মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটের গল্পটির দৃশ্যধারণ নিয়ে প্রথম থেকেই চিন্তায় ছিলেন পরিচালক সুকর্ণ সাহেদ ধীমান। কারণ, ৫০ বছর আগের সেই পরিবেশ পর্দায় তুলে ধরা চ্যালেঞ্জিং ছিল। তেমন জুতসই লোকেশন পাওয়া কষ্টকর। পরে তারা শুটিংয়ের প্রয়োজনে বাংকার তৈরি করেন। তিনি বলেন, ‘বাংকার বয় সিনেমাটির প্রয়োজনে যুদ্ধক্ষেত্র বিনির্মাণ করতে হয়েছিল। এমন লোকেশন খুঁজে পেতেই সহকর্মীদের সবচেয়ে বেশি ঘাম ঝরাতে হয়েছে। তা ছাড়া বৃষ্টি, কাদা ও শীতে অভিনেতারাও প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছেন। আশা করি সিনেমাটি দর্শকদের কাছে নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে হাজির হবে।’

মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটের গল্পটির দৃশ্যধারণ নিয়ে প্রথম থেকেই চিন্তায় ছিলেন পরিচালক সুকর্ণ সাহেদ ধীমান

‘চরকি সব সময় দর্শক ও দেশের সাংস্কৃতিক কথা চিন্তা করেই কনটেন্ট তৈরি করে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় আমাদের বিজয়ের মাসের বিশেষ আয়োজন ছিল জাগো বাহে। তিনটি দেশের গল্প তুলে ধরার চেষ্টা করেছি,’ বলেন চরকির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি। তিনি আরও বলেন, ‘চরকি অরিজিনাল অ্যান্থোলজি সিরিজ জাগো বাহের আগের দুই পর্ব সারা ফেলেছে। দর্শক প্রশংসা করেছেন। বিজয়ের মাসে প্রতিবাদের এই গল্পগুলো আমাদের নতুন করে ভাবাবে। সুকর্ণ সাহেদ ধীমানের অসাধারণ এই নির্মাণে দর্শক নতুন কিছু দেখবে।’
নগদ নিবেদিত চরকি অরিজিনাল অ্যান্থোলজি সিরিজ জাগো বাহের তৃতীয় পর্ব বাংকার বয়-এ আরও অভিনয় করেছেন মুস্তাফিজুর নূর ইমরান।