শিল্পকলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জমজমাট আয়োজন

নন্দনমঞ্চে শিল্পীদের সমবেত নৃত্যছবি: শিল্পকলা একাডেমির সৌজন্যে

কবোষ্ণ রোদ ছলকাচ্ছে শিল্পকলা একাডেমির খোলা চত্বরে। পঞ্জিকার হিসাবে আজ ছিল ৬ ফাল্গুন। শুক্রবার ভোরে হালকা কুয়াশা থাকলেও বেলা গড়াতেই ঝলমল করে ওঠে সূর্যের আলো, বইতে থাকে হালকা হিমেল বাতাস। এমন মিষ্টি সকালে উৎসব জমে উঠেছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে।
৪৭ বছর আগে ১৯৭৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি একটি বিশেষ আইনে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। লক্ষ্য শিল্প-সংস্কৃতিতে ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গড়া এবং সংস্কৃতি ও কৃষ্টির উন্নয়ন করা। প্রথম মহাপরিচালক ছিলেন মুস্তাফা নূরউল ইসলাম। কালের বিবর্তনে সারা দেশে ছড়িয়েছে এর কার্যক্রম। দেশের ৬৪টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে জেলা শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম। শুক্রবার সারা দিন নানা আয়োজনে উদ্‌যাপিত হয় একাডেমির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বর্তমান ও সাবেক কর্মী, শিল্পীসহ নানা অঙ্গনের মানুষের উপস্থিতি সেখানে ছিল চোখে পড়ার মতো।

জাতীয় পতাকা ও শিল্পকলা একাডেমির পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দুদিনের আয়োজন

জাতীয় পতাকা ও একাডেমির পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সকাল ১০টায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপনের দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠান শুরু হয়। বিকেলে জাতীয় চিত্রশালার ২ ও ৩ নম্বর গ্যালারিতে একাডেমির সব বিভাগ ও শাখার কার্যক্রমের চিত্র তুলে ধরে সপ্তাহব্যাপী প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়।

আলোকচিত্রে সজ্জিত প্রদর্শনীতে দেখা মেলে শিল্পচর্চায় নিবিড়ভাবে পরিচালিত একাডেমির কার্যক্রমের দৃশ্যকল্প। সন্ধ্যায় ছিল আলোচনা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

যাত্রাশিল্পীদের সঙ্গে প্রধান অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী

একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিসচিব মো. বদরুল আরেফীন। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির সচিব মো. নওসাদ হোসেন। তৃণমূল পর্যায়ে সংস্কৃতিচর্চার প্রসারে বর্তমান সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশের সব উপজেলায় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১০০টি উপজেলায় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। তিনি বলেন, ‘বাঙালির রয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। আমাদের গৌরবময় মহান মুক্তিযুদ্ধ, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, উনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসকে শিল্পরূপে নতুন প্রজন্মের কাছে উপস্থাপন করতে পারে শিল্প-সংস্কৃতি। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যে জাতি নিজেদের শিল্প-সংস্কৃতি যত বেশি ধারণ ও লালন করে, সে জাতি তত বেশি উন্নত।’ আলোচনার পর সাংস্কৃতিক পরিবেশনার শুরুতেই যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করেন সাংস্কৃতিক সংগঠন স্পন্দনের শিল্পীরা। এরপর ছিল একাডেমির শিশুশিল্পীদের দুটি সমবেত গান, দেশের প্রতিষ্ঠিত নৃত্যশিল্পীদের নাচ।

দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে ছিল দলীয় নাচ। ‘হিমালয় থেকে সুন্দরবন’ গানের সঙ্গে নাচ করেন ফারহানা চৌধুরী, অনিক বোস, শহিদুল ইসলাম, স্মিতা দে ও মুনমুন। দলীয় কত্থক নৃত্য পরিবেশন করেন নিলুফার ওয়াহিদ, সাজু আহমেদ ও ইমামা। ধামাইল নৃত্য পরিবেশন করেন দীপা খন্দকার, সেলিনা হক ও সুলতানা হায়দার।

জাতীয় চিত্রশালায় প্রদর্শনী দেখছেন অতিথিরা

মণিপুরি নাচ পরিবেশনায় বসন্তের সন্ধ্যাকে রঙিন করে তোলেন তামান্না রহমান, সুব্রত ও অর্থি। এরপর ছিল নয়নজুড়ানো ওডিশি নাচের উপস্থাপনা। পরিবেশন করেন মিনু হক, বেনজীর সালাম, মৈত্রী সরকার ও জসিম। গৌড়ীয় নৃত্য পরিবেশন করেন র‍্যাচেল প্রিয়াংকা প্যারিস, লাবণী ও মৌসুমী। এরপর ভরতনাট্যম পরিবেশন করেন বেবি রোজারিও, বেলায়েত হোসেন ও সালমা বেগম।

নৃত্য পরিবেশন করছেন প্রতিষ্ঠিত নৃত্যশিল্পীরা

রায়বেঁশে নৃত্য পরিবেশন করেন ফেরদৌস, তুষার, মুননা, শাওন ও শরিফ। ‘এগিয়ে চল আবারও জয় বাংলা বলে’ গানের সুরে সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যাঞ্চল। পরের পরিবেশনায় ‘মঙ্গল হোক এই শতকে’ গানের সুরে নাচ করেন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া সব নৃত্যশিল্পী। আবৃত্তি করেন শিমুল মুস্তাফা। এ ছাড়া একক সংগীত পরিবেশন করেন মমতাজ ও আরমীন মুসা। সব শেষে ছিল অ্যাক্রোবেটিক পরিবেশনা।

আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ

শনিবার সন্ধ্যা ছয়টায় একই মঞ্চে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আর আয়োজনের অংশ হিসেবে জাতীয় চিত্রশালা ভবনের ২ ও ৩ নম্বর গ্যালারিতে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে একাডেমির সব বিভাগ ও শাখার কার্যক্রমের সপ্তাহব্যাপী প্রদর্শনী।