দুবাইয়ে বাড়ি কেনার আগে-পরে যেসব বিষয় মাথায় রাখবেন

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে ২০২২ সালে ৫৩২ জন বাংলাদেশি বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনেছেন। দেশের মানুষ যখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে পেরেশান, ঠিক তখন এ রকম খবর মনে প্রশান্তির হাওয়া বইয়ে দেয়। গোবরে পদ্মফুল হয়ে ফোটা ওই ৫৩২ জনের জন্য গর্বে বুক ফুলে ওঠে। তবে কিছু লোক তো থাকেই, যারা অন্যের ভালো দেখতে পারে না। দুবলার চরে সামান্য ছাপরা তুললেও যেখানে তাদের চোখ টাটায়, সেখানে দুবাইয়ে বাড়ি কেনার খবরে তো কথাই নেই। অবশ্য দুবাইয়ে যাঁরা বাড়ি কিনতে দৃঢ়প্রত্যয়ী, তাঁরা এসব থোড়াই কেয়ার করেন। আর তাঁদের জন্যই কিছু পরামর্শ দিলেন দুবাইয়ে বাড়ির মালিক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন—

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে ২০২২ সালে ৫৩২ জন বাংলাদেশি বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনেছেনছবি: পেক্সেলস

লক্ষ্যে অটল থাকুন

দুবাইয়ে বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার আগে আপনাকে হতে হবে মানসিকভাবে দৃঢ়। যেমনটা দৃঢ় হয় দুবাইয়ের আকাশছোঁয়া ইমারতের স্তম্ভ। লোকে অনেক কথা বলবে, এসব গায়ে মাখবেন না। আপনি গায়ে মাখবেন দামি সানস্ক্রিন। কারণ, দুবাইয়ে থাকার প্র্যাকটিস করতে হবে তো! ওখানকার গরমে ত্বকের ভীষণ ক্ষতি হয়। এই সানস্ক্রিন আপনাকে রাখবে সুরক্ষিত। আর আপনার মনের জাতীয় পশু হোক গন্ডার। প্রয়োজনে চিড়িয়াখানায় গিয়ে গন্ডার দেখে আসুন, অনুপ্রেরণা নিন। প্রাণীটির চামড়া যেমন পুরু, আপনার হৃদয়ের আবরণও হোক তেমনই। যে স্বপ্ন আপনি বুকে লালন করছেন, তাকে সজীব রাখুন। লক্ষ্য অটুট থাকলে আপনিও হতে পারেন ৫৩৩ নম্বর ভাগ্যবান!

টাকাপয়সা গোছান

দুবাইয়ে বাড়ি কেনার স্বপ্ন আপনি দেখছেন টাকা আছে বলেই। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে টাকা আপনি উপার্জন করেছেন, তা গুছিয়ে ফেলুন। এ দেশে কাউকে বিশ্বাস করবেন না! টাকাপয়সা রাখুন নিজের হেফাজতে। বালিশে রাখুন, তোশকে রাখুন, মুড়ির টিনে রাখুন, চালের ড্রামে রাখুন...প্রয়োজনে রাখুন হরলিকসের বয়ামে। তবে খুব সাবধান, দেশটা চালাক-চতুরে ভরে গেছে! তাদের ব্যাপারে খুব হুঁশিয়ার! আপনার মতো কিছু বোকা আছে বলেই পৃথিবী আজও সুন্দর। দুবাই শহরটা এত সুন্দর কেন, বলুন তো? হ্যাঁ, শহরটির প্রতিটি চিপায়–চুপায় বোকায় ভরে গেছে বলে। তো কথা একটাই, টাকাপয়সা যেখানেই পান, গুছিয়ে ফেলুন।

প্রয়োজনে আরও ঋণ নিন

লজ্জা ঝেড়ে ফেলুন, লোকে যেভাবে ঝেড়ে ফেলেন নাকের সর্দি। টাকাপয়সার খানিকটা সংকট থাকলে ব্যাংকে যান, ঋণের আবেদন করুন। ঋণ দেবে না? দিতেই হবে! কারণ, ঋণ পাওয়া আপনার নাগরিক অধিকার। আর আপনি তো কেবল নাগরিক নন, রীতিমতো সুনাগরিক। ছোটখাটো ঋণ নিয়ে হাত নোংরা করবেন না। আপনার বেলুনের মতো চুপসে থাকা মনটার ভেতরে হাওয়া দিন, ওটা ফুলে উঠুক। মনটাকে বড় করতে পারলে বড় অঙ্কের ঋণও পাবেন। আর কৃতজ্ঞ থাকুন। টাকা বুঝে পেলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন এই বলে, ‘আপনাদের এই ঋণ আমি জীবনেও পরিশোধ করতে পারব না!’ বিখ্যাত মার্কিন অভিনেত্রী ও গায়িকা ডরিস ডে বলেছিলেন, ‘কৃতজ্ঞতাই সম্পদ এবং অভিযোগ হলো দারিদ্র্য।’

