কে এই ভাইরাল পরিচালক রবার্ট বি ওয়াইডি

ভিডিওর এই ক্লোজিং ক্রেডিট কি চেনা চেনা লাগছে
জিআইএফ: সংগৃহীত

বছর দুয়েক আগে মার্কিন পত্রিকা লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস-এ উপসম্পাদকীয় লিখেছিলেন রবার্ট বি ওয়াইডি। পাঠককে তিনি বলেছিলেন, আপনি গুগলে গিয়ে ‘ডিরেক্টেড বাই’ লিখে খুঁজুন, দেখুন কার নাম আসে। মারটিন স্করসেসে? কুয়েন্টিন টারান্টিনো? স্টিভেন স্পিলবার্গ? বাঘা বাঘা এই চলচ্চিত্র পরিচালকদের ছাপিয়ে শুরুতেই আসবে রবার্ট বি ওয়াইডির নাম। কেন আসে, তা অনেকেই অনুমান করতে পারছেন। অন্তত নামটা পরিচিত মনে হওয়ার কথা।

হলিউড তারকা স্কারলেট জোহানসনের সঙ্গে ওয়াইডি
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

নির্মাতা ও পরিচালক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের রবার্ট বি ওয়াইডির ক্যারিয়ার বেশ সমৃদ্ধ। বিশেষত টিভি অনুষ্ঠান তৈরি করেন তিনি। প্রামাণ্যচিত্র বানিয়েছেন অনেকগুলো। ঝুলিতে অস্কারের মনোনয়নও আছে। তবু সে অর্থে তিনি কিন্তু বিখ্যাত পরিচালক নন। তাতে অবশ্য বিশ্বজোড়া মানুষের কাছে পরিচিত নামে পরিণত হওয়া থেমে থাকেনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে অসংখ্য মজার ও বিদ্রূপাত্মক ভিডিওর শেষে কালো পর্দায় সাদা হরফে ভেসে উঠতে দেখা যায় ‘ডিরেক্টেড বাই রবার্ট বি ওয়াইডি’। সঙ্গে থাকে ‘সিগনেচার ট্র্যাক’। যেমন নিচের ভিডিওটি দেখুন।

একটা মানুষ এক জীবনে এত শত ভিডিও বানিয়েছেন, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং মজার কোনো ভিডিওর শেষে ক্লোজিং ক্রেডিট হিসেবে রবার্ট বি ওয়াইডির নাম জুড়ে দেওয়া একরকম রীতিতে পরিণত হয়েছে। এই রীতির শুরু কোথায়, তা বলা মুশকিল। তবে কোথা থেকে এল, স্বয়ং পরিচালকই তা বলেছেন।

‘কার্ব ইয়োর এনথুসিয়াজম’ টিভি সিরিজটি শুরু হয় ২০০০ সালে
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ক এইচবিওর জন্য ১৯৯৯ সালে ল্যারি ডেভিড: কার্ব ইয়োর এনথুসিয়াজম নামের কমেডি ঘরানার চলচ্চিত্র বানিয়েছিলেন রবার্ট। সেটার সূত্র ধরে ২০০০ সালে ‘কার্ব ইয়োর এনথুসিয়াজম’ নামের টিভি সিরিজ শুরু হয়, গত ডিসেম্বর মাসে যেটার একাদশ সিজন দেখেছেন দর্শক। সিরিজটির প্রতিটি পর্বের চমক থাকে একদম শেষে। আধঘণ্টার অনুষ্ঠানের শেষটা হয় একদম অপ্রত্যাশিতভাবে। তখন মূল চরিত্রে ল্যারি ডেভিডের চেহারায় দেখা যায় অর্থপূর্ণ হাসি। ভাবটা এমন—কী, কেমন দিলাম? আর এই হাসির সঙ্গেই শুরু হয় চিরচেনা সংগীত, যা চলতে থাকে ক্লোজিং ক্রেডিটজুড়ে। এখানে বলে রাখা ভালো, সিরিজটির সিংহভাগ পর্বের লেখক ল্যারি ডেভিড নিজেই, নির্বাহী পরিচালকের ভূমিকাতেও ছিলেন।

‘কার্ব ইয়োর এনথুসিয়াজম’–এর মূল চরিত্রে অভিনয় করা ল্যারি ডেভিডের সঙ্গে ওয়াইডি (ডানে)
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

