
ভালো-মন্দ, সফল-ব্যর্থ, আলোচিত-সমালোচিত, প্রশংসিত-বিতর্কিত—সব রকমের চলচ্চিত্র নিয়েই আরেকটা বছর পার করেছে হলিউডের চিত্রজগৎ। এই সময়ের মধ্যে রাজনীতি, ইতিহাস, ব্যবসা, প্রযুক্তি, কল্পবিজ্ঞান, আর্থিক ছল, কেলেঙ্কারি, নিপীড়ন, বর্ণবাদী হামলা, সন্ত্রাস-অপরাধ, নারীবাদ, বৈষম্য প্রভৃতি বিষয়কে কেন্দ্র করে নির্মিত নানা স্বাদের ছবি উপভোগ করেছেন দর্শকেরা।
কারিগরি বিবেচনায় হলিউডের ছবিতে একটা বিশেষ পরিবর্তন স্পষ্ট। আর সেটা হলো নতুন প্রযুক্তিতে নির্মিত ছবিগুলোর জনপ্রিয়তা। টিকিটের দাম চড়া হলেও আইম্যাক্স ও ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি) প্রযুক্তির ছবিগুলো ২০১৫ সালে ভালো ব্যবসা করেছে হলিউডে। এসবের মধ্যে স্টার ওয়ার্স: দ্য ফোর্স অ্যাওয়েকেনস ১৮ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়ার পর বৈশ্বিক বক্স অফিসে বাজিমাত করেছে। প্রথম সপ্তাহেই ৫২ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার আয় করে গড়েছে রেকর্ড। অ্যাভেঞ্জারস: এজ অব আলট্রন, ‘হাঙ্গার গেমস’ সিরিজের নতুন ছবি এবং গুড ডাইনোসর ও ইনসাইড আউট ছবিগুলোও উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে।

বছরের বহুল আলোচিত তারকাদের মধ্যে শীর্ষে ছিলেন এ যুগের অভিনেত্রী জেনিফার লরেন্স। দ্য হাঙ্গার গেমস: মকিংজে পার্ট টুর ব্যবসায়িক সাফল্য ছাড়াও তিনি হলিউডে নারীর অবমূল্যায়ন এবং উপার্জনে বৈষম্যের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। এ বছর হলিউডে বর্ণবাদী বৈষম্যের বিরুদ্ধেও উঠেছে প্রতিবাদ।
২০১৫ সালের ব্যবসাসফল ছবিগুলোর তালিকায় ছিল ফিউরিয়াস সেভেন, মিনিয়নস, জুরাসিক ওয়ার্ল্ড ইত্যাদি। আরনল্ড শোয়ার্জেনেগার অভিনীত বিজ্ঞান কল্পকাহিনি টার্মিনেটর: জেনিসিস বেশ শোরগোল তুললেও বক্স অফিসে আশানুরূপ সাফল্য পায়নি। রগরগে থ্রিলার ফিফটি শেডস অব গ্রে উত্তর আমেরিকার বাইরেও ভালো ব্যবসা করেছে। দর্শকদের মন ছুঁয়েছে মঙ্গল গ্রহে অভিযানের কল্পকাহিনি নিয়ে ম্যাট ডেমন অভিনীত দ্য মার্শিয়ান এবং স্নায়ুযুদ্ধের আমলে মার্কিন-রুশ সম্পর্কের কাহিনি নিয়ে নির্মিত টম হ্যাঙ্কস অভিনীত ব্রিজ অব স্পাইজ ছবিগুলো। আর অ্যানিমেশন ছবিগুলোর মধ্যে সাড়া জাগিয়েছে ইনসাইড আউট, মিনিয়নস প্রভৃতি। আরও আলোচনায় ছিল সিনডেরেলা, পিচ পারফেক্ট টু, দ্য ডাইভারজেন্ট সিরিজ: ইনসারজেন্ট, ট্রেনরেক, প্যাপার টাউনস, লাভ অ্যান্ড মার্সি, স্পেকটার, স্পটলাইট ছবি।
২০১৫ সালে কয়েকজন গুণী শিল্পীকে হারিয়েছে হলিউড। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ডক্টর জিভাগো খ্যাত ওমর শরিফ, সোনালি যুগের স্বপ্নকন্যা মরিন ও’হারা, ড্রাকুলা খ্যাত ক্রিস্টোফার লি, দ্য টাইম মেশিন ও দ্য বার্ডস খ্যাত রড টেইলর প্রমুখ।
নতুন বছরে (২০১৬) সম্ভাব্য সাড়া জাগানো ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে কোয়েন্টিন ট্যারেন্টিনোর দ্য হেটফুল এইট, কোয়েন ভাইদের কমেডি ছবি হেইল, সিজার!, লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর দ্য রেভেন্যান্ট, জ্যাক স্নাইডারের ব্যাটম্যান ভার্সেস সুপারম্যান: ডন অব জাস্টিস, জন ফ্যাব্রুর দ্য জাঙ্গল বুক প্রভৃতি।
২০১৬ সালে সুপারহিরোদের নিয়ে নির্মিত ছবির ছড়াছড়ি থাকবে। একুশ শতকের শুরু থেকেই এ ধরনের ছবি তৈরির প্রবণতা বেড়েছে। আর বিজ্ঞান কল্পকাহিনি অবলম্বনে নির্মিত ছবিগুলো ব্যবসায়িক সাফল্যও পাচ্ছে অন্য ছবির তুলনায় বেশি।
হলিউড রিপোর্টার, ভয়েস অব আমেরিকা, লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস ও এএফপি অবলম্বনে