সিডনি অপেরা হাউস শুধু সিডনি শহরের নয়; বরং পুরো অস্ট্রেলিয়ার প্রতীক হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বন্দরের এ অপেরা হাউস বিশ্বের কোটি কোটি পর্যটকের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
সিডনি অপেরা হাউস নির্মাণের উদ্দেশ্যে ১৯৫৭ সালে একটি নকশা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ২৩৩টি নকশার মধ্য থেকে বাছাই করা হয় ড্যানিশ স্থপতি জর্ন উটজনের নকশাটি এবং তাঁকে দেওয়া হয় মূল নকশা প্রণয়নের দায়িত্ব।
অপেরা হাউসটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৫৯ সালে। ১৯৬৩ সালের ২৬ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়া দিবসে উদ্বোধন করা হবে বলে ঘোষণা করা হলেও এর নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯৭৩ সালে। ১৯৫৭ সালে অপেরা হাউসটির নির্মাণ ব্যয় ধরা ছিল ৭ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু প্রকল্পটি ১০ বছর বিলম্বিত হওয়ায় এর জন্য সরকারের ব্যয় হয় ১০২ মিলিয়ন ডলার।
প্রকল্পটি ব্যয়বহুল হয়ে উঠলে এবং উটজনের নকশায় কিছু ত্রুটি ধরা পড়লে নিউ সাউথ ওয়েলস সরকারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ফলে ১৯৬৬ সালে তিনি প্রকল্পের কাজ ফেলে চলে যান। পরবর্তী সময়ে পিটার হল নামের এক স্থপতির অধীন অবশিষ্ট কাজ সমাপ্ত করা হয়।
১৯৭৩ সালের ২০ অক্টোবর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ আধুনিক স্থাপত্যকলার অনন্য এ নিদর্শন উদ্বোধন করেন। সিডনি অপেরা হাউস উদ্বোধনের সময় বিপুলসংখ্যক লোক উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সিডনি অপেরা হাউসের নকশাকার জর্ন উটজনকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এমনকি অনুষ্ঠানের কোথাও তাঁর নামও উল্লেখ করা হয়নি।
প্রশান্ত মহাসাগরের পাড়ে প্রায় সাড়ে চার একর জায়গার ওপর নৌকার পাল আকৃতি স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয়। স্থাপনাটির দৈর্ঘ্য ৬০০ ফুট ও প্রস্থ ৩৯৪ ফুট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে স্থাপনাটির সর্বোচ্চ স্থানটির উচ্চতা ২১৩ ফুট, যা প্রায় ২২ তলা ভবনের সমান উঁচু।
সিডনি অপেরা হাউসকে বহুমুখী শিল্পকলা প্রদর্শনের মঞ্চ বলা যেতে পারে। এর মধ্যে আছে একাধিক মিলনায়তন ও অনুষ্ঠানের স্থান। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশে আছে কনসার্ট হল। এর ধারণক্ষমতা প্রায় ২ হাজার ৭০০ জন। এ ছাড়া এতে আছে ১ হাজার ৫০৭ আসনের অপেরা থিয়েটার, ৫৪৪ আসনের ড্রামা থিয়েটার, ৩৯৮ আসনের প্লে হাউস ও ৪০০ লোক একসঙ্গে কাজ করার মতো একটি স্টুডিও। খাবার জায়গা ও কেনাকাটার জন্য বেশ কিছু দোকানও আছে সেখানে।
সিডনির অপেরা হাউসে প্রতিবছর তিন হাজারের বেশি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এসব অনুষ্ঠানে প্রায় ২০ লাখ দর্শকের আগমন ঘটে। এ ছাড়া অপেরা হাউসের বাইরে প্রতিদিন নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রতিবছর প্রায় ৮০ লাখ পর্যটক শুধু এ স্থাপনা দেখতে সিডনিতে যান। ২০০৭ সালে স্থাপনাটিকে ইউনেসকো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিকে বলা হয় ‘সিটি অব কালারস’। সারা বছরই কোনো না কোনো উৎসব লেগে থাকে এ শহরে। এসব উৎসবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সিডনি অপেরা হাউসের দেয়ালে ও ছাদে খেলা করে বিভিন্ন রঙের আলো।