মশা মারার অকেজো ধোঁয়া কি বিটিভির সংগীতানুষ্ঠানে ব্যবহার করা হবে?

মশা নিধনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ছিটানো হচ্ছে ওষুধ
ছবি: প্রথম আলো

এ কারণেই কি কবিগুরু লিখেছিলেন, ‘আমি জেনেশুনে বিষ করেছি পান...!’

কোন কারণের কথা বলছি? হাতে মশা মারার ব্যাট আছে তো? না থাকলে কয়েল জ্বালিয়ে বসুন; আপনার জন্য খবর আছে! খবরটা হলো, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র, কর্মকর্তা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলররা শিখে এসেছেন, ধোঁয়া দিয়ে মশা মারার পদ্ধতি (ফগিংয়ের মাধ্যমে পরিপক্ব মশা নিধন) ভুল। এ পদ্ধতিতে মশা তো মরেই না, শুধু অর্থেরই অপচয় হয়। অথচ বিষয়টা জানার পরও এই পদ্ধতিতে মশা মারার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি। কারণ, ধোঁয়া দিয়ে মশা মারতে আগে যে কীটনাশক কেনা হয়েছিল, তা এখনো শেষ হয়নি। এখানেই শেষ নয়, এ পদ্ধতিতে মশা মারতে আরও প্রায় ছয় কোটি টাকার কীটনাশক আমদানি করা হচ্ছে। এখন বলুন, কবিগুরুকে টেনে আনা কি ভুল হয়েছে?

যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি শহরের ডেড কাউন্টিতে মশা নিধন বিষয়ে তালিম নিচ্ছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

ধোঁয়া দিয়ে মশা মারতে ব্যবহার করা হয় ম্যালাথিয়ন নামের এক কীটনাশক। ঢাকা উত্তর সিটির ভান্ডার ও ক্রয় শাখার কর্মকর্তারা জানান, চীন থেকে আরও ম্যালাথিয়ন আমদানি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কীটনাশকটি শিপমেন্টও করে বসে আছে। ব্যস, তাহলে আর কী? পয়সা নিশ্চয়ই ওদিকে হজম হয়ে যাবে, এদিকে খেল কি খতম হবে? উত্তরটা ভালো জানেন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম।

গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি শহর পরিদর্শনের পর ঢাকায় মশা নিধন পদ্ধতিতে গলদ আছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘আমরা এত দিন ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। তাতে মশা তো ধ্বংস হয়নি, বরং অর্থের অপচয় হয়েছে।’

অতএব ইহা প্রমাণিত যে প্রায় ছয় কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। কিন্তু না, বুদ্ধি থাকলে উপায় হয়। এই যে কীটনাশক আমদানি করা হচ্ছে, তা তো ধোঁয়া হিসেবেই ছড়িয়ে দেওয়া হবে শহরের অলিতে–গলিতে। এখন এই ধোঁয়াই যদি অন্য কাজে লাগানো যায়, তাহলে ছয় কোটি না হলেও হাজার ছয়েক টাকা যে আয় করা যাবে, তা নিশ্চিত। কীভাবে? চলুন, দেখে নেওয়া যাক।

১. বিটিভির সংগীতানুষ্ঠানে

বিটিভির সংগীতানুষ্ঠানে স্বয়ং মেয়র গান গাইলে মন্দ হবে না
গ্রাফিকস: একটু থামুন

ছোটবেলায় বিটিভির সংগীতানুষ্ঠান মানেই ছিল ধোঁয়ার ভেলকিবাজি। সেটা রবীন্দ্রসংগীত হোক আর ব্যান্ডের গান; ধোঁয়ার কোনো বিকল্প ছিল না। ধোঁয়ার মধ্যে লুকোচুরি খেলে গান গেয়েছেন কত না বিখ্যাত শিল্পী! কার্বন ডাই–অক্সাইড ও শুষ্ক বরফ দিয়ে তৈরি এই ধোঁয়াকে বলা হয় ‘থিয়েট্রিক্যাল স্মোক অ্যান্ড ফগ’। আজকাল বিটিভি দেখা হয় না বললেই চলে। ফলে বলতে পারছি না, সংগীতানুষ্ঠানে অমন ধোঁয়ার এন্তেজাম হয় কি না। না হলে খুবই ভালো। সময় এসেছে পুরোনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার। এ ক্ষেত্রে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কীটনাশকের ধোঁয়াই হতে পারে সর্বোত্তম বিকল্প।

