সংস্কৃতির জন্য ০.০৯৮ শতাংশ

বাজেটে সংস্কৃতি বরাবরই উপেক্ষিত হয় বলে মনে করছেন সংস্কৃতি অঙ্গনের বরেণ্য ব্যক্তিরা।
প্রথম আলো

এক দশক ধরে সংস্কৃতিকর্মীদের চাওয়া, দেশের মোট বাজেটের ১ শতাংশ হোক সংস্কৃতির। সেই চাওয়া আজও পূরণ হয়নি। ক্ষেত্রবিশেষে সংস্কৃতির বাজেট যেন কোনো কোনো বছরে আগের বছরের চেয়েও কমে যায়। বাজেটে সংস্কৃতি বরাবরই উপেক্ষিত হয় বলে মনে করছেন সংস্কৃতি অঙ্গনের বরেণ্য ব্যক্তিরা। তাঁদের বেশির ভাগেরই বক্তব্য, সংস্কৃতির সবকিছুকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও তা শুধু মুখে মুখেই থেকে যায়। বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায় না। এবারও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৮৭ কোটি টাকা মাত্র, যা প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ০.০৯৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেটে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রস্তাবিত বরাদ্দ ৫৮৭ কোটি টাকা, যা প্রত্যাশার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল, প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ০.০৯৮ শতাংশ। সংস্কৃতির বিকাশের ক্ষেত্রে অপ্রতুল বাজেটের এই খবর শুনে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

অভিনেতা, নির্দেশক, নাট্যকার মামুনুর রশীদ
সংগৃহীত

নাট্যজন মামুনুর রশীদ বাজেটের এ চিত্র দেখে খুবই আশাহত হয়েছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘দেশের শাসকগোষ্ঠীর সংস্কৃতি নিয়ে সব সময় ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। তারা মনে করে, সংস্কৃতি মানেই শুধু গান-বাজনা, নাচ, এই আরকি। এসব হলেও হয়, না হলেও হয়। এ ছাড়া প্রতিটি দলের অভ্যন্তরে ঘাপটি মারা একটা মৌলবাদী শক্তি রয়েছে, তারা খুবই শক্তিশালী। তারা মনে করে, সংস্কৃতিকে এত বিকশিত হতে দেওয়ার কী আছে। এরা কিন্তু বুঝতেই পারছে না, দেশে একটা প্রতিবিপ্লব হয়ে গেছে, এই প্রতিবিপ্লবকে ঠেকানোর জন্য সাংস্কৃতিক আন্দোলনই দরকার।’

বাজেটের এবারের বরাদ্দ দেখে হতাশ হয়েছেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদারও। ১০ বছর ধরেও এ নিয়ে কথা বলে কোনো লাভ হচ্ছে না বলে জানালেন তিনি। এই দৃষ্টিভঙ্গির বদল হওয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে রামেন্দু মজুমদার বললেন, ‘করোনায় তৃণমূল পর্যায়ের সংস্কৃতিকর্মীরা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা মনে করি, সবার সাহায্যার্থে এগিয়ে আসা উচিত। আরেকটা কথা হচ্ছে, আমরা যদি দেশব্যাপী সংস্কৃতির জাগরণ চাই, শুধু রাজধানীকেন্দ্রিক উৎসব দিয়ে হবে না। তৃণমূলে যেসব সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ক্লাব আছে, ওদের প্রণোদনা দিতে হবে। যাতে তারা নিজেদের মতো করে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত করতে পারে।’

রামেন্দু মজুমদার
প্রথম আলো

গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব ঝুনা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদেরও দোষ আছে, আমরা আওয়াজটা ঠিকমতো তুলতে পারি না। সংস্কৃতিতে এবারের বাজেট খুবই দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। ১ শতাংশ বাজেট হোক চিৎকার করেই যাচ্ছি, দেখার যেন কেউ নেই। যা–ও বাজেট হয়, তা দিয়ে সরকারি কর্মকাণ্ড হচ্ছে। বাংলাদেশের সব জাতীয় সংগঠনের জন্য কিন্তু কোনো ধরনের বরাদ্দ নেই। আমাদের বাজেট বাস্তবায়নে আন্দোলন করতে হবে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটকে নেতৃত্ব দিতে হবে। মাঠে নামা ছাড়া বিকল্প কিছুই দেখছি না।’

আমাদেরও দোষ আছে, আমরা আওয়াজটা ঠিকমতো তুলতে পারি না। সংস্কৃতিতে এবারের বাজেট খুবই দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। ১ শতাংশ বাজেট হোক চিৎকার করেই যাচ্ছি, দেখার যেন কেউ নেই। যা–ও বাজেট হয়, তা দিয়ে সরকারি কর্মকাণ্ড হচ্ছে।
ঝুনা চৌধুরী, সাবেক মহাসচিব, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন
নাট্যসংগঠনগুলোর মতে, স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়ার ক্ষেত্রে সংস্কৃতিকর্মীরা ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছেন।
সংগৃহীত

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন জানিয়েছে, সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৫০০ নাট্যসংগঠন মনে করে, স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়ার ক্ষেত্রে সংস্কৃতিকর্মীরা ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছেন। দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাস, ধর্মান্ধতা দূর করে একটি আলোকিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে গ্রাম-শহর, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্র দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশের লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হওয়া আবশ্যক। তাই জাতীয় বাজেটে সংস্কৃতির জন্য বরাদ্দও ন্যূনতমপক্ষে ১ শতাংশ দরকার।