‘কার্ব ইয়োর এনথুসিয়াজম’ টিভি সিরিজে প্রতিটি সিজনে ১০টি করে এ পর্যন্ত মোট ১১০টি পর্ব প্রচারিত হয়েছে। এর মধ্যে ২৯টি পর্বের পরিচালক রবার্ট বি ওয়াইডি, যেগুলোর বেশির ভাগই শুরুর দিকের। হয়তো সে কারণেই এই মিমগুলোর সঙ্গে রবার্ট বি ওয়াইডির নাম জুড়ে গিয়েছে। যদি কোনো কারণে সিরিজটির অন্য কোনো পরিচালক ভাইরাল হতেন, তবে আজ হয়তো ভিন্ন কাউকে নিয়ে এই লেখা লিখতে হতো।

এই একটি ফ্রেমের কারণে সারা পৃথিবীর মানুষ রবার্ট বি ওয়াইডির নামের সঙ্গে পরিচিত
স্ক্রিনশট: সংগৃহীত

যা হোক, ফিরে আসি লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস-এর উপসম্পাদকীয়তে। রবার্ট সেখানে ‘কার্ব ইয়োর এনথুসিয়াজম’-এর শেষাংশগুলো সম্পর্কে লিখেছেন, অনেকেই হয়তো নিজের সঙ্গে মিল পাবেন, কারণ, জীবনের সেরা পরিকল্পনাও অনেক সময় পুরোপুরি ভেস্তে যায়। তখন আমরা সবাই ল্যারি ডেভিড। ব্যাকগ্রাউন্ডে কেবল ওই সংগীতটা বাজলেই হয়।

মজার ব্যাপার হলো, দীর্ঘদিন পর্যন্ত রবার্ট বি ওয়াইডি জানতেনই না তিনি রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গেছেন। মজার ভিডিওগুলো তাঁর তৈরি ভেবে একসময় ‘মিম কিং’ তকমা পান। বিয়ের প্রস্তাব থেকে শুরু করে কর্মসংস্থান হিসেবে নতুন ‘ফানি’ ভিডিও তৈরির প্রস্তাব পেতে থাকেন।

‘ডিরেক্টেড বাই রবার্ট বি ওয়াইডি’ এখন চোখে পড়ে বিচিত্র সব জায়গায়
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

একসময় হুমকি-ধমকিও আসতে থাকে। হয়তো একজনের ধারণ করা ভিডিওর মূল অংশ কেটে শেষে ‘ডিরেক্টেড বাই রবার্ট বি ওয়াইডি’ অংশ জুড়ে দিয়ে ইউটিউবে ছড়িয়ে দিয়েছে আরেকজন। তখন প্রথমজন রবার্টকে আইনি পদক্ষেপের ভয় দেখিয়ে ভিডিও সরিয়ে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। অথচ তিনি এর কিছুই জানতেন না।

অনেকে অবশ্য নিজেদের করা ভিডিও রবার্টের কাছে পাঠিয়ে বলেছেন, যদি তিনি শেষে ওই বিশেষ অংশটুকু জুড়ে দিতেন। এই কাজটি অবশ্য ‘কার্ব ইয়োর ভিডিও’ নামের ওয়েবসাইটে এমনিতেই করা যায়। বলে রাখি, রবার্টের ভাষ্য অনুযায়ী ওয়েবসাইটটি তৈরিতে তাঁর কোনো ভূমিকা নেই।

নিজের নামে যে টি–শার্ট বেরিয়েছে, তা–ও জানতেন না ওয়াইডি
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

একইভাবে তাঁর নামে টি-শার্ট বিক্রি থেকে শুরু করে বহু ‘ফ্যানপেজ’ পরিচালিত হচ্ছে, যার কিছুই তিনি জানেন না। রবার্ট নিজেই মজা করে লিখেছেন, ইনস্টাগ্রামে দেখলাম আমার নামে খোলা এক অ্যাকাউন্টের অনুসারী ২০ হাজারের বেশি, অথচ আসল মানুষটাকে অনুসরণ করেন মাত্র ৩০০ জন (এখন হয়তো পরিমাণটা বেড়েছে)।

যা হোক, যাঁরা ভিডিওগুলোর সঙ্গে বাজতে থাকা ট্র্যাকটি সম্পর্কে জানতে চান, তাঁদের জন্য বলছি, সেটি ইতালীয় সংগীতায়োজক লুচিয়ানো মিশেলিনির ‘ফ্রোলিক’ থেকে নেওয়া। নিচের ভিডিওতে স্রষ্টা এবং সৃষ্টি—দুটোই পাবেন। তবে ২০১০ সালে থিয়েটার কেন দর্শকশূন্য, সে প্রশ্ন আমাকে করে লাভ নেই।

লেখার শেষে আবারও এই ক্লোজিং ক্রেডিট জুড়ে দেওয়ার লোভ সামলানো গেল না!
জিআইএফ: সংগৃহীত