চলতি রম্য
যানজটে রাস্তায় বিয়ে পড়ানোর জন্য কাজির ব্যবস্থাও করা হবে
যানজটে নাকাল ঢাকাবাসী। এই মুহূর্তে টেলিভিশনের প্রতিবেদক কী জানাতে পারেন লাইভে? চলুন, সরাসরি দেখে নেওয়া যাক...
সংবাদ পাঠক: আজও প্রতিদিনের মতো সকাল থেকে রাস্তায় থমকে আছে হাজার হাজার মানুষের জীবনযাত্রা। জনজীবনের জীবিকা আর বেঁচে থাকা যেন আজ এই যান ও জটের মধ্যেই পাক খাচ্ছে। শহরের রাস্তাঘাটে যানজটের পরিস্থিতি সরাসরি দেখাতে আপনাদের নিয়ে যাচ্ছি চার রাস্তার মোড়ে, যেখানে আছেন আমাদের সিনিয়র রিপোর্টার পিটু, ক্যামেরায় আছেন চিটু। হ্যাঁ, পিটু, আপনি কি আমাদের চার রাস্তার মোড়ের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাতে পারেন? পিটু, আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?
প্রতিবেদক: ধন্যবাদ সুস্মিতা, আমি শুনতে পাচ্ছি। সুস্মিতা, আপনি দেখতে পাচ্ছেন, আমরা এখন চার রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি। আপনি জানেন, যেখানে চারটি রাস্তা চারদিক থেকে এসে মিলিত হয়ে একে অপরের ওপর দিয়ে চলে গেছে, সেটাই হলো চার রাস্তার মোড়। এখানে আছে চারটি ট্রাফিক সিগন্যাল, আছেন চারজন ট্রাফিক পুলিশ ও একজন সার্জেন্ট। আমরা খেয়াল করে দেখেছি, ট্রাফিক লাইটগুলো কাজ করছে এবং ট্রাফিক পুলিশরাও প্রাণপণ চেষ্টা করছেন গাড়িগুলো লাইনে নিয়ে আসতে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এখানে রাস্তার মধ্যে পুলিশের সঙ্গে গাড়ির চালক-হেলপাররা হাডুডু, ছোঁয়াছুঁয়ি কিংবা দাঁড়িয়াবান্ধার মতো খেলায় মেতে উঠেছেন। কোনো পক্ষই আসলে পেরে উঠছে না। বিধায় রাস্তার মাঝে এক বিশাল জটের সৃষ্টি হয়েছে।
রাস্তার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, ঘটনার সূত্রপাত আনুমানিক সকাল সাড়ে নয়টা থেকে। প্রায় ২০০ গাড়ির চালক হঠাৎ করে কোনো এক অজানা কারণে দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় বেপরোয়া চলতে শুরু করলে এ জটের সৃষ্টি হয়। প্রতিদিন, বিশেষ করে সকাল নয়টার পর থেকে এখানকার চালক ও মানুষেরা এ ধরনের ‘দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্যতায়’ ভুগতে থাকে। আমাদের সঙ্গে আছেন স্থানীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মুখলেস খান। চলুন, তাঁর সঙ্গে কথা বলি। আচ্ছা মুখলেস সাহেব, আপনি বলছিলেন, এখানকার চালকদের মধ্যে কালার ব্লাইন্ডনেসেরও লক্ষণ দেখা গেছে!
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক: ধন্যবাদ, কথা সত্যি। এখানকার ড্রাইভারদের মধ্যে কালার ব্লাইন্ডনেস মানে রং চিনতে না পারার উপসর্গ খেয়াল করা যাচ্ছে। যে কারণে তারা ট্রাফিক লাইটগুলোর সংকেত বুঝতে পারছেন না।
প্রতিবেদক: তো এ থেকে পরিত্রাণ কি নেই?
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক: আছে অবশ্যই...
সংবাদ পাঠক: পিটু, আপনার পেছনে মনে হয় কিছু একটা হয়েছে। ক্যামেরাটা সেখানে নিয়ে যাবেন?
প্রতিবেদক: সুস্মিতা, আপনি দেখতে পাচ্ছেন, দূরেই একজন লোক, যাকে প্রথম দেখায় শিক্ষিত ও ভদ্রলোক বলে মনে হচ্ছে, তাকে ট্রাফিক পুলিশের এক কনস্টেবল রং সাইড দিয়ে গাড়ি চালানোর জন্য ট্রাফিক আইন বোঝানোর ও মানানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু যত দূর বুঝতে পারছি, ভদ্রলোক তা মানতে নারাজ। এখানে ব্যাপারটা বেশ অস্বাভাবিক। আইন না মেনে চলার এই প্রবণতা এখানকার মানুষের মজ্জাগত, এটা স্থানীয় বাসিন্দারা আমাদের আগেই বলেছে।
সুস্মিতা, আপনি জানেন এখন ঘড়িতে দেড়টা বাজে, মানে প্রায় ৩০ মিনিট আগে একটা বেজে গেছে। সকাল থেকে এখানে একটি গাড়িও তাদের প্রধান দুটো গিয়ার, যে দুটো দিয়ে সাধারণত গাড়িকে সামনে ও পেছনে নেওয়া হয়, তার একটিও ব্যবহার করতে পারেননি। তার মানে কয়েক ঘণ্টা ধরে এখানে প্রায় এক হাজার মানুষের কর্মঘণ্টা থমকে আছে। স্কুলগামী শিশুরা গাড়িতেই লেখাপড়া করছে। আপনি দেখতে পাচ্ছেন, এই যানজট ঘিরে ইতিমধ্যে বেশ কিছু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সূচনা হয়েছে। ফেরিওয়ালা ফেরি করছে, পত্রিকাওয়ালারা পত্রিকা বিক্রি করছে। কিছু মানুষকে বলতে শুনেছি, ভবিষ্যতে এখানে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বিয়ে পড়ানোর জন্য কাজির ব্যবস্থাও করা হবে; পাছে যানজটে আটকে কোনো তরুণ-তরুণীর যেন বিয়ের বয়স পার না হয়ে যায়। তো সুস্মিতা, এই ছিল চার রাস্তার মোড়ের সর্বশেষ অবস্থা।
সংবাদ পাঠক: ধন্যবাদ পিটু, যানজটের এই থমকে থাকা চিত্র দেখানোর জন্য। চলে যাচ্ছি পরের সংবাদে। এদিকে...