বিয়েতে দাওয়াত না পাওয়ার দুঃখ ভোলার ১০ উপায়

চলছে বিয়ের মৌসুম। বাঙালি প্রেমের ব্যথা, এমনকি আক্কেলদাঁতের ব্যথাও ভুলতে পারে; কিন্তু বন্ধু, স্বজন বা সহকর্মীর বিয়েতে দাওয়াত না পাওয়ার দুঃখ সহজে ভুলতে পারে না। শীতে যেমন পুরোনো বাতের ব্যথা হঠাৎ জানান দেয়, দেখবেন কেউ কেউ বহু বছর আগে কোনো এক বিয়েতে দাওয়াত না পাওয়ার দুঃখেও হঠাৎ হঠাৎ কাতর হয়। কঠিন এই দুঃখ ভোলার উপায় বাতলে দিচ্ছেন মাহবুব আলম

বিয়েতে দাওয়াত না পেয়ে আপনিও কি শাকিব খানের মতো এভাবে কাঁদেন?

১. যে ব্যক্তির বিয়েতে দাওয়াত পাননি বলে দুঃখের সাগরে ভাসছেন, তার বিয়েতে ইলন মাস্ক, বিল গেটস, জেফ বেজস, জো বাইডেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প, মেসি, রোনালদো এমনকি নেইমারও দাওয়াত পাননি। একবার ভেবে দেখেছেন, আপনি কাদের কাতারে আছেন?

২. বিয়ের খাবারদাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্য যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয়, সেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আপনাকে নিয়ে ভাবে, আপনাকে কেয়ার করে-এমন কোনো ব্যক্তিই নিশ্চয় দাওয়াতের লিস্ট থেকে আপনার নাম কেটেছে।

৩. যার বিয়েতে দাওয়াত পাননি বললে একটু পরপর আপনার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠছে, মনে মনে ভাবুন-তিনি আসলে বিয়ে করেননি, বিএ করেছেন। মানে ব্যাচেলর অব আর্টস সম্পন্ন করেছেন। দেশে প্রতিবছরই হাজার হাজার মানুষ বিএ সম্পন্ন করেন। এতে আপনাকে দাওয়াত দেওয়ার কী আছে?

৪. আপনি জানেন কি? একদিন দাওয়াত না খাওয়ার মাধ্যমে আপনি যে অনেকগুলো ট্রিটের অগ্রিম বন্দোবস্ত করে নিয়েছেন! 'বিয়েতে দাওয়াত দেসনি কেন? চল, এখন কাচ্চি খাওয়া' বলে বলে অসংখ্যবার খাওয়ার সুবর্ণ সুযোগটা পেয়ে গেলেন।

৫. বিয়ের দাওয়াত খেতে যাওয়ার পেছনে একটা ব্যয় আছে। আপনার আর্থিক ক্ষতি করতে চায়নি বলেই আপনাকে বিয়েতে দাওয়াত দেয়নি কর্তৃপক্ষ। এমন মানবিক কর্তৃপক্ষের ওপর রাগ না করে উল্টো ধন্যবাদ দেওয়া উচিত নয় কি?

৬. বিয়ের দাওয়াতে গেলেই দেখা যায় নানা রকম অপ্রীতিকর প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। যেমন আপনি যদি শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন, মুরব্বিরা কেউ জিজ্ঞাসা করে বসতে পারেন, ‘কোথায় যেন পড় তুমি? রেজাল্ট কেমন হচ্ছে?’ পড়ালেখা শেষ হলেও নিস্তার নেই। কেউ না কেউ বলে বসবে, ‘কী? তোমার বিয়ে খাব কবে?’ বিয়ে করে ফেলেছেন? তবু ক্ষমা পাবেন না। তখন বলবে, ‘বাচ্চা নিচ্ছো না কেন?’ এসব প্রশ্নের মোকাবিলা করতে গিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টপ অর্ডারের মতো ভেঙে পড়ার চেয়ে ১২তম প্লেয়ারের মতো সাইডলাইনে (পড়ুন ঘরে) বসে থাকা ভালো নয় কি?

৭. বিয়েতে সাধারণত পরিবারের মানুষদের আলাদাভাবে দাওয়াত দেওয়া হয় না। যিনি বিয়ে করছেন, তিনি হয়তো আপনাকে এতটাই আপন ভাবেন যে নিজ পরিবারের কোনো সদস্য বলেই মনে করেন। তাই আর আলাদাভাবে কার্ড পাঠিয়ে আপনাকে দাওয়াত দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি।

৮. আপনি যদি দেনাদার হয়ে থাকেন, তাহলে তো এ যাত্রায়ও বেঁচে গেলেন! বিয়ের দাওয়াতে গিয়ে বহু লুকিয়ে থাকা দেনাদার পাওনাদারদের সামনে ধরা পড়েছে। এত মানুষের সামনে টাকা চেয়ে বসলে মুখ কই লুকাতেন? (যাহোক, পাওনাদারের টাকা দ্রুত পরিশোধ করুন। দাওয়াত পাননি বলে এই যাত্রায় বেঁচে গেলেও সামনে কিন্তু ধরা খেয়ে যেতেই পারেন। আর নিজে যদি অবিবাহিত হয়ে থাকেন, তাহলে তো ধরা খাওয়া নিশ্চিত। আর যা-ই হোক, আপনার বিয়েতে তো আপনি দাওয়াত পাবেনই। তখন পালাবেন কোথায়?)

৯. বিয়ের প্রোগ্রামে প্রচুর চিৎকার-চেঁচামেচি, মানে শব্দদূষণ হয়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, সুস্বাস্থ্যের জন্য যথাসম্ভব শব্দদূষণ এড়িয়ে চলা উচিত। দাওয়াত না পাওয়ার মাধ্যমে আপনিও শব্দদূষণের শিকার হওয়া থেকে বেঁচে গেলেন। অভিনন্দন আপনাকে!

১০. বিয়ের সব ঘটনাই এখন ক্যামেরাবন্দী হচ্ছে। বলা তো যায় না, দাওয়াত খেতে গিয়ে মুখে খাবার তোলার কোনো এক অপ্রীতিকর দৃশ্য যদি ক্যামেরাবন্দী হয়ে যায়। এরপর পাত্র-পাত্রী ‘বিয়ের স্মৃতি রোমন্থন’ নামে সেগুলো ফেসবুকে আপলোড দিয়ে দিল। ব্যস! রাতারাতি আপনি মিম কনটেন্ট বনে গেলেন। দাওয়াত না পাওয়ায় আপনার মান-ইজ্জত কীভাবে বেঁচে গেল, ভাবতে পারেন!

প্রথম আলোতে প্রতি বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হচ্ছে রম্য পাতা—কথাcom। লেখা পাঠাতে পারেন আপনিও। ইমেইল: [email protected]