শিল্পীকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হয়

গত ২৯ ডিসেম্বর সকাল ৮টা ১০ মিনিটে দেবলীনা সুরের উপস্থাপনায় এনটিভিতে প্রচারিত হলো সরাসরি গানের অনুষ্ঠান ‘ছুটির দিনের গান’। শিল্পী ছিলেন আতিক হাসান। একটানা প্রায় দুই ঘণ্টা গান করেছেন তিনি। নিজের গান, বিভিন্ন শিল্পীর জনপ্রিয় আধুনিক গান, রবীন্দ্রসংগীত, দেশাত্মবোধক গান, আঞ্চলিক গান—এ সবই ছিলে তাঁর পরিবেশনার তালিকায়। শুরু করেছেন দেশাত্মবোধক গান ‘আমি বাংলায় গান গাই’ দিয়ে। তারপর রবীন্দ্রসংগীত ‘পুরোনো সেই দিনের কথা’, আধুনিক গান ‘আজ এই দিনটাকে’, ‘আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা’, ‘অলির কথা শুনে বকুল হাসে’ ‘আহ্ কী দারুণ দেখতে’, ‘পৃথিবী বদলে গেছে’ ইত্যাদি জনপ্রিয় গান পরিবেশন করেন।

আতিক হাসানের গায়কি ও সুর সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা হলো, কুমার শানু ও খালিদ হাসানের ছায়া যেন আছে তাঁর মধ্যে। একজন শ্রোতা তো ফোনে তাঁকে খালিদ হাসানের সন্তান হিসেবেই সম্বোধন করে ফেলেছেন। গায়কি ছাড়াও তাঁদের উভয়ের নামের শেষেই আছে হাসান, এটিও বোধ হয় শ্রোতাদের বিভ্রান্তির কারণ। শিল্পী অবশ্য বিনয়ের সঙ্গেই সেই ভুল শুধরে দিয়েছেন।

আতিক হাসানের গায়কি অবশ্য খালিদ হাসান আর কুমার শানু শুধু নয়, কিশোর কুমারের সঙ্গেও যথেষ্ট মিল লক্ষণীয়। তবে আমরা মনে করি, এসব ধারণা ও প্রভাব শ্রোতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সহায়ক হলেও একজন শিল্পীর সার্থকতার জন্য মোটেও প্রশংসনীয় নয়। শিল্পীকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হয় তাঁর নিজস্ব ভিত্তির ওপর আপন বৈশিষ্ট্য নিয়ে। আমাদের বিশ্বাস, শিল্পী আতিক হাসান এখন সে পথেই নিষ্ঠার সঙ্গে অগ্রসর হবেন। তাঁর মধ্যে যে বিনয় ও আন্তরিকতা আমরা এই অনুষ্ঠানেও লক্ষ করেছি, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। সামান্য খ্যাতির অহমিকায় দু-একজনকে আমরা দাম্ভিকও হতে দেখেছি, শিল্পী আতিক হাসান নিশ্চয়ই সেই পথে হাঁটবেন না, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। উপস্থাপিকা দেবলীনা শুধু উপস্থাপিকা নন, উনি গায়িকা এবং অভিনেত্রীও বটে। উনি কথা বলার সময় উচ্চারণে আনুনাসিকতা ও জিহ্বায় কিছুটা আড়ষ্টতা আমাদের বিভ্রান্ত করছিল। উনি এ ব্যাপারে অবহিত কি না, জানি না। তবে ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সজাগ হলে ওনার উপস্থাপনা আরও আকর্ষণীয় হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে ফরহাদ আলমের রচনা ও পরিচালনায় মাছরাঙা টিভিতে প্রচারিত হলো নাটক কলসি। অভিনয়ে মামুনুর রশীদ, স্পর্শিয়া প্রমুখ। নাটকটির গল্প সংক্ষেপে এ রকম—খেয়াঘাটের ইজারাদার মামুনুর রশীদ সারা দিন নদীর ঘাটে বসে মানুষের কাছে পারাপারের টাকা তোলে। আর রাতে চলে তার শত অপকর্ম। নদীকেন্দ্রিক মানুষগুলো কেউ তার প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। এর মাঝে ঘোড়ার গাড়িচালক যুবক বাসেদ ভেতরে-ভেতরে ফুঁসতে থাকে। ইজারাদার জানে বাসেদ তার ঔরসের সন্তান, কিন্তু বাসেদ জানে না। ইজারাদার তার এই পরিচয় গোপন করে রাখে। নাটকের শেষ দৃশ্যে প্রতিবাদী বাসেদ একটি কোঁচ নিয়ে এসে ইজারাদারের সামনে দাঁড়ায়। তাকে নদীতীরে ফেলে বুকের ওপর গেঁথে দেয় কোঁচ। মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে ইজারাদার বাসেদকে জানায়, তার পিতৃপরিচয় আছে পাশের চরের ঝোপের নিচে একটি কলসিতে। বাসেদ সেখানে গিয়ে বালু খুঁড়ে কলসির ভেতরে পায় তার মায়ের হাতে কাপড়ে সেলাই করা জন্মপরিচয়। বাসেদ জানতে পারে, এই ইজারাদারই তার বাবা।

