আন্ডা শব্দটা অবমাননাকর

হঠাৎই বেসামাল দাম বেড়েছে ডিমের। প্রতিদিনের চেনা পরিচিত ‘মাই ডিয়ার টাইপ’ ডিমটা যেন চলে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সিন্ডিকেট, নাকি রাজনৈতিক কারণ? এসব নিয়েই ফার্মের এক লাল ডিমের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন শরীফ মজুমদার

কার্টুন: এস এম রাকিবুর রহমান

ডিমের দাম তো রেকর্ড করল। সময়টা কেমন উপভোগ করছেন?

অবশ্যই এনজয় করছি। আমরা যে ‘টেকেন ফর গ্রান্টেড’ না, এটা আপনাদের বোঝা উচিত। তবে ‘দাম’ শব্দটাতে আপত্তি আছে। ইউ বেটার সে ‘ভ্যালু’ বেড়েছে।

আপনার কী মনে হয়, এত দিন লোকে আপনাদের অবহেলা করত?

অফকোর্স! দেখেন, অনেকেই আমাদের ‘আন্ডা’ বলে। শব্দটা যথেষ্ট অবমাননাকর। আই হেট দিস! আমরা সন্দেহ করি, আন্ডাররেটেড ওয়ার্ডটার অরিজিন নিশ্চয়ই এই আন্ডা। খেয়াল করে দেখেন। ডিমের মতো কম দামি বোঝাতেই হয়তো আন্ডার-রেটেড বলা হয়। অতএব আন্ডা বলে তো আপনি আমাদের আন্ডারএস্টিমেট করতে পারেন না। আমি আপনাকে কিছু ফ্যাক্টস দেখাই। দেখবেন, কাউকে ‘গরিব’ বোঝানোর জন্য বলা হয় ‘দিন আনে দিন খায়’। আর ব্যাচেলরদের জন্য বলা হয়, তারা ‘ডিম আনে ডিম খায়’! মানে কী? ডিম কি একটা গরিবি খাবার?

বলতে চাচ্ছেন যে আপনাদের দাম আগে কম ছিল বলেই ভ্যালু কম ছিল?

ডেফিনেটলি! ভ্যালু কম থাকায়ই তো আমাদের সবাই আলু ভাবত। অথচ দিনের পর দিন কুসুমটা বিলিয়ে দিয়ে আসছি আমরা। আর আপনাদের এত যা-তা কুকিং সেন্স যে, যেখানে-সেখানে একটা ডিম ভেঙে দিয়ে দেন। আশ্চর্য! সবজির সাথে ডিম, শুঁটকির সাথে ডিম, মাংসের সাথে ডিম…আরে! আমরা কি আলু, যে যেখানে–সেখানে দেবেন?

আহা, এটা তো একধরনের জনপ্রিয়তা। মানুষের ভালোবাসাও বলতে পারেন। আপনার হতাশার জায়গাটা ঠিক বুঝতে পারছি না।

খোসাটা নিংড়ে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন—সব দিয়েও কেবল মানুষের অবহেলাই পেয়ে আসছি। এক ‘হাট্টিমাটিম টিম তারা মাঠে পাড়ে ডিম’ ছাড়া আপনি ডিম নিয়ে কোনো কবিতাই পাবেন না। ‘কুসুমের মতো কোমল’—এই উপমা ছাড়া আমাদের নিয়ে আর একটা সুন্দর কথা পাবেন? বলেন? আমাদের নিয়ে কোনো গল্প নাই। অথচ ‘নুনের মতো ভালোবাসা’র মতো ‘ডিমের মতো ভালোবাসা’ নামেও তো কোনো গল্প থাকতে পারত। আপনাদের পরীক্ষায় ইভেন গরু নিয়েও রচনা আসে। অথচ ‘ডিম: সৃষ্টির এক মহা আশীর্বাদ’ নামে কোনো রচনা কোনো দিনও দেখলাম না। বৃষ্টি, জোছনা, আকাশ, বাতাস—এমন সব ননসেন্স জিনিস নিয়েই আপনাদের সব গান। আপনি প্রতি বেলা এই সব ননসেন্স খান, নাকি ডিম খান? তাহলে ডিম নিয়ে কেন একটা রোমান্টিক গান নেই?

তাদের জন্য আমাদের অবশ্যই ডিমপ্যাথি আছে। যত যা-ই বলি, সাধারণ মানুষের কথা ভাবলেই মনে হয় দাম এত বাড়া উচিত হয়নি।

আপনি বোধ হয় রেগে যাচ্ছেন। বিষয়টা আসলে…

লেট মি ফিনিশ! যেখানে-সেখানে যার-তার সাথে দিয়ে দিয়ে আমাদের আইডেন্টিটি ক্রাইসিস হয়ে গেছে! আরও আছে। মানুষ পরীক্ষার কেউ শূন্য পেলে তাকে বলবে, ‘ডিম পেয়েছে, আন্ডা পেয়েছে।’ হোয়াট ইজ দিস! কোথায় ডিম আর কোথায় শূন্য! কেউ খারাপ কিছু করলেই আবার তাকে ডিম ছুড়ে মারবে। হোয়াই ম্যান! সব খারাপে ডিমই কেন? দাম কম, তাই তো, না?

আপনার ডিজঅ্যাপয়েন্টমেন্টের জায়গাটা বুঝতে পেরেছি। বাট দাম বাড়ায় দিন শেষে কষ্টটা তো সাধারণ মানুষের। বলতে গেলে তাদের শেষ ভরসা ছিল ডিম।

বুঝি। তাদের জন্য আমাদের অবশ্যই ডিমপ্যাথি আছে। যত যা-ই বলি, সাধারণ মানুষের কথা ভাবলেই মনে হয় দাম এত বাড়া উচিত হয়নি।

কেন দাম বেড়েছে বলে মনে করেন? ইদানীং সিন্ডিকেট…

ও হ্যাঁ! যা-ই বলেন। সিন্ডিকেটটা দারুণ করেছে। অ্যালেন স্বপন যা দেখাল…

ডিমের সিন্ডিকেটে অ্যালেন স্বপন!

বলেন কী! ডিমের সিন্ডিকেটে অ্যালেন স্বপনও আছে নাকি? এটা তো ব্রেকিং নিউজ!

আরে ভাই আমি তো চরকির ওয়েব সিরিজ—সিন্ডিকেটের কথা বলছিলাম। আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা, যে ডিমের সিন্ডিকেট নিয়ে বলব! আমার গায়ে একটাই খোসা ভাই। অকালে কুসুম হারানোর ভয় আমারও আছে। সিন্ডিকেট নিয়ে আমার একটাই বক্তব্য—নো কমেন্টস।

আরও পড়ুন