ঢাকায় যাদের জমি ও ফ্ল্যাট আছে, সবাই ‘কালোটাকার মালিক’। বলে কী! মন্ত্রী মহোদয়ের এমন কথা শুনে একটা অট্টহাসি দিলাম। কারণ, ঢাকায় আমার এসব কিছুই নেই (আসল কথা, করতে পারিনি আরকি)। পকেট থেকে মানিব্যাগটা বের করলাম। সব মিলিয়ে সতেরো শ টাকা আছে। একটা এক হাজার টাকার নোট, একটা পাঁচ শ টাকার নোট এবং দুইটা এক শ টাকার নোট। ভালো করে উল্টেপাল্টে দেখলাম। নাহ্, কোনোটাই কালো না। একটা গোলাপি, একটা সবুজ আর বাকি দুইটা হালকা আকাশি রঙের। ধুর, কী ভাবতে কী ভাবছি!
অফিস শেষে রাস্তায় নামতেই বাড়িওয়ালা, মানে আমার ফ্ল্যাটমালিকের কথা মনে পড়ল। মন্ত্রী মহোদয়ের সূত্রে তিনিও কালোটাকার মালিক। আমার জানামতে, ঢাকায় দুটি পাঁচতলা বাড়ি ছাড়া একটা জমিরও মালিক তিনি। একটা বাড়ি লাল এবং আরেকটা বাড়ি সাদা রঙের। যে-ই ভাবনা, সে-ই কাজ। দেখি, আসল তথ্য পাই কি না।
বাসায় ফিরেই হাত-মুখ ধুয়ে চা-নাশতা খেলাম। পাশের ফ্ল্যাটেই থাকেন বাড়িওয়ালা। আলতো করে তাঁর ফ্ল্যাটের কলবেলে চাপ দিলাম। হাসিমুখে বললাম, ‘আসতে পারি?’
বাড়িওয়ালা পচা আমের মতো মুখ করে বললেন, ‘আসেন।’
শুরু হলো কথোপকথন—
: ভাই, কেমন আছেন?
: এই তো আছি। আপনার খবর কী? হঠাৎ বাসায়। এই, কে আছিস, এদিকে একটু চা-নাশতা দে তো।
: তেমন কিছু না। আসলে একটা বিষয় জানা দরকার। ভাই, আপনি বাড়িটা বানিয়েছেন কীভাবে?
: কোনটা, লালটা না সাদাটা?
: লালটা?
: ওটা আমার ব্যবসার টাকায়।
: আর সাদাটা?
: ওটাও আমার ব্যবসার টাকায়। কিন্তু বিষয়টা কী?
: না মানে...আপনার আসলে ইনকাম সোর্সের বিষয়টা জানা দরকার।
: মানে? হঠাৎ এসব কেন জানতে হবে? আপনাকেই-বা জানাতে হবে কেন?
: মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন। আপনি তো শুনেছেন নিশ্চয়ই...
: আমি কালোটাকার মালিক? আপনার মনে হয় আমি এ রকম? আপনি মিয়া একটা ফাউল। এই, চা-নাশতা আনার দরকার নাই। থাক।
: এত বাজে ব্যবহার করছেন কেন? আমি তো...
: চুপ করেন, মিয়া। আমার বাড়িতে ভাড়া থেকে আমাকে আজেবাজে প্রশ্ন করেন। সাহস তো কম নয়!
: ভাই, ভাড়া দিয়েই তো থাকি। ভয়ের কী আছে?
: আছে মানে। একটু পরই টের পাবেন। এই, দারোয়ানকে ডাক। বল, এরে এখনই আমার ফ্ল্যাট থেকে বের করে দিতে।
: প্লিজ ভাই, এসব করবেন না। এত রাতে আমি কই যাব?
: দেখেন, কোনো সাদা টাকার বাড়িওয়ালা আছে কি না। যান, বের হয়ে যান এক্ষুনি। আর কখনো যাতে না দেখি।
কী বলতে কী বললাম! এই অন্ধকার রাতে বাড়িওয়ালা আমাকে ফ্ল্যাট থেকে বের করে দিলেন! এত নিষ্ঠুরও হয় মানুষ! কালোটাকার উৎস জানতে গিয়ে নিজেই কালো, মানে অন্ধকারে পা বাড়ালাম। অন্ধকার পথ মানে আপনার যেটা ভাবছেন, সেটা নয়। আসলে স্ট্রিট লাইট ছাড়া পথ আরকি। এখন তো সবকিছুই কালো দেখতে পাচ্ছি। চারদিকে শুধু কালো আর কালো। উদ্দেশ্যহীন যাত্রায় একটা গানের প্যারোডি মাথায় ভর করেছে—কালো আমার কালো ওগো, কালোয় ভুবন ভরা, কালোটাকার খবর নিয়ে খেয়ে গেলাম ধরা...!