সারা বিশ্বের নজর এখন ইউক্রেনের দিকে। আর তাই দেশি–বিদেশি সব গণমাধ্যমে আলোচনার অন্যতম বিষয়ও ইউক্রেন। একটা বিষয় অনেকেই খেয়াল করেছেন হয়তো, ইউক্রেনের রাজধানীর নাম একেক মাধ্যমে একেক রকমভাবে উচ্চারণ করা হচ্ছে। তবে ইউক্রেনবাসী তাদের দেশের রাজধানীর নাম উচ্চারণ করে ‘কিয়িভ’, যার ইংরেজি বানান ‘Kyiv’। মূল ইউক্রেনীয় শব্দটি হলো Київ। কিন্তু রুশরা এ শহরকে ডাকে ‘কিয়েভ’, যার ইংরেজি বানান ‘Kiev’।
রুশ উচ্চারণ ও বানানটি এসেছে মূলত রুশ শব্দ Киев থেকে। সোভিয়েত শাসনামলে এবং পরবর্তী সময়ে চলতি শতাব্দীর শুরুর বছরগুলোতে ‘কিয়েভ’ নামটিই ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ফলে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় সে সময়েই। ১৯৭০–এর দশকে পশ্চিমা দেশগুলোতে ‘চিকেন কিয়েভ’ নামের একটি খাবার দারুণ জনপ্রিয়তা পায়, ‘কিয়েভ’ নামটির বিশ্বব্যাপী পরিচিতির পেছনে এ খাবারেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
কিন্তু রাজধানী শহরটিকে কে কী নামে ডাকবে, সেটি এখন অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। ইউক্রেনের জাতীয়তাবাদ ও স্বাধীনতা আন্দোলনকারীরা ‘কিয়েভ’ নামটিকে রুশ আগ্রাসনের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ১৯৯১ সালে স্বাধীন হয় ইউক্রেন। স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই দেশটির সরকার রাষ্ট্রীয় নথি ও কাগজপত্রে সব সময় ‘কিয়িভ’ নামটিই ব্যবহার করে আসছে। ‘কিয়িভ’ নামটিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউক্রেন সরকারের প্রচেষ্টাও ছিল উল্লেখযোগ্য।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউক্রেন ভাষার শিক্ষক আন্দ্রে স্মিতসনিউক বলেন, ‘আমি যখন নতুন কারও সঙ্গে পরিচিত হই, তখন চেষ্টা করি ওই ব্যক্তির নামটা তার নিজের ভাষায় উচ্চারণ করতে। এ জন্যই আমি মনে করি কিভ উচ্চারণ করাই সঠিক। ইউক্রেনবাসী এটিকে তাদের স্বকীয়তা এবং ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করে।’
কিয়িভ এবং কিয়েভ—একই নামের দুটি ভিন্ন উচ্চারণের কারণ হচ্ছে এ অঞ্চলে এক হাজার বছর ধরে মোঙ্গল, লিথুয়ানিয়ান, পোলিশ এবং রুশ সাম্রাজ্যগুলোর প্রভাব। রুশ এবং ইউক্রেনীয়—উভয় ভাষাই পূর্ব স্লোভানিক ভাষা থেকে এসেছে। পোলিশ এবং বুলগেরীয় ভাষার সঙ্গে এ ভাষার পার্থক্য আছে। কারণ, এ দুটি ভাষার উৎপত্তি পশ্চিম স্লোভানিক ভাষা।
নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রুশ এবং স্লোভানিক স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক মনিকা হোয়াইট বলেন, ‘এসব ভাষার উৎপত্তি এক হলেও ভাষার স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে এগুলোর মধ্যে বদল এসেছে।’
বর্তমান ইউক্রেনীয় ভাষায় পোলিশ ভাষার কিছু প্রভাব আছে। ইউক্রেনের কিছু স্বরবর্ণের উচ্চারণ রুশ ভাষা থেকে আলাদা। দেশটির বর্ণমালার কিছু অক্ষরও ব্যতিক্রম এবং শব্দের অর্থে ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে ইউক্রেনীয়রা যখন তাদের মাতৃভাষায় কথা বলে, তখন রুশভাষীদের জন্য সেটা বোঝা বেশ কষ্টকর।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও যাতে রাজধানীর নাম তাদের মতো করেই উচ্চারণ করে, সে জন্য চার বছর আগে ইউক্রেন সরকার ব্যাপক প্রচারণা শুরু করে। #KyivNotKiev হ্যাশটাগ এখনো টুইটারে জনপ্রিয়। আর বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ প্রচারণার পালে আরও হাওয়া লেগেছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান