যানজটে আটকে পড়া বিজ্ঞানীদের ফেলে চাঁদে গেলেন ১০ আমলা

ফ্রি চন্দ্রাভিযানের কথা শুনে চারদিকে হইচই
ছবি: প্রথম আলো

২০৫০ সাল। বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অবশেষে দুনিয়ার নানান দেশের বিজ্ঞানীদের চাঁদভ্রমণের ব্যবস্থা করল নাসা। প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব খরচে বিজ্ঞানীদের চাঁদে ঘুরিয়ে আনবে। এমন ফ্রি চন্দ্রাভিযানের কথা শুনে চারদিকে হইচই। তবে ভীত লোকের সংখ্যাও কম ছিল না। কারও কারও ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রে বড় একটা সেতু বানানো হচ্ছে। সেখানে প্রচুর মানুষের মাথা দরকার। নাসা তাদের সেখানে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলে মাথা নিয়ে এসে ওই সেতুর ভিত পোক্ত করবে।

অন্যদিকে দুনিয়ার নানান দেশ থেকে আগ্রহী বিজ্ঞানীদের আবেদনপত্র জমা পড়তে লাগল। এর মধ্যে প্রায় সবাই দীর্ঘদিন ধরে চাঁদ ও মহাকাশ বিষয়ে গবেষণা করছেন, চেষ্টা করছেন মহাকাশে যাওয়ার। যুগের পর যুগ অপেক্ষার পর অবশেষে নাসার অর্থায়নে সেই অধরা চাঁদে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেতেই সবার উত্তেজনার পারদ ঊর্ধ্বমুখী।

‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক’ একটি দেশ থেকেও আবেদনপত্র জমা পড়ল। চাঁদ ও মহাকাশ নিয়ে গবেষণায় উল্লেখযোগ্য কোনো অবদান রাখতে না পারলেও এসব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাওয়া অসংখ্য চৌকস বিজ্ঞানী আবেদনপত্র জমা দিলেন। প্রতি দেশ থেকে ১০ বিজ্ঞানীকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এই সুযোগের কথা শুনে ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক’ দেশ থেকে শতাধিক বিজ্ঞানী আবেদন করলেন।

যাহোক, অবশেষে নাসার বিশেষ মহাকাশযানপৃথিবীর বিজ্ঞানীদের নিয়ে চাঁদের বুকে অবতরণ করল। এক এক করে সব দেশের বড় বড় মহাকাশবিজ্ঞানী মহাকাশযান থেকে নামলেন। ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক’ দেশের পক্ষ থেকে নামলেন ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৪৯ ও ৫০তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত ১০ আমলা। চাঁদের মাটি আলু চাষের জন্য উপযোগী কি না, তা পরখ করতে মন্ত্রণালয় থেকে তাঁদের পাঠানো হয়েছে!

এদিকে চাঁদের বুকে আগে থেকেই টিভি চ্যানেল খুলে বসে থাকা মুনমুন টিভির সাংবাদিকেরা ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক’ দেশের কোনো বিজ্ঞানীকে দেখতে না পেয়ে বিস্মিত। তাই ওই ১০ আমলার সামনে গিয়ে তাঁদের প্রশ্ন, ‘স্যার, আপনাদের দেশ থেকে কোনো বিজ্ঞানী নাই কেন?’

একজন হোমরাচোমরা আমলা এগিয়ে এসে বললেন, ‘আরেহ্ ভাই, বিজ্ঞানীরা রাস্তার জ্যামে আটকা ছিলেন। ওনাদের জন্য হুদাই ফ্লাইট মিস দিতে যাব কেন? তাই আমরাই চলে আসছি।’

তাঁর কথায় বাধা দিয়ে আরেকজন বললেন, ‘আরে, ঘটনা এটা না। আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান দেশ। আর চাঁদে বসবাস শুরু করলে তো খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। তাই আমরা চাঁদের মাটি চাষবাসের উপযোগী কি না, সেটাই যাচাই করতে এসেছি।’

এটা শুনে পাশেরজন রেগে গেলেন। তিনি বললেন, ‘এরা জুনিয়র। এরা কিছুই জানে না। আসলে আমরাই বিজ্ঞানী। এখানে আমরা একজন আলুবিষয়ক, একজন চালবিষয়ক, একজন ডালবিষয়ক, একজন পানিবিষয়ক, একজন খিচুড়িবিষয়ক, একজন সাঁতারবিষয়ক, একজন মাটিবিষয়ক, একজন মশাবিষয়ক, একজন বাঁশবিষয়ক এবং একজন বালিশের কভারবিষয়ক বিজ্ঞানী!’

প্রশ্নের জবাব পেয়ে মুনমুন টিভির সাংবাদিক বললেন, ‘ইয়েস স্যার! আপনারা তো আবার চন্দ্রযান পাঠানোর আগে একজন মানুষই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন চাঁদে! ফলে মহাকাশবিজ্ঞানীরা আর এখানে এসে কী করবেন! ধন্যবাদ স্যার, আমাদের সময় দেওয়ার জন্য!’

আরও পড়ুন