২. বিরোধী দল ঠেকাতে

রাজপথে টিয়ার গ্যাসের বদলে মশা মারার ধোঁয়া হতে পারে ভালো বিকল্প
ছবি: প্রথম আলো

নির্বাচনের দেরি নেই। তাই ধারণা করা যায়, মাঠে–ময়দানে নামবে বিরোধী দল। আর এসব আন্দোলন মানেই টিয়ার গ্যাসের বিপুল ব্যবহার। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। টিয়ার গ্যাসের দামও নিশ্চয়ই বসে নেই। কাজেই টিয়ার গ্যাসের অপচয় রোধে ‘হায়ার’ করা যায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে। তাদের একদল দক্ষ কর্মী ফগার মেশিন নিয়ে ছুটে যাবেন রাজপথে। ছড়িয়ে দেবেন কীটনাশকের ধোঁয়া। মশা না মরলেও বিরোধী দলকে হটানোর মতো উদ্দেশ্য যে হাসিল হবে, তা নিশ্চিত।

৩. মৌচাক কাটতে

কাঁচা-পাকা পাতায় ‘কাড়ু’ বানিয়ে ধোঁয়া দেওয়া হয় মৌচাকে
ছবি: প্রথম আলো

সুন্দরবনের মৌয়ালেরা কীভাবে মধু সংগ্রহ করে, দেখেছেন কি? নিশ্চয়ই দেখেছেন। কেবল সুন্দরবন নয়, কমবেশি সব জায়গায় একই কায়দা অনুসরণ করা হয়। এটাকে বলা যায় ‘ধোঁয়া–কায়দা’। মাথাটাথা কাপড়ে মুড়ে, গাছের কাঁচা–পাকা পাতায় আগুন ধরিয়ে ভীষণ একটা ধোঁয়ার কুণ্ডলী বানানো হয় আগে। তারপর ওই ধোঁয়া ছড়িয়ে দেওয়া হয় মৌচাকে। ধোঁয়ার চোটে মৌমাছির ঝাঁক বাপ বাপ করে ছুটে পালায়, সেই সুযোগে মৌচাক কেটে নিয়ে আসেন মৌয়ালেরা। তো অত হাঙ্গামার দরকার কী? আছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন! মৌয়াল ভাইয়েরা, আজই বুকিং দিন!

৪. পাবলিকের চোখে

পাবলিকের চোখে যেভাবে ধোঁয়া দিতে হয়
ছবি: পেক্সেলস

মশা মারার কীটনাশক বা এই ধোঁয়ার উৎকৃষ্ট ব্যবহারের বুদ্ধিটাই বাতলে দিচ্ছি এবার। আগেই বলে রাখি, অতটা অর্থকরী না হলেও এই পদ্ধতি অর্থবহ হবে সুনিশ্চিত। এ জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে বেশ কিছু ছোট কনটেইনারও আমদানি করতে হবে। এতে আবার কত কোটি খরচ হবে, তা অবশ্য বলতে পারছি না। যা হোক, টাকা–পয়সা হাতের ময়লা! তো ওই ছোট ছোট কনটেইনারে ভরতে হবে ম্যালাথিয়ন কীটনাশক। এর চাহিদা যে আকাশচুম্বী হবে, তা চোখ বুজে বলে দেওয়া যায়। প্রি–বুকিংয়েই স্টক আউট হবে নির্ঘাৎ। প্রশ্ন করতে পারেন, কী কাজে লাগবে এটা? কারাই–বা হবে এর ব্যবহারকারী? এর উত্তর হলো, নাম বললে চাকরি থাকবে না! তাই শুধু বলে রাখি, পাবলিক বা আমজনতার চোখে ধোঁয়া দেওয়া যাঁদের জন্য জরুরি, তাঁরাই হবেন এর অনুরাগী ক্রেতা।