‘একটু থামুন’–এর সম্পাদক ভাইকে এই লেখার আইডিয়া প্রস্তাব করেছিলাম, লেখার অনুমতি দিয়েছেন। তাই ভাই নিয়ে লেখা শুরু করে দিলাম। ব্যাপার হলো, এলাকার এক ছোট ভাই ঢাকায় এসেছে। সে আমাদের ক্যাম্পাস ঘুরে দেখতে চায়। শাহবাগে এসে ফোন করল। আমি উবার, পাঠাও, সিএনজি—কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে ‘হাঁটাও’যোগে শাহবাগ পৌঁছালাম।
ছোট ভাইকে নিয়ে টিএসসিতে যেতেই দেখা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য সংসদের বড় ভাইয়ের সঙ্গে। তাঁর ঝাঁকড়া চুল আর আমার কোঁকড়া চুলের মধ্যে মিল খুঁজে না পেয়ে বোধ হয় হতাশ হলেন। চায়ের দোকানে গেলাম। দেখি, রাজনৈতিক দলের বড় ভাই বসে আছেন। চা খেয়ে বিল দিতে যাব, এমন সময় ভাই বলে উঠলেন, ‘ম্যানার-ট্যানার ভুলে গেছ দেখছি! বড় ভাইয়ের সামনে মানিব্যাগ বের করো!’
আমি মাথা নিচু করে বললাম, ‘না মানে ভাই, এলাকার ছোট ভাই তো...।’
‘তো? তোমার ছোট ভাই মানে তো আমারও ছোট ভাই। যাও, ক্যাম্পাস ঘুরে দেখাও। চায়ের বিল দিয়ে দেব। আর কোনো সমস্যা হলে ফোন দিবা।’
‘জি, ভাই’ বলে টিএসসির ভেতরে ঢুকলাম।
পেছন থেকে কেউ একজন হ্যাঁচকা টান মেরে বলল, ‘কী অবস্থা, ছোট ভাই? আজকে একলা যে! গার্লফ্রেন্ড অভিমান করছে নাকি?’
নিশ্চিত হলাম, এই ভাই আমার প্রেমিকার এলাকার বড় ভাই। আলোচনা সুবিধার হবে না বুঝতে পেরে টিএসসির অডিটরিয়ামে ঢুকলাম। ঢুকতেই বাধা। ‘আরে ছোট ভাই যে! পরের বছর তো মিয়া তোমরা বাইর হয়ে যাবা। তোদের খুব মিস করব রে!’
বুঝতেই পারছেন, তিনি বিভাগের বড় ভাই। র্যাগ ডে উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। আমরা চেয়ারে বসলাম। অনুষ্ঠান শেষ!
অগত্যা হল অভিমুখে যাত্রা করলাম। পেছন থেকে হলের এক বড় ভাই থাবড়া দিয়ে বললেন, ‘কি রে, কোইত্থেইকা আইলি?’
‘এই তো ভাই, ছাত্র পড়াইতে গেছিলাম।’
হলের গেটে ফ্লোরের বড় ভাইয়ের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে এবং বন্ধুর বড় ভাইয়ের মুখের দিকে চেয়ে ফিক করে একটি হাসি দিয়ে হলে ঢুকলাম।
ক্যানটিনে আমাদের স্কুলের বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। খাওয়ার বিল তিনিই দিলেন। এবার আর মানিব্যাগ বের করে ভুল করিনি! ন্যাড়ার বংশধর বলে কথা! ক্যানটিন থেকে বের হতেই কলেজের বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। শুধালেন, ‘তোর তো অনেক দিন খোঁজখবর নাই! শোন, সামনের শুক্রবার কলেজের রি-ইউনিয়ন। তোদের ব্যাচের সবাইকে জানানোর দায়িত্ব তোর। রুমাকে আমি জানাইছি।’
রুমের বড় ভাই আজকে ট্রিট দিচ্ছেন। ভাই ‘ফরেন ক্যাডার’ মেরে দিয়েছেন। মুরগির রান চিবানোর মাঝে ব্যাঘাত। মোবাইল ফোন ‘ভ্রুউউউ’ করছে। বান্ধবীর বড় ভাই ফোন করেছেন, ‘শুনছো কিছু? দোলা নাকি পরীক্ষায় পয়েন্ট সেভেন ফাইভ নম্বর আন্সার করতে পারে নাই। সারাটা বিকেল কান্নাকাটি করছে। দেইখো তো ভাই একটু।’
দেখাদেখি বাদ! আমি পুনরায় রান চিবুতে শুরু করলাম। সকালে ছোট ভাইকে নিয়ে নিজ ফ্যাকাল্টিতে গেলাম। দেখি ফ্যাকাল্টির এক বড় ভাই হন্তদন্ত হয়ে ছুটছেন। জিজ্ঞেস করলাম, ‘বড় ভাই, কী হলো? দৌড়ান কেন?’
‘আর বইলো না, ছোট ভাই। কালকে মিড। আমাদের মিড মানে তো বোঝো, পুরাই বাঁশ। তোমাদের মিডে তো ধরো তিন-চারটা চ্যাপ্টার থাকে। আমাদের প্রায় পুরো বই। কোন পাপে যে এই ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হইছিলাম!’
‘জি, ভাই। আমাদের ডিপার্টমেন্টে তো কোনো প্যারা নাই। মিডে ধরেন একটা চ্যাপ্টার থাকে। তা–ও জোরাজুরি করলে টিচাররা চ্যাপ্টার কমায়া দেয়। মনে করেন যে পরীক্ষা ছাড়াই নম্বর দিয়ে দেয়। কত্ত মজা আমাদের!’
বড় ভাই ‘ও’ বলে হাঁটা শুরু করলেন। বড় ভাইয়ের অবশ্য আরেকটা পরিচয় আছে। তিনি আমার না-হওয়া প্রেমিকার বিভাগের বড় ভাই।
একটু এগোতেই কোচিংয়ের বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। আলাপ সেরে সবুজ চত্বরের পাশ দিয়ে হাঁটছি। জেলাতো বড় ভাই ডাক দিলেন। বিকেলে মিটিং আছে, এলাকার উন্নয়নের মতো কঠিন বিষয়–আশয় নিয়ে। মিটিং শেষে অন্য হলে থাকা চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে নিজ হলে ফিরলাম।
হলে রিডিং রুমের বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। জিজ্ঞেস করলেন, আজ পড়তে আসব কি না। পাশে থাকা ছোট ভাই চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করল, ‘কী বলেন ভাই, ভার্সিটিতেও পড়ালেখা করতে হয়! এ দেখি উচ্চতর বিপদ!’
আমি বললাম, ‘সহমত ভাই!’