আরও পথ খুঁজুন

কেবল ব্যাংকের ঋণের ওপর ভরসা করে বসে থাকবেন না। এই দেশের লোকজন স্বীকার না করলেও আদতে সবার হাতে হাতে টাকার ছড়াছড়ি। ওসব কাজে লাগান। টাকা কেন গৃহকাতরের মতো দেশে বসে থাকবে? টাকারও তো অধিকার আছে ঝলমলে দুবাই শহর দেখার, তাই না? এখন জনগণের টাকা আপনি কীভাবে কাজে লাগাবেন, সেটা আপনার বিষয়। এ ক্ষেত্রে বুদ্ধিই একমাত্র অস্ত্র। হ্যাঁ, আপনার বুদ্ধির যে কমতি নেই, তা অজানা নয়। তবে আরও বুদ্ধি পেতে চাইলে ওই ৫৩২ জনের দিকে তাকান। তাঁদের হাওয়া গায়ে লাগান। তাঁদের সঙ্গে উঠুন-বসুন। এ কারণেই গুণীজনেরা বলেছেন, ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।’ যাহোক, জনগণের টাকা কাজে লাগানোর উপায় পেলে বসে থাকবেন না। যা করার দ্রুত করতে হবে। আগেই বলেছি, দেশটা চালাক–চতুরে ভরে গেছে!

ভুলে যান

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘ভুলে-যাওয়া কথাগুলি কানে কানে করায়ে স্মরণ/ দিব না মন্থর করি ওই তব চঞ্চল চরণ।’ আপনিও এই নীতিতে চলুন। আয়কর, ব্যায়কর, আজি এ প্রভাতে রবির কর—যাবতীয় কর এড়িয়ে চলুন, স্রেফ ভুলে যান। কর না দিয়ে মাড় দেওয়া কড়কড়ে কাপড় পরে কড়া রোদে হাঁটুন। রোদে হাঁটার প্র্যাকটিস করুন। কারণ, তপ্ত রোদের দুবাই যে আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে! আয়কর তো দেবে ওরা, যারা আয় করে। আপনি তো করেন অর্জন। অর্জনে আবার কিসের কর? হ্যাঁ, আপনি ঋণী বটে। তো মায়ের কাছে আমরা ঋণী না? মায়ের ঋণ কি শোধ করা যায়? এই দেশও তো আমাদের মা। তাহলে দেশমাতৃকার ঋণ কেন আপনি শোধ করবেন? যারা এসব নীতিবাক্য কপচাতে আসবে, পারলে ওদের কানের নিচে চেতনা দিন। এ দেশে চেতনার বড় অভাব!

‘বয়কট’ ফেসবুক

সম্প্রতি ফেসবুকে আমজনতার হাউকাউ দেখে বিষাদে মনটা নীল হয়ে আসে! কী এক জিনিস বানাল ওই ছোকরা মার্ক জাকারবার্গ! এমনিতে এই দেশে বাক্স্বাধীনতার স্বর্ণযুগ চলছে, তার ওপর এই ফেসবুক যেন বোঝার ওপর শাকের আঁটি! আগেই বলেছি, আমজনতা আমাদের কিছুই সহ্য করে না। আর আপনি যখন দুবাইয়ে বাড়ি কিনে ফেসবুকে ছবিটবি শেয়ার করবেন, অমনি ফোঁস করে উঠবে! যদিও ওরা ঢোঁড়া সাপ; যতই ফোঁসফাঁস করুক, লাভ নেই। তবে এদের নজর কিন্তু খুব খারাপ! গরিবের বদনজরে যে কারও কারও ওপর শনি ভর করে, এর প্রমাণ আমরা দেখেছি। তাই ফেসবুকের ধারেকাছে ঘেঁষবেন না! আপনি বরং পরামর্শগুলো মেনে চলুন; আশা করি, শিগগিরই আমাদের মোলাকাত হচ্ছে। ঝলমলে স্বপ্নের শহর দুবাইয়ে আপনাকে স্বাগত!

আরও পড়ুন