এই ধরাধামে সবকিছুই পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বিশ্বাস হয় না? আচ্ছা, আমি বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে প্রমাণ করে দেখাচ্ছি।
কিছুদিন আগে জনপ্রিয় এক পত্রিকায় বড়ই কৌতূহলোদ্দীপক এক ঘটনার কথা পড়েছিলাম। কোথায় যেন, আমেরিকা নাকি আফ্রিকা মনে পড়ছে না। এক জঙ্গল ছিল। ঘন গাছগাছালি ও নানাবিধ প্রাণীতে ভরা। সেখানে বাস করত এক প্রজাতির মাছি। একদম একরত্তি, সারাক্ষণই ভোঁ ভোঁ করে। একেবারেই অপ্রয়োজনীয় এক প্রাণী। সর্বোপরি, তারা সবাইকে কামড়ায়—মানুষ, জীবজন্তু কাউকেই বাদ রাখে না।
মানুষের শরীরে ফুসকুড়ি উঠে যায় এদের কামড়ে। তো মানুষ স্থির করল, মাছিগুলোকে নির্বংশ করতে হবে। ডিডিটি-জাতীয় কী একটা পাউডার ছড়াল তারা জঙ্গলে। সব মাছি মরে ভূত হয়ে গেল। এরপর কী হয়েছিল জানেন? খুবই ভয়াবহ এক ব্যাপার।
অচিরেই এই জঙ্গল থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল এক জাতের ছোট ছোট পাখি, যাদের প্রধান খাদ্য ছিল ওই মাছি। এরপর হারিয়ে গেল বড় পাখির দল, যারা ওই ছোট ছোট পাখি ধরে ধরে খেত। পাখিকুলের অনুপস্থিতিতে ক্ষুদ্রাকৃতির নানাবিধ কীটপতঙ্গের সংখ্যা বেড়ে উঠল প্রবলভাবে। আগে এই কীটপতঙ্গগুলো পাখিদের ভয় পেত খুব।
তো অলক্ষুণে এই কীটপতঙ্গের পাল ঘাস-পাতাসহ সব শ্যামলিমা কুরে কুরে খেয়ে সাফ করে ফেলল। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল ঘাস, উধাও হয়ে গেল দুই প্রজাতির হরিণ—ঘাস ছাড়া জীবনধারণ যাদের পক্ষে সম্ভব নয়। বিলুপ্ত হতে শুরু করল শিকারি প্রাণীগুলোও—বাঘ, জাগুয়ার। হরিণ ছাড়া তাদের অভুক্ত থাকতে হয় যে।
কিছুদিন পর জঙ্গলটি নিষ্প্রাণ হতে শুরু করল। তারপর একদিন এর ওপর দিয়ে বয়ে গেল শুকনা, গরম হাওয়া। জঙ্গলের জায়গায় এখন মরুভূমি।
খুদে এক মাছির কারণে কী লঙ্কাকাণ্ডটাই না ঘটে গেল…!
গল্পটা বললাম এই কথা প্রমাণ করতে যে সবকিছুই একটা ‘চেইন’-এর সঙ্গে যুক্ত। এই যে দেখুন, সভ্যতার অগ্রগতি কেন হচ্ছে? হচ্ছে, কারণ নতুন নতুন কলকারখানা বানানো হচ্ছে হরদম, সেসবে উৎপাদন করা হচ্ছে নতুন নতুন সব জিনিস। নতুন নতুন জিনিস বানানো সম্ভব হচ্ছে কীভাবে? বিজ্ঞান এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে।
বিজ্ঞান কীভাবে সামনে এগিয়ে যেতে পারছে? বিজ্ঞানী নিত্যনতুন আইডিয়ার জন্ম দিচ্ছেন। বিজ্ঞানী নতুন নতুন আইডিয়া দিচ্ছেন কীভাবে? তিনি বসে বসে চিন্তা করেন, রাতে ঘুমান না। রাতে তিনি ঘুমান না কেন? এই মুহূর্তে আমি তাঁর জানালার নিচে দাঁড়িয়ে গান গাইছি।
আমি গান গাইছি কেন? কারণ, পান করেছি।
এখন আমি আপনাদের একটা প্রশ্ন করতে চাই, সামগ্রিক পারস্পরিক সম্পর্কের এই সার্বিক ব্যাপারটি মাথায় রেখে আমাকে বলুন তো, একটি দিনও পান না করার অধিকার আমার আছে?
না, নেই। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে ইতিহাস আমাকে ক্ষমা করবে না।
অনুবাদ: মাসুদ মাহমুদ