‘ফ্যাশন’ শুনলে মাথায় যা আসে, ব্যাপারটা তেমন নয়। তবে সম্পর্ক নিবিড়। সে সম্পর্কের বিশ্লেষণে যাচ্ছি। তার আগে চলুন পরিচয়পর্ব সেরে নেওয়া যাক।
চরফ্যাশন এখন ভোলার দক্ষিণের একটি উপজেলা। ‘এখন’ বলছি কারণ এর আগে কখনো নোয়াখালী, কখনো বরিশাল আবার কখনো পটুয়াখালীর সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে আমাদের যে প্রশ্ন, অর্থাৎ চরফ্যাশনের সঙ্গে ফ্যাশনের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় উপজেলার নামকরণের ইতিহাসে।
একসময় অনেকগুলো ছোট চরে বিভক্ত ছিল চরফ্যাশন। ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে এই চরগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেন বরিশালের (তৎকালীন বাকেরগঞ্জ) জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জে এইচ ফ্যাশন। তাঁর নামানুসারেই পরবর্তী সময়ে চরফ্যাশন নামকরণ করা হয় বলে মুঠোফোনে জানালেন চরফ্যাশনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন। সেই সঙ্গে বললেন, জাতীয় তথ্য বাতায়নে চরফ্যাশনের ওয়েব পোর্টালে এ নিয়ে আরও তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
চরফ্যাশনের ওয়েব পোর্টালে পাওয়া যায়, ১৮৮৫ থেকে ১৮৮৭ সালের মধ্যে ওই এলাকার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে একটি বাজার গঠন করেন জে এইচ ফ্যাশন। পরিকল্পনা অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে বাজারটির নাম চরফ্যাশন বাজার করেন মি. ডনোভান। আর এলাকার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বাজারটির নামের সঙ্গে মিলিয়ে পুরো এলাকার নামকরণ করা হয় চরফ্যাশন।
ডনোভান লোকটি কে ছিলেন, তা নিয়ে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। মাদারীপুরে ডনোভান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় রয়েছে। সেটির ওয়েবসাইটের ইতিহাস পাতায় ‘তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক মি. জেটি ডনোভান…’-এর উল্লেখ আছে। আবার গুগল ঘাঁটলে এডওয়ার্ড ওয়েস্টবি ডনোভান নামের এক ব্রিটিশ সামরিক কর্মকর্তার খোঁজ মেলে, যিনি চীন, হংকং এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিয়ন্ত্রণাধীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অঞ্চলগুলোত ব্রিটিশ সেনাদলের প্রধান ছিলেন।
যা হোক, ইতিহাস তো হলো। ফ্যাশনের সম্পর্কও মিলল। এবার বর্তমানে ফেরা যাক। বছর পাঁচেক আগে এই ডিসেম্বরেই একবার চরফ্যাশনে গিয়েছিলাম। বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে সূর্য উৎসবে যোগ দিতে। এলাকার প্রাণকেন্দ্র অর্থাৎ চরফ্যাশন বাজারে যাওয়ার সুযোগ অবশ্য সেবার হয়নি। বেতুয়া লঞ্চঘাটের আশপাশেই কোথাও দুটি দিন কাটিয়েছিলাম আমরা। মানুষজন কম। বেশ নিরিবিলি। চরফ্যাশনের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে চর কুকরিমুকরি আর তারুয়ার কথা বিশেষ করে জানালেন মো. রুহুল আমিন। সেই সঙ্গে ওই অঞ্চলের মহিষের দই, সুপারি, ইলিশ আর মিষ্টি যে বিখ্যাত, তা-ও বললেন।