সরকারি অনুদানের ছবির বাজেট এখন কোটিতে

২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকারের অনুদান পায় আকরাম খান পরিচালিত এবং আজাদ আবুল কালাম ও জয়া আহসান অভিনীত খাঁচা ছবিটি
২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকারের অনুদান পায় আকরাম খান পরিচালিত এবং আজাদ আবুল কালাম ও জয়া আহসান অভিনীত খাঁচা ছবিটি

সরকারি অনুদানের সিনেমা তৈরির বাজেট এখন এক কোটি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে এমন ঘোষণা দেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এটি চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজকদের জন্য আনন্দের সংবাদ।

এ দেশের অনেক ভালো মানের সিনেমা প্রযোজনা করেছেন আশীর্বাদ চলচ্চিত্রের হাবিবুর রহমান। তাঁর মতে, পেশাদার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান দেখে সরকারি অনুদানের টাকা দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, সরকার আগে যে টাকা দিত, তা দিয়ে একটা সিনেমা হতো না। এখন বরাদ্দ হওয়া এক কোটি টাকায় তা সম্ভব।

তিনি জানান, অনুদানের প্রকল্প সফল না হওয়ার অন্যতম কারণ, এই অর্থের মনিটরিং হয় না। কেউ কেউ টাকা নিয়ে যান, কিন্তু সিনেমা বানান না। তাই ভালো সিনেমা পৃষ্ঠপোষকতার জন্য প্রযোজক দেখে অনুদান দেওয়া উচিত। হাবিবুর রহমান বলেন, কেউ একটা ভালো চিত্রনাট্য লিখে জমা দিলেই যে ভালো সিনেমা বানাতে পারবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। নীতিমালাও সংশোধন করা উচিত। ভালো সিনেমা সরকার যদি বের করতে চায়, তবে অনুদান দিতে হবে প্রযোজককে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে দিলে তারা ভালো পরিচালক ও অভিনয়শিল্পী দিয়ে ছবি বানাতে পারবে। কিন্তু ভালো পরিচালকের কাজ প্রযোজনা করা নয়, মন দিয়ে পরিচালনা করা। জুরিবোর্ডও ঠিক করা উচিত।

এক কোটি টাকা বরাদ্দের বিষয়টি অনেক শুভ সংবাদ মনে করছেন পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম। যাঁরা সিনেমা বানাবেন, সিনেমার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে, জাতীয় পর্যায়ে সিনেমা বিনির্মাণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবেন, তাঁদের অনুদান দেওয়া উচিত। চলচ্চিত্রের জন্য নিবেদিতপ্রাণ এবং দুয়েকটা কাজ করে নিজেকে প্রমাণ করেছেন, এ রকম মানুষও অনুদানের জন্য বিবেচিত হওয়া উচিত।

অনুদান বাছাই কমিটির উদ্দেশে গিয়াসউদ্দিন সেলিম বলেন, বাছাই কমিটিতে যাঁরা থাকবেন, তাঁরা ঠিক চলচ্চিত্রটিকে যেন অনুদান দেন। অন্য কোনো উপায় কাঙ্ক্ষিত নয়। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী সময়মতো অর্থটাও যেন ছাড় পায়, এটার দিকে নজর দিতে হবে। এক কোটি টাকায় তো ছবি হবে না। তবে এক কোটি টাকার অনুদান অনেক বড় অঙ্কের টাকা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটা সিনেমা বানাতে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা লাগে।

অভিনয়শিল্পী জয়া আহসানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিতে সিনেমা থেকে হুমায়ূন আহমেদের গল্প অবলম্বনে দেবী ছবিটি তৈরি হয়েছে। এই অভিনয়শিল্পী অনুদানের টাকায় সিনেমা বানানোকে জনগণের টাকায় সিনেমা বানানো হিসেবে দেখছেন। তাঁর মতে, জনগণের ট্যাক্সে সরকারের পক্ষ থেকে অনুদান দেওয়া হয়। তাই এই অর্থের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে কি না, তা–ও দেখা উচিত। তিনি বলেন, সরকারের উচিত এই অর্থ ঠিক লোকের কাছে যাচ্ছে কি না, তা দেখা। তেমনি অর্থ ঠিকঠাক ব্যবহার করে ছবি তৈরি হচ্ছে কি না, তা–ও খতিয়ে দেখা। সবচেয়ে বড় কথা, স্বজনপ্রীতি যেন না হয়। পরীক্ষিত লোককে অনুদান দিতে হবে। টিকিটের দাম কমাতে হবে। সিনেপ্লেক্স কিংবা বিভিন্ন প্রজেকশন সিস্টেম যাদের আছে, সরকারের পক্ষ থেকে যেন বলে দেওয়া হয়, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবশ্যই অনুদানের ছবি প্রেক্ষাগৃহে চালাতে হবে।

চলচ্চিত্রের কেউ কেউ বলছেন, অনেকের ধারণা, একটা ভালো স্ক্রিপ্ট দিলেই ভালো সিনেমা হয়ে যায়। কিন্তু শুধু ভালো স্ক্রিপ্ট দিলে কখনোই ভালো সিনেমা হয় না। তাই অনুদান বাছাই কমিটিকে এ বিষয়টায় নজর দিতে হবে। জয়া বলেন, ‘সরকারের উচিত সঠিক লোকদের নিয়ে অনুদান কমিটি করা। সংবেদনশীল সব লোক এই অনুদান কমিটিতে থাকবেন, যাঁরা জমা পড়া ছবিগুলো তৈরি হবে কি হবে না, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে পারার যোগ্যতা রাখবেন।’

হাসান আজিজুল হকের গল্পে খাঁচার চিত্রনাট্য করে ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকারের অনুদান পান পরিচালক আকরাম খান। তখন তিনি অনুদানের জন্য পেয়েছিলেন ৩৫ লাখ টাকা। ছবিটি ২০১৭ সালে মুক্তি পায়। অনুদানের সিনেমার বাজেট এক কোটি টাকার ঘোষণায় আনন্দিত আকরাম খান। তিনি বলেন, যাঁদের এই টাকা দেওয়া হচ্ছে, তাঁরা যোগ্য কি না, এটা সবচেয়ে ভালোভাবে দেখতে হবে। চিত্রনাট্য বাছাই দলবাজি কিংবা সিন্ডিকেট প্রভাবমুক্ত যেন থাকে। আরেকটা বিষয়, পরিচালকদের সিনেমা বানানোর পূর্ব–অভিজ্ঞতাও দেখা উচিত।

আকরাম খান বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউট খোলার দিকে নজর দিতে হবে। নইলে ধারাবাহিকভাবে পরিচালক আসবে না। একটা সময় অনুদানের এক কোটি টাকা নেওয়ার লোকও থাকবে না দেশে।