শুটিংবাড়ির মালিকেরা তোপের মুখে

অতৃপ্ত ভালোবাসা নাটকে আ খ ম হাসান ও ভাবনা। নাটকটির শুটিং চলেছে মধ্যরাত পর্যন্ত
অতৃপ্ত ভালোবাসা নাটকে আ খ ম হাসান ও ভাবনা। নাটকটির শুটিং চলেছে মধ্যরাত পর্যন্ত

কয়েক বছর ধরে শুটিংয়ে প্রায়ই মানা হয় না কোনো নিয়ম। ঈদের আগে তা তীব্র আকার ধারণ করে। পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীদের এ নিয়ে প্রায়ই অসন্তোষের কথা শোনা যায়। সবার কথা ভেবে নাটকের কয়েকটি সংগঠন মিলে নিয়ম তৈরি করে। কিন্তু সংগঠনের প্রভাবশালী পদে থাকা অভিনয়শিল্পী, পরিচালক ও প্রযোজকের কারণে চাইলেও শুটিংয়ে নিয়ম মানা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানালেন শুটিং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিম। অভিযোগ অস্বীকার করেননি ডিরেক্টরস গিল্ড ও অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি। অনেক রাত পর্যন্ত নাটকের শুটিংয়ের কারণে শুটিংবাড়ির আশপাশের বাসিন্দারাও প্রায়ই অভিযোগ করেন। এসব অভিযোগ মাথায় নিয়ে এত দিন শুটিং চালিয়ে নিলেও এখন আর তা মোটেও সম্ভব নয় বলে জানান আবদুল আলিম। তিনি বলেন, ‘শুটিংবাড়ি পরিচালনা করি বলে আমরা কি মানুষ না? আমাদেরও মর্যাদা আছে। কিন্তু তা অনেক ক্ষেত্রে পাই না। বেশি রাত করে শুটিং করার পর কাউকে কিছু বললে তাঁরাও অদ্ভুত আচরণ করেন। মনে হয়, বাড়িটি তাঁরা ওই দুই দিন কিংবা এক দিনের ভাড়ায় কিনে নিয়েছেন। সবাই কিন্তু নিয়ম অমান্য করেন না। সংগঠনের প্রভাবশালী অভিনয়শিল্পী, পরিচালক ও প্রযোজকেরা এমনটা করেন।’

অভিনয়শিল্পী, পরিচালকের পাশাপাশি শুটিংবাড়ির স্বত্বাধিকারীদেরও ভাবমূর্তির কথা ভাবা উচিত বলে মনে করছেন আবদুল আলিম। কিছুদিন আগেও তাঁর চারটি শুটিংবাড়ি ছিল। নিয়ম না মেনে শুটিং হওয়ার কারণে তিনটি ছেড়ে দিয়েছেন। এখন ‘স্বপ্নিল ১’ নামে একটি শুটিংবাড়ি পরিচালনা করেন তিনি।

উত্তরায় ছোট-বড় মিলিয়ে সংগঠনের নিবন্ধিত ১২টি শুটিংবাড়ি আছে। আর পুরো ঢাকা শহরে আছে ২০টি। ঈদের আগে এসব শুটিংবাড়ির বেশির ভাগ নিয়ম মানা হয় না। টেলিভিশন নাটকের কয়েকটি সংগঠন মিলে রাত সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শুটিংয়ের সময় নির্ধারণ করেন। বছরের অন্যান্য সময় কখনো কখনো মধ্যরাত পর্যন্ত শুটিংয়ের খবর পাওয়া গেলেও ঈদের মাসখানেক আগে এটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়ায় বলে মনে করছেন নাটক–সংশ্লিষ্ট অনেকে।

ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাহউদ্দিন লাভলু শুটিং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদকের কথার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। কয়েক দিন ধরে তিনি উত্তরায় অন্য পরিচালকের নাটকে অভিনয় করছেন। তিনি বলেন, ‘শুটিংবাড়ির স্বত্বাধিকারীদের অভিযোগ মোটেও অমূলক নয়। সত্যি কথা বলতে কী, প্রধান চরিত্রের অভিনয়শিল্পী সঠিক সময়ে শুটিং সেটে না এলে সমস্যা হয়। ঈদের পরই এ নিয়ে আলোচনা করে বিষয়গুলোর সমাধানের চেষ্টা করব। শুটিং হাউস যাঁরা পরিচালনা করেন, তাঁরাও আমাদেরই অংশ। তাঁদের সমস্যা আমাদেরই সমস্যা।’

দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে শুটিংবাড়ির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছেন খলিলুর রহমান। উত্তরায় তাঁর চারটি শুটিংবাড়ি আছে। তিনি বলেন, ‘আগে দেখতাম, ঈদের নাটকের শুটিং হতো ঈদের তিন মাস আগে। আর এখন এক মাস অথবা ১৫ দিন আগে নাটকের শুটিং শুরু করেন সবাই। তাই অনেক তাড়াহুড়ো শুটিং করেন। সকাল থেকে প্রায়ই মধ্যরাত এমনকি ভোর পর্যন্ত শুটিং চলে। এতে শুটিংবাড়ির পাশের লোকজন অভিযোগ করেন।’

উত্তরায় এক বছর আগেও স্ক্রিপ্ট হাউস নামের একটি শুটিংবাড়ির প্রশংসা শোনা যেত অভিনয়শিল্পী ও পরিচালকদের কাছে। এখন আর এই বাড়িতে শুটিং হয় না। শুটিং ফ্লোরগুলো অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান স্ক্রিপ্ট হাউসের স্বত্বাধিকারী ইমরানুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মূলত অনিয়ম করে শুটিং করার কারণে আমরা শুটিংবাড়ি বন্ধ করে দিই।’

দুই বছর ধরে এই সমস্যা প্রকট আকারে হচ্ছে বলে মনে করছেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম। তিনি বলেন, ‘অতি কম বাজেটে নাটক বানানোর চেষ্টায় রাতব্যাপী শুটিং করেন অনেকে। আমাদের এখানকার কিছু সুপারস্টার শিল্পীও এসবে সম্পৃক্ত। এসব শিল্পীর অনেকে দিনের দেড়টা, দুইটা, তিনটার আগে সেটে যান না। অথচ অন্য শিল্পীরা বসে থাকে সকাল থেকে। স্বভাবতই দেরিতে গেলে দেরিতে শুটিং শেষ হবে। কথা শুনতে হবে শুটিংবাড়ি পরিচালনাকারীদের। লিখিত অভিযোগও পেয়েছি। একটা নিয়মের মধ্যে সবাইকে অবশ্যই আসতে হবে।’