কলিগ হিসেবে আপনি কেমন?

অফিসে সবচেয়ে আপন লোক বলতে কলিগ বা সহকর্মীদেরই বোঝায়। সব অফিসেই এই কলিগদের আছে কমন কিছু বৈশিষ্ট্য। অফিসে কাজ না করে কলিগ পর্যবেক্ষণ করে সেসব বৈশিষ্ট্যই জানাচ্ছেন ‘একটু থামুন’–এর লেখক...

ছবি: প্রথম আলো

১. বস কলিগ

প্রতিটা অফিসেই দু–একজন কলিগ থাকেন, যারা বসের পাশাপাশি নিজেদেরও বস ভেবে বসেন। অন্যদের মাথার ওপর ছড়ি ঘোরানোর সূক্ষ্ম চেষ্টা তাদের সব সময়ই থাকে। সূর্যের চেয়ে বালু গরমের মতো এই কলিগেরাও আসল বসের চেয়ে বেশি ভাবগাম্ভীর্যের অধিকারী হন। অফিসের সবাই তাকে সামনাসামনি মান্য করলেও আড়ালে তিনি সবার বিনোদনের খোরাক।

২. কচ্ছপগতির কলিগ

এই কলিগরা ‘স্লো অ্যান্ড স্টেডি’ নীতিতে বিশ্বাসী। কোনো একটা কাজ ধরিয়ে দিয়ে ‘আর্জেন্ট’ বলা হলেও সেটা তাদের কান পর্যন্ত যেতেই ঘড়ির ঘণ্টার কাঁটা দুই-তিন দাগ অতিক্রম করে। তার কম্পিউটার চালু করতে করতে ফার্মগেটে ট্রাফিক পুলিশ তিনটা সিগনাল ছেড়ে দেয়। তাকে কোনো যুবকের ছবি ফটোশপে এডিট করতে দিলে কাজ শেষ করতে করতে ছবির যুবক হয়ে যায় বুড়ো।

ছবি: প্রথম আলো

৩. ভ্রমণপিপাসু কলিগ

প্রতি ৩০ সদস্যের অফিসে কমপক্ষে ৫ জন পাওয়া যাবে, যারা ইবনে বতুতার বংশধর। যেকোনো আড্ডা বা কাজের ফাঁকে তাদের প্রধান চেষ্টা থাকে নিজের একটা অতীব চমৎকার ভ্রমণের বিবরণ দেওয়া। যদি শ্রোতারা আগ্রহী হন তাহলে গল্প বলার ফাঁকে তিনি একটা দলবদ্ধ ট্যুরের প্রস্তাবও দিয়ে বসেন। সবাই আমতা–আমতা করলেও শেষ পর্যন্ত সেই ভ্রমণ-পরিকল্পনা কখনো আলোর মুখ দেখে না। অফিসের প্রয়োজনে কোনো কলিগকে অন্য শহরে যেতে হলে এই কলিগের কাছে সেই শহর সম্পর্কে একগাদা জ্ঞান নিয়ে যেতে হয়।

৪. ভৌতিক কলিগ

অফিসে অবশ্যই একজন থাকবেন, যিনি প্রচণ্ড রকম ভূতে বিশ্বাস করেন। তিনি যে জীবনে কয়েকবার সামনাসামনি ভূত দেখেছেন, সেই গল্প বলার চেষ্টা করেন সময়ে-অসময়ে। এমনি দিনে সবাই তার ভূত-বিশ্বাস নিয়ে বিরক্ত হলেও, বৃষ্টির দিনে এই কলিগের গল্প কদর পায়। সেদিন তিনি খুশিতে ডগমগ থাকেন।

ছবি: প্রথম আলো

৫. মাস্তান কলিগ

এই কলিগরা মূলত ছাত্রজীবনের দাদাভাই। ছাত্রজীবনে তারা কত মারামারি করেছেন, সেই গল্প বুক ফুলিয়ে বলেন সময়ে-অসময়ে। এই গল্প বাকিরা খায়ও বেশি। বেশির ভাগ মারামারির গল্প থাকে অন্যের উপকারের জন্য। এবং তার একটা বিশেষ গল্প থাকে, একবার তিনি প্রায় মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছিলেন। অল্পের জন্য রক্ষা। এই গল্পে কিছুদিন পরপর নতুন নতুন চরিত্রের আবির্ভাব হয়।

৬. রোমিও কলিগ

অফিসে কিছুদিন পরপর আসা নতুন নারী কলিগদের প্রেমে দিওয়ানা থাকেন এই শ্রেণির মানুষেরা। নতুন কোনো নারী কলিগ এলেই রোমিও কলিগেরা তাদের নানাভাবে মুগ্ধ করার চেষ্টা করেন। কিছুদিন চেষ্টা চালানোর পর যখন জানতে পারেন সেই কলিগের বয়ফ্রেন্ড আছে, তখন রোমিও প্রেমিক ঠান্ডা হয়ে যান, আর অপেক্ষা করেন নতুন কোনো নারী কলিগের জন্য।

৭. কাজপাগল কলিগ

অফিসে সবার আগে এসে সবার পরে যাওয়া একজন কলিগ থাকবেই। কাজ থাক বা না থাক তিনি আগে এসে বসে থাকবেন। যাওয়ার সময় পরে যাবেন। ছুটিছাটাও নেন না খুব একটা। অন্য কলিগেরা ভয়ে কিংবা সমীহে এই কলিগকে এড়িয়ে চলেন।

ছবি: প্রথম আলো

৮. প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ কলিগ

অফিসটা ব্যাংক–বীমা কিংবা বুটিক হাউসের হোক না কেন—সব অফিসেই একজন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ থাকেন। তাদের প্রধান কাজ হলো নিজের কাজ ফেলে রেখে কলিগের কম্পিউটার, স্মার্টফোন, ল্যাপটপের ঝামেলা দেখে বেড়ানো। কার সফটওয়্যারে সমস্যা, কার হার্ডওয়্যারে গন্ডগোল—সব তার নখদর্পণে। ইন্টারনেট-দুনিয়া সম্পর্কেও তিনি আশপাশের এক শ জনের চেয়ে ভালো জানেন।

৯. চা-খোর

মোশাররফ করিমের সেই রকম চা খোর নাটকের বাস্তব চরিত্র এই শ্রেণির কলিগেরা। তাদের প্রধান কাজ হলো দিনে ৮-১০ কাপ চা খাওয়া আর অফিসে চা বানানোর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিকে সব সময় দৌড়ের ওপর রাখা।