সুচিত্রার শেষ দিনগুলো...

সুচিত্রা সেন।
সুচিত্রা সেন।

হাসপাতালে প্রচণ্ড কড়াকড়ি। নির্দিষ্ট কয়েকজন ছাড়া দেখা করার সুযোগও ছিল না কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালের একটি কেবিনে। মৃত্যুর আগপর্যন্ত কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই এই হাসপাতালে চিকিত্সা নিয়েছিলেন ‘মহানায়িকা’ সুচিত্রা সেন।
১৯৭৮ সালে ‘প্রণয়পাশা’ ছবি করার পর থেকে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। তারপর আর তাঁকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। নিজের বাসভবনে নিরিবিলি জীবনযাপন করে আসছেন তিনি। এই তিন দশকের বেশি সময়ে দেখা করেননি বলিউড, টালিউড বা নামীদামি চিত্র প্রযোজক, পরিচালক বা কলা-কুশলীদের সঙ্গেও। তাঁকে নিয়ে বহুবার ছবি করার প্রস্তাব এলেও ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি।
পঞ্চমবার তিনি চিকিত্সার জন্য কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এ হাসপাতালেই একদিন চিকিত্সা নিয়েছিলেন মহানায়ক উত্তম কুমার। 
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সুচিত্রা সেনের চিকিত্সার জন্য তাঁর কেবিনে হাসপাতালের নির্দিষ্ট কর্মী এবং চিকিত্সক ছাড়া কারও ঢোকার অনুমতি বন্ধ করে দিয়েছিল। সুচিত্রা সেনকে শেষ দেখার সুযোগ পাননি সাধারণ কেউ। তবে দেখা করার অনুমতি পেয়েছিলেন পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অবশ্য মমতা ছাড়া অন্য কাউকে তাঁর কেবিনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
অনেক বিশিষ্টজন সুচিত্রা সেনের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কড়াকড়িতে দেখা করতে পারেননি। অসুস্থ অবস্থার কোনো ছবিও তুলতে পারেনি কোনো সংবাদমাধ্যম। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তে খুশি সুচিত্রার পরিবার। শেষবার হাসপাতাল ছাড়ার সময় সুচিত্রা সেন নিজের হাতে সাদা কাগজে এই হাসপাতালের জন্য একটি প্রশংসাপত্র লিখে দিয়ে যান।
সুচিত্রা সেনের কেবিনে খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিয়োজিত ছিলেন দুজন কর্মী। একজন গৌরভক্ত ও অন্যজন সন্ন্যাসী। এই দুজন ছাড়া অন্য কাউকে খাবার নিয়ে কেবিনে ঢুকতে দিতে নারাজ ছিলেন সুচিত্রা সেন। ফলে এই দুই কর্মীর ছুটিও বাতিল হয়ে যায়। আট ঘণ্টা করে তিনজন সেবিকা সুচিত্রার কেবিনে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরিচিত এই তিনজনের বাইরে আর কারও কেবিনে ঢোকার অনুমতি ছিল না।
‘কেয়া’ নামের একজন সেবিকাকে বেশ পছন্দ করতেন সুচিত্রা সেন। অসুস্থ থাকলে সুচিত্রার সেবা করার ভার পড়ত কেয়ার ওপর। একদিন তাঁকে সুচিত্রা সেন বলেছিলেন, ‘আমি যদি সুযোগ পেতাম, তবে তোকে আমি সিনেমায় নামাতাম।’
হাসপাতালে কাউকে অপরিচিত মনে হলে মুখ ঢেকে রাখতেন তিনি। কারও কাছে আত্মপ্রকাশ করতে চাইতেন না। 
সুচিত্রার ভক্তরাও তাঁকে একনজর দেখার জন্য মরিয়া চেষ্টা করেছেন। ১৩ জানুয়ারি হাসপাতালে সুচিত্রাকে দেখতে চলে এসেছিলেন ভারতীয় বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা। তাঁর দাবি ছিল, সুচিত্রা সেনকে দেখতে সুদূর রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর থেকে ছুটে এসেছেন তিনি। ১৯৬২ সালে একটি শুটিং স্পটে পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে সুচিত্রা সেনের। তাই তিনি দেখা করতে ছুটে এসেছেন এই হাসপাতালে।

মৃত্যুর সঙ্গে ২৫ দিন লড়াই করে অবশেষে হার মানলেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। আজ শুক্রবার সকাল আটটা ২৫ মিনিটে হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি কলকাতার বেসরকারি হাসপাতাল বেলভিউতে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।