বাবার পুতুলি, মায়ের কুন্তলা

পুতুল
পুতুল

ক্লোজআপ ওয়ান তারকা পুতুলকে তাঁর শ্রোতা-ভক্তরা সবাই পুতুল নামে চিনলেও তাঁর নাকি আছে এক ডজনের বেশি ডাকনাম। বাবার কাছে তাঁর নামটি পুতুল থেকে ‘পুতুলি’ হয়ে গেলেও মায়ের কাছে গিয়ে সেটি রূপান্তরিত হয়েছে ‘কুন্তলা’য়। আর ছোটবেলায় গানের ওস্তাদের কাছে তাঁর আদুরে নামটি ছিল পুতলা।
পুতুলকে সবাই এখন একজন সম্ভাবনাময়ী সংগীতশিল্পী হিসেবে চিনলেও স্কুলজীবনে তাঁকে অনেকেই চিনতেন একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবে। স্কুলের প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানেই তাঁর নাচ ছিল অনুষ্ঠানের অন্যতম মূল আকর্ষণ। নাচের পাশাপাশি তিনি স্কুল নাট্যদলের কোরিওগ্রাফারের দায়িত্বও পালন করেছেন।
অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন এই শিল্পী গণিত বিষয়ে একজন শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তেন। কিন্তু মাস শেষে বেশির ভাগ সময়েই শিক্ষকের সম্মানী নিতে ভুলে যেতেন। আর একই কারণে শিক্ষক ব্যাচের সবার সামনে তাঁকে এক দিন টেবিলের ওপর কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন। ফলাফল: অনবরত কান্নার সঙ্গে দুই দিনের জ্বর।
মাত্র চার বছর বয়সেই এই শিল্পী প্রথমবারের মতো মঞ্চে পারফর্ম করেন। স্থানীয় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ‘বঁধু, কোন্ আলো লাগল চোখে!’ রবীন্দ্রসংগীতটি গেয়ে উপস্থিত শ্রোতাদের চমকে দেন। আর সে গানের জন্য অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির কাছ থেকে পাওয়া ৫০০ টাকাই ছিল তাঁর গান গেয়ে পাওয়া জীবনের প্রথম পুরস্কার।
শিক্ষাজীবনে বাংলা দ্বিতীয় পত্রে সব সময় ভালো ফল করলেও মাধ্যমিক পরীক্ষায় সে বিষয়ে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে এক অপ্রত্যাশিত ঘটনার মুখোমুখি হন এই শিল্পী। সহপাঠীর ডাকে পেছনে তাকানোর অপরাধে হল পরিদর্শক নির্ধারিত সময়ের আগেই তাঁর খাতা জমা নিয়ে নেন, আর সে কারণেই ওই বিষয়ে পান শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে কম নম্বর।
মাধ্যমিক পরীক্ষার পরের সময়টায় চট্টগ্রামে একটি প্রতিষ্ঠানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান করেন পুতুল। আর তাতেই স্থানীয়ভাবে রাতারাতি তারকা বনে গেলেন তিনি। অনুষ্ঠানের পরদিন জনপ্রিয়তায় ভেসে যাওয়া পুতুলের কাছে স্থানীয় একজন অটোগ্রাফ চাইতে আসেন। আর ওই অটোগ্রাফই ছিল সংগীতশিল্পী পুতুলের দেওয়া জীবনের প্রথম অটোগ্রাফ।
ক্লোজআপ ওয়ান তারকা হওয়ার আগে পুতুল ‘নতুন কুঁড়ি’ প্রতিযোগিতায় দেশাত্মবোধক গানে তাঁর শাখায় প্রথম স্থান অধিকার করেন ।
২০০৫ সালে আয়োজিত ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগিতার প্রথম অডিশনেই বাদ পড়ে যেতে বসেছিলেন তিনি। অডিশনের বিচারক ফাহমিদা নবীকে গান গেয়ে সন্তুষ্ট করতে না পারায় তিনি পুতুলকে বাদ দিয়ে দেন। প্রচণ্ড মন খারাপ করে বাবার হাত ধরে পুতুল যখন রিকশায় উঠতে যাবেন, ঠিক তখনই কেউ একজন তাঁকে পেছন থেকে ডাকল, বলল ফাহমিদা নবী তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছেন। তারপর ফাহমিদা নবী তাঁকে অন্য বিচারক প্যানেলে গান গাওয়ার জন্য পাঠালেন, আর সে পরীক্ষায় পূর্ণ সফল হয়েই পরবর্তী ধাপে উত্তীর্ণ হন তিনি।
গ্রন্থনা: আবদুল ওয়াজেদ