এক কথায় বলা যায়, বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত গতানুগতিক নাটকগুলো থেকে এই নাটকের পটভূমি, গল্প, চিত্রনাট্য, অভিনয় সবই আলাদা। শুধু আলাদাই নয়, অভিনব ও নিরীক্ষাধর্মী। এ কারণে আমরা প্রথমেই লেখক ও নির্মাতাকে জানাই সাধুবাদ। নাটকে নদীকেন্দ্রিক জীবন তুলে ধরার কারণে এর দৃশ্যায়ন ও চিত্রায়ণও হয়েছে ব্যতিক্রম। দর্শককে করেছে মুগ্ধ।

প্রশংসার পর দু-একটি দুর্বলতার কথা যদি বলতে হয়, তাহলে বলা যায় যে নদীকেন্দ্রিক জীবনবাস্তবতা নাটকে যতটা সার্থকভাবে এসেছে, গল্পের গাঁথুনি ঠিক ততটা মজবুত হয়নি। গল্প কিছুটা ছাড়া ছাড়া মনে হয়েছে। এ ছাড়া দু-একটি দৃশ্য বাস্তবসম্মত মনে হয়নি। যেমন শেষ দৃশ্যে ইজারাদারকে ধরা ও কোঁচবিদ্ধ করা। বাসেদের কাছে ইজারাদারের আত্মসমর্পণ ও হত্যা সাজানো মনে হয়েছে। আমাদের সমাজে ইজারাদারদের কি এত সহজে করায়ত্ত করা যায়? আর শেষে কলসির ভেতরে সেলাই করে লেখা পিতৃপরিচয় দেওয়ার অনুরোধটিও মনে হয়েছে অতিনাটকীয়।

৩০ ডিসেম্বর দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ওয়াহিদ আলমের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় এনটিভিতে প্রচারিত হলো টেলিছবি পাড়ি। অভিনয় করেছেন লুৎফর রহমান জর্জ, শতাব্দী ওয়াদুদ, মারজুক রাসেল, সাজু খাদেম প্রমুখ।

টেলিছবিটি অবৈধ পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার নির্মম ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে নির্মিত। এখানে একেকটি চরিত্রের একেকটি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে, যা আমাদের সামাজিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। অন্যদিকে এই চরিত্রগুলোরই সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার যে নির্মম চিত্র টেলিছবিটিতে তুলে ধরা হয়েছে, তা আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। ছবিটির পটভূমি, চিত্রনাট্য, ফটোগ্রাফি, অভিনয়—সবই ছিলে আকর্ষণীয়।

পুনঃপ্রচারিত হলেও গণসচেতনতার জন্য এটি গণমাধ্যমে বারবার দেখানো উচিত বলে আমাদের মনে হয়েছে।