সম্মুখ বাস্তবতার গল্প দেখতে...

সমুদ্র ধ্বংস করা হচ্ছে আবর্জনা ফেলে। ধ্বংস হচ্ছে সামুদ্রিক মাছ ও প্রাণী। নদীকে মেরে ফেলা হচ্ছে। গাছ কেটে শেষ করা হচ্ছে, কাটা হচ্ছে পাহাড়। একটা সময় আসবে, পৃথিবীতে থাকবে একটিমাত্র পাহাড়, একটিমাত্র গাছ। অর্থলোভে সেই গাছও বিক্রি করা হবে, কেটে ফেলা হবে। এর মাধ্যমে প্রকৃতিকে ধ্বংস করে মূলত মানুষেরাই নিঃস্ব হবে। প্রকৃতি ধ্বংস করে আমরা কি নিজেদেরই ধ্বংস করছি? এমন সম্মুখ বাস্তবতার প্রশ্ন নিয়ে হাজির দেশ নাটকের প্রযোজনা জলবাসর। নাটকের নাট্যকার মাসুম রেজা।
সম্মুখ বাস্তবতার এই নাটকের মহড়া দেখতে ৫ জানুয়ারি হাজির হই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহড়াকক্ষে। সময় দেওয়া ছিল সন্ধ্যা সাতটা। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই হাজির অনেকে। চলছে তাঁদের নিয়ে কাজ। কেউ কেউ গুছিয়ে নিচ্ছেন নিজেকে। কেউ আওড়াচ্ছেন সংলাপ। ওই তো বসা নাজনীন হাসান চুমকী। টেলিভিশন পর্দায় যাঁর দেখা মেলে। দরজা ঠেলে ঢুকে পড়লেন বন্যা মির্জা। টেলিভিশন নাটকের তারকারা সন্ধ্যায় মঞ্চেও সময় দেন। এ ভারি ভালো খবর নাট্যাঙ্গনের জন্য। দর্শী চরিত্রে অভিনয় করছেন চুমকী আর দোপাটি চরিত্রে বন্যা। জানা গেল, নাটকে আছেন আরেক টিভি অভিনেত্রী সুষমা সরকারও। নাট্যকার মাসুম রেজা ঘোষণা দিলেন সবাই প্রস্তুত হও। মহড়া শুরু হবে। বলে রাখা ভালো, নাটকটির নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। কিন্তু নাট্যকার হলেও নিজেকে নির্দেশক হিসেবে পরিচয় দিতে অনিচ্ছুক মাসুম রেজা। তাঁর মতে, নাট্যকারের বয়ানে নাটকটি দেখাতেই নির্দেশকের ভূমিকা পালন, আর কিছু নয়।
তিন বানিয়া কন্যা দর্শী, দোপাটি ও দাওয়ার গল্প জলবাসর। এই তিন বোন রুপার গয়না বানিয়ে বিক্রি করেন। তাদের উঠানে প্রাচীন একটি গাছের শাখায় শাখায় লেখা এই তিন বোনের গল্প। এই গল্প একজনই পড়তে পারেন, যাঁর কোনো ছায়া নেই। গাছের শাখায় লেখা কাহিনিতে চিরবন্ধ্যা দর্শীর গর্ভবতী হয়ে ওঠার গল্প পাওয়া যায়। ছয় নামে একটি নদীর ময়ূর ঘাটের জলে ছায়ার সঙ্গে এক জলবাসরে গর্ভবতী
হয় দর্শী। ওদিকে দোপাটি ও দাওয়ার বিয়ে হয় ইয়াকুত মণ্ডলের দুই পুত্র পোখরাজ ও আকিক মণ্ডলের সঙ্গে। দর্শীর গর্ভ নিয়ে সবাই সন্দেহ শুরু করে। সে দায় এসে পড়ে পোখরাজের ওপর। ফলে দোপাটি পোখরাজের ঘর ছেড়ে চলে আসে চান্নি পশরে। এই সংকট নিয়ে এগিয়ে চলে জলবাসর–এর গল্প।
শুরুতে দেখি এই নাটকের গল্প এক সম্মুখ বাস্তবতার, যার সঙ্গে পরিচিত আমরা। তবে এই কাহিনি কিসের? মাসুম রেজা বলেন, ‘এই নাটকের রচনারীতির একটি বিশেষত্ব আছে। এর নামকরণ করেছি আমার শিল্পভাবনার গুরু সেলিম আল দীনের একটি রচনারীতি অনুযায়ী। সেটা হলো “সম্মুখ বাস্তবতা”। আমি তাঁর ধারাকেই এই নাটকের মাধ্যমে অনুসরণ করেছি। আমরা এখন যে অবস্থায় আছি, সে অবস্থায় যদি থাকি তাহলে আসলে আমরা কোন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাচ্ছি, তারই একটি সম্মুখের বাস্তবতাকে আমি এই নাটকে তুলে ধরেছি জাদুকরি গল্পের ভেতর দিয়ে। এটা অনেকটা রূপকথার গল্পের ভেতর দিয়ে এখনকার প্রকৃতি–পরিবেশের অবস্থা তুলে ধরার মতো।’
কথায় কথায় জানালেন, জলবাসর–এর পোস্টার নকশা করছেন চিত্রশিল্পী ও অভিনেতা আফজাল হোসেন। উদ্বোধনী প্রদর্শনী হবে ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি। প্রতিদিন দুটি করে মোট চারটি প্রদর্শনী হবে। সম্মুখ বাস্তবতার গল্প দেখতে হাজির হতে পারেন আপনিও।