ইস্তিরি করলে কাপড় সুন্দর হয় কীভাবে?

জলীয় বাষ্প ও তাপই হলো ইস্তিরির ম্যাজিক
ছবি: প্রথম আলো

ঠান্ডা ও ভারী কোনো ধাতব পদার্থ দিয়ে কাপড়ে চাপ দিলে কোনো কাজ হয় না। কাপড়ের কোঁকড়ানো দাগগুলো একই রকম থেকে যায়। এই কোঁকড়ানো বা ভাঁজের দাগ দূর করতে হলে কাপড়ে সামান্য পানি ছিটিয়ে গরম ইস্তিরি দিয়ে চাপ দিতে হয়। এই জলীয় বাষ্প ও তাপই হলো ইস্তিরির ম্যাজিক।

শুকনা সুতি কাপড় শুষ্ক অবস্থায় অন্তত ১২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রা পর্যন্ত তার আকার অবিকৃত রাখতে পারে, এর ওপরে গেলে কুঁকড়ে যায়। একে আমরা বলতে পারি সুতি কাপড়ের উত্তরণ তাপমাত্রা। যদি জলীয় বাষ্প থাকে, তাহলে এই উত্তরণ তাপমাত্রা নেমে আসে ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে (২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস)।

আমাদের শরীর সব সময় ঘামে, তার সঙ্গে যখন শরীরের প্রায় সাড়ে ৯৮ ডিগ্রি স্বাভাবিক তাপমাত্রা যুক্ত হয়, তখন সেই কাপড় স্থানে স্থানে কুঁচকে যায়। এ জন্যই ইস্তিরি করা সুন্দর কাপড় কুঁচকে যায় দু-এক দিন ব্যবহার করলেই।

এখন একে সোজা করতে হলে সেই একই প্রক্রিয়ায় জলীয় বাষ্প ও তাপ ব্যবহার করতে হবে। আমরা ব্যবহৃত কাপড় প্রথমে ধুয়ে পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিই। এরপর পানি ছিটিয়ে প্রথমে সামান্য সিক্ত করি। এখন গরম ইস্তিরি দিয়ে চাপ দিলে জলীয় বাষ্প ও উত্তরণ তাপমাত্রা অতিক্রান্ত তাপের প্রভাবে কাপড়ের কোঁকড়ানো দাগগুলো সোজা হয়ে যায়।

এ অবস্থায় কাপড় ঠান্ডা হলে তার নতুন অবস্থান বজায় থাকবে। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যে জলীয় বাষ্প ও তাপের প্রভাবে কাপড়ের ভাঁজ নষ্ট হয়ে কুঁকড়ে যায়, সেই একই প্রক্রিয়ার প্রভাবে ইস্তিরি তাকে কোঁকড়ানোমুক্ত সুন্দর রূপ দেয়।

ইস্তিরির সঠিক নিয়মকানুন

রাজধানীর গভর্নমেন্ট কলেজ অব হিউম্যান সায়েন্সের (সাবেক গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ) সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের অধ্যাপক রিনাত ফৌজিয়া কাপড় ইস্তিরির সঠিক নিয়ম নিয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রথম আলোকে। দেখে নিতে পারেন এখানে...

ছবি: পিক্সাবে
  • ইস্তিরি করার জন্য স্ট্যান্ড ব্যবহার করতে হবে। বিছানায় রেখে কাপড় ইস্তিরি করলে কাপড়ের ভাঁজ সহজে যায় না। এতে বারবার ইস্তিরি করায় কাপড়ের রং ও কাপড়ের জমিনের ক্ষতি হয়।

  • অনেক সময় ইস্তিরি পাতে একধরনের দাগ হয়। যা গরম করলেই গলে কাপড়ে লেগে যায়। সাদা ভিনেগার দিয়ে দাগ পরিষ্কার করে নিন।

  • ময়লা কাপড় ইস্তিরি করা একেবারেই উচিত নয়। এতে ময়লা স্থায়ী দাগ হয়ে কাপড়ে লেগে যায়।

  • শার্ট ইস্তিরি করতে হলে কলার থেকে শুরু করুন। এরপর হাতা ও শেষে শরীরের অংশ ইস্তিরি করতে হবে।

  • প্যান্টের ক্ষেত্রে কোমরের অংশ থেকে শুরু করুন। পায়ের অংশের দুপাশের ভাঁজ ঠিক রাখুন।

  • জামা ইস্তিরির জন্য প্রথমে গলা ও হাতার অংশ বেছে নিতে হবে।

  • কাপড় ইস্তিরির পর কিছু সময় হ্যাঙারে ঝুলিয়ে রাখুন।

  • কাপড়ে বোতাম বা চেইন থাকলে তা প্রথমে খুলে নিতে হবে। তবে খোলার উপায় না থাকলে চেইন বা বোতামের ওপর গরম ইস্তিরি ব্যবহার করবেন না। কাপড়ে রং বা মরিচা লেগে যেতে পারে।

  • প্রথমে কৃত্রিম তন্তুর পোশাক দিয়ে শুরু করুন। এরপর সুতি ও শেষে লিনেন কাপড়।

  • গাঢ় রঙের কাপড় সব সময় উল্টে নিয়ে ইস্তিরি করুন। কারণ, সরাসরি গরম তাপে কাপড়ের রং নষ্ট হয়।

  • উলের কাপড় সরাসরি ইস্তিরি করা যাবে না। স্টিম আয়রন দিয়ে ইস্তিরি করা ভালো। সাধারণ ইস্তিরি ব্যবহারে প্রথমে ভেজা সুতির কাপড় উলের কাপড়ের ওপর বিছিয়ে হালকাভাবে ইস্তিরি করতে হবে। বারবার সুতি কাপড় ভিজিয়ে নিতে হবে। বেশি তাপ বা বেশি সময় রাখা যাবে না। উল গলে যাবে।

  • কৃত্রিম তন্তুর পোশাক বা শাড়ি পিন বা বড় ক্লিপ দিয়ে বোর্ডের সঙ্গে আটকে নিতে পারেন। এতে কাপড় এক স্থানে থাকবে ও ভাঁজ দূর করাও সহজ হয়।

  • জরি, চুমকি বা এমব্রয়ডারি করা শাড়ি কাপড় অবশ্যই উল্টে নিতে হবে।