চিচিঙ্গা, ধুন্দল আর ঝিঙা চেনার সহজ উপায়

বাজার করতে যাওয়াটা আমার মতো অনেকের কাছেই হয়তো বিরাট এক পরীক্ষার নাম। আর সে পরীক্ষা আরও আতঙ্কের হয়ে ওঠে, যখন আমার বউ নির্দেশ দেয়, বাজার থেকে ধুন্দল, চিচিঙ্গা অথবা ঝিঙার ভেতর যেকোনো একটা সবজি নিয়ে আসতে। কিন্তু এই তিনটিকেই আমার মনে হয় যমজ সবজি, যারা শৈশবে কোনো এক বৃক্ষমেলায় গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল। তাই দ্বিধা দূর করতে প্রতিবার বাজারে যাওয়ার আগে গুগল খুলে বসি। ভালো করে বুঝে নিই, কোন সবজি দেখতে কেমন, আর কী রকম তাদের বৈশিষ্ট্য। তবু শেষ রক্ষা হয় না। ঠিকই চিচিঙ্গা ভেবে ধুন্দল বা ঝিঙা ভেবে চিচিঙ্গা বাসায় নিয়ে আসি। তারপরের অবস্থাটা আশা করি কল্পনা করতে পারছেন। শেষবার যেদিন বউয়ের কাছে খুব লাঞ্ছিত হলাম, এক বেলা না খেয়ে থাকতে হলো, সেদিনই কোমর বেঁধে নেমে পড়লাম সবজি চেনার একান্ত মিশনে। সেই ব্যক্তিগত গবেষণার অভিজ্ঞতাই আজ ভাগ করে নিচ্ছি ‘একটু থামুন’–এর পাঠকের সঙ্গে...

চিচিঙ্গা

কোলাজ: একটু থামুন

চিচিঙ্গা হচ্ছে সেই সবজি যে ছোটবেলায় তরমুজ হতে চেয়েছিল, কিন্তু মোটিভেশনের অভাবে হতে পারেনি। তরমুজ হতে না পারলেও তরমুজের মতো ডোরাকাটা একটা ভাব, মানে চিহ্ন ঠিকই রেখে দিয়েছে শরীরে। চিচিঙ্গা চেনার আরেকটা উপায় হলো, এটার গোড়ার দিকে দেখবেন, হালকা একটু বেঁকে আছে। পারিবারিক কঠোর অনুশাসনে থাকলে যা হয় আরকি। তবে বাইরের গঠন যেমনই হোক না কেন, চিচিঙ্গা কিন্তু আলসারের রোগীদের খুব আরাম দেয়। এ ছাড়া যাদের অকালে চুল ঝরে যাচ্ছে বা কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়াবেটিস, জন্ডিসের মতো সমস্যা আছে, তাদের জন্য চিচিঙ্গা খুব উপকারী। এসব ছাড়াও চিচিঙ্গার আরও অনেক উপকারিতা আছে, যেগুলো না খেলে কখনো টের পাবেন না।

ঝিঙা

কোলাজ: একটু থামুন

ঝিঙা চেনার সহজ উপায় হচ্ছে, এই সবজির ওপরের দিকের তুলনায় গোড়ার দিকটা মোটা। বেসবলের ব্যাটের সঙ্গে এর মিল আছে। ওই ব্যাটের আকৃতিও কিন্তু একই রকম। তাই ঝিঙা চিনতে চাইলে বেসবল ব্যাটের ছবিটা মনে মনে কল্পনা করলেই হয়ে যাবে। বেসবল ব্যাটের সঙ্গে আরেকটা জায়গায় মিল আছে ঝিঙার। ব্যাটের মতো ঝিঙাও শক্তিশালী, সবজি হিসেবে আরকি।

কোলাজ: একটু থামুন

তার মানে এই নয় যে ঝিঙা দিয়ে সপাটে বল হাঁকাবেন। আদতে ঝিঙা খেলে রক্তের চিনি নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ওজন কমাতে এটা দারুণ উপকারী। ধুন্দল আর চিচিঙ্গার সঙ্গে ঝিঙার সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো ত্বকে। ঝিঙার ত্বক খসখসে। কিন্তু ঝিঙার এই খসখসে ত্বক কত দিন টিকে থাকে তা বলা মুশকিল, চারদিকে যেভাবে ত্বক মসৃণ করা সাবানের বিজ্ঞাপন প্রচারিত হচ্ছে! তাই ঝিঙা বদলে যাওয়ার আগেই আপনি বদলে যান। পছন্দ না হলেও গরমের দিনে শরীর ঠান্ডা রাখতে আর আঁশ জোগাতে ঝিঙা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

ধুন্দল

কোলাজ: একটু থামুন

ধুন্দলের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় সবজি হিসেবে নয়, শরীর পরিষ্কার করা ‘ছোবা’ হিসেবে। জগতের নিষ্ঠুরতার সঙ্গে ছোটবেলায় প্রথম সেদিন পরিচিত হয়েছিলাম, যেদিন গোসলের সময় শরীর পরিষ্কারের নামে ধুন্দলের ‘ছোবা’ দিয়ে আমার ছাল-চামড়া প্রায় তুলে ফেলা হয়েছিল। বড় হওয়ার পরও তাই ধুন্দল আমার পছন্দের ছিল না। কিন্তু বড় হওয়ার পর জেনেছি, ধুন্দল সবজি হিসেবে অসম্ভব পুষ্টিগুণসম্পন্ন, আর গরমের দিনে পেটকে খুব আরাম দেয়। আপনি ধুন্দল সহজে চিনতে পারবেন তখনই, যখন চিচিঙ্গা ও ঝিঙাকে ঠিকমতো আলাদা করে চিনতে পারবেন। এই দুই সবজি বাদে বাকি যে সবজিটা দেখতে ওদের মতো, সেটাই ধুন্দল হিসেবে বুঝে নেবেন। তারপরও যদি ধুন্দল চিনতে ধন্দে পড়ে যান, তাহলে ধুন্দলের আগার দিকে তাকাবেন। সেখানে ফুলের মতো দেখতে কী যেন একটা থাকে (সম্ভবত ধুন্দলের ফুলেরই অংশ)! ওটা দেখে ধুন্দল চিনতে পারলে আপনি বুঝতে পারবেন, ছোট্ট একটা জীবনে অনেক বড় কিছু অর্জন করে ফেলেছেন। আপনার বাজারমুখী দিনগুলো স্বস্তিকর হোক—এটাই প্রত্যাশা।