কিছুদিন আগে এক ব্যাচেলর খালাতো ভাইয়ের মেসে গিয়েছিলাম আমি। আগেই শুনেছিলাম, মেসওয়ালা প্রচণ্ড কড়া। বাইরে থেকে কাউকে মেসে আনতে হলে মেসওয়ালাকে পুরো পরিচয় দিতে হয়। কয় বেলা বা কয় দিন থাকবে, সেটাও জানাতে হয় তাঁকে। সেদিন আমার খালাতো ভাই আমাকে তার ‘খালাতো ভাই’ পরিচয় দিয়েই তার রুমে নিয়ে গেল।
পরদিন সকালে একটা কাজে বাসা থেকে বের হতে যাচ্ছি এমন সময় খেয়াল করলাম, মেসওয়ালা আমার দিকে সন্দেহভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আমাকে থামিয়ে বললেন, ‘এই ছেলে, দাঁড়াও!’
আমি দাঁড়ালাম।
মেসওয়ালা জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কে? বাসায় ঢুকেছ কীভাবে?’
আমি কোমল গলায় বললাম, ‘আঙ্কেল, আমি চারতলার জামিলের গেস্ট।’
মেসওয়ালা চোখ রাঙিয়ে বললেন, ‘গেশ মানে? কিসের গেশ?’
গলায় আরও মধু ঢেলে বললাম, ‘আঙ্কেল, আমি জামিলের কাজিন।’
মেসওয়ালার রাগ যেন বেড়ে গেল, ‘কী বলছ উল্টাপাল্টা? একবার বলো গেশ, আবার বলো কাজিন? মতলব কী তোমার? তুমি কে, সত্যি করে বলো তো!’
মেসওয়ালা আমাকে আর কোনো কথা বলারই সুযোগই দিচ্ছেন না। একের পর এক বলেই যাচ্ছেন। এমন সময় বাড়িওয়ালার চিৎকার শুনে আমার খালাতো ভাই জামিল বের হয়ে এল। জামিলকে দেখেই বাড়িওয়ালা হুংকার দিলেন, ‘জামিল, এই ছেলে কে? চেনো ওকে? একেকবার একেক কথা বলে! একবার বলে জামিলের গেশ-ফেশ না কী জানি, আবার বলে কাজিন! ঘটনা কী?’
জামিল ঘটনা বুঝতে পেরে বলল, ‘আঙ্কেল, ও তো আমার খালাতো ভাই। গতকাল আপনার কাছে পরিচয় দিয়েই না ওকে বাসায় নিয়ে আসলাম!’
মেসওয়ালা এবার একটু নরম হয়ে বললেন, ‘তো সেটা আমাকে বললেই তো পারত! খালাতো ভাই না বলে গেশ-ফেশ, কাজিন-ফাজিন এসব কী বলা শুরু করছে!’
আমি আমার কাজিন, স্যরি খালাতো ভাইয়ের দিকে তাকালাম। সে-ও তাকাল আমার দিকে। দুজনেই ফিক করে হেসে দিলাম। বাড়িওয়ালা গুটিগুটি পায়ে সামনে থেকে চলে গেলেন।