সয়াবিন তেল দেওয়ার এই তো সময়

আঁকা: জুনায়েদ

দাম্পত্যজীবনে ঝগড়ার বিষয়বস্তুগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কমন নাকি তেল। ঘরে আর যা কিছুই থাক, তেল না থাকলেই লঙ্কাকাণ্ড! যাহোক, এটা তো সবাই জানে যে মানবজীবনে তেলের গুরুত্ব কেবল দাম্পত্যজীবনে ঝগড়া মেটানোর ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়; তেল দিয়ে অনেক মুশকিল আসান হয়। বাজারে এখন কেরোসিন ও ডিজেলের দাম ৬৫ টাকা লিটার, অকটেন প্রতি লিটার ৮৯ টাকা, পেট্রলের দাম লিটারপ্রতি ৮৬ টাকা। তবে রাজা এখন সয়াবিন তেল। এর দাম তো আপনি ভালো করেই জানেন। কারণ, লিটারপ্রতি ১৬০ টাকা দরে সয়াবিন তেল কিনতে কিনতে আমাদের প্রায় সবারই যে ‘তেল’ বের হয়ে যাচ্ছে! তো এই দামি সয়াবিন তেল কি শুধু আমরা খেয়েই যাব? সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিত্যদিনের খাওয়ার উপাদানগুলোর মধ্যে চিনির চেয়েও ক্ষতিকর হলো সয়াবিন তেল! যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, রিভারসাইডের ওই গবেষণা চালানো হয়েছিল ইঁদুরের ওপর। ওতে দেখা যায়, চিনির তুলনায় সয়াবিন তেল গ্রহণে শরীরে চর্বি জমে বেশি এবং ওজনও যায় বেড়ে। তাই এই তেল বরং আমরা জায়গামতো দিয়ে দেখতে পারি। বলা তো যায় না, দামি সয়াবিন দিয়ে হয়তো অনেক জটই খুলে যেতে পারে!

মোটিভেশনাল স্পিকাররা মুখে না বললেও আমরা তো এটা ধরেই নিই—যে যত বেশি তেল দিতে পারে, জীবনে সে তত বেশি সফল। আর নিজেরও তেল থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাঝেমধ্যেই আমরা বলি, ‘না ভাই, এত তেল নাই যে এই সাতসকালে/ভরদুপুরে/ভরসন্ধ্যায়/ মাঝরাতে...!’ আরব দেশগুলোর দিকে তাকান, তেল আছে বলেই তাদের কেমন রমরমা! তবে তেল থাকলে আপনাকে কিন্তু বেশ সাবধান থাকতে হবে! কারণ, আপনি অধিক তেলের অধিকারী হলে যখন–তখন যেকোনো শক্তিধর আপনাকে আক্রমণ করে বসতে পারে।

আঁকা: জুনায়েদ

ডিমভাজি থেকে শুরু করে অ্যারোপ্লেন—সবই চলে তেলে। ক্লাস ফাইভে ডাবলু ফার্স্ট হলো গাবলুর চেয়ে ১ নম্বর বেশি পেয়ে। তখন গাবলু স্যারকে তেলটেল দিয়ে ২ নম্বর বাড়িয়ে হয়ে গেল ফার্স্ট! রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে ঈদের টিকিট কাটার সময় টিকিটওয়ালা—কাকে তেল মারতে হয় না?

আমি কিন্তু ভাই এই তেল মারামারির মধ্যে নেই! এই তেল মারা জিনিসটা আমি একদম সহ্য করতে পারি না। এই লেখা প্রকাশের জন্য আমি সম্পাদককে কোনো তেলটেল মারিনি।

আবার মাঝেমধ্যে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই তেল দিতে হয় লোকজনকে। আমাদের পাড়ার আপন ভাই, ব্যাটিং-বোলিং পারতেন না কিছুই। কিন্তু আগে ব্যাট করতে নামবেন। আগে বল করতে যাবেন। কারণ, ব্যাট-বল দুটোই যে তাঁর। যে তাঁর বিরোধিতা করবে, পরদিন থেকে তাকে আর খেলায় নেওয়া হবে না। এই তাঁর নীতি। তাই তাঁর সঙ্গে দেখা হলে তিনি কত দারুণ ব্যাটিং করেন, তাঁর বোলিং অ্যাকশনটা কী দুর্দান্ত—এসব বলে তেল মারতে হতো। তা ছাড়া তাঁর মতো সংগঠক, ক্রীড়ামোদী, স্নেহবৎসল, উদার মানুষ যে কতটা বিরল, সেটাও বলতে হতো রোজ রোজ।

আমি কিন্তু ভাই এই তেল মারামারির মধ্যে নেই! এই তেল মারা জিনিসটা আমি একদম সহ্য করতে পারি না। এই লেখা প্রকাশের জন্য আমি সম্পাদককে কোনো তেলটেল মারিনি। ‘একটু থামুন’ সম্পাদক কিন্তু বড়ই ভালো মানুষ। তাঁর মতো রুচিশীল, রসবোধসম্পন্ন, ব্যক্তিত্বপূর্ণ, দেশ ও জাতি নিয়ে চিন্তাশীল মানুষ আমি খুব কমই দেখেছি। তিনি তাঁর প্রগাঢ় ব্যক্তিত্ব ও রুচিশীলতার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিকালে ‘একটু থামুন’ যেভাবে সম্পাদনা করে এসেছেন, তা বরাবরই আমাকে অবাক করে। ভাইয়ের জন্য শুভকামনা।