চকলেট মানেই চোখ চকচক। একে আপনি লোভ বলতে পারেন, তবে ভালোবাসা বললে জুতসই হয়। চকলেট ভালোবাসে না এমন মানুষ দুনিয়ায় বিরল। কী আছে এই চকলেটে? কেন এত জনপ্রিয়? সেই যে খ্রিষ্টপূর্ব ১৯–১১ শতকে কোকোয়া বীজ মনুষ্য খাদ্যের তালিকায় উঠে গেল। তারপর মায়া ও আজটেক সভ্যতা ওই কোকোয়া বীজের শাঁস দিয়ে বানাতে শুরু করল ‘আদি’ চকলেট। এর পর থেকে চকলেটের স্বাদ মানুষকে করে রাখল মোহিত। চকলেটের এ জনপ্রিয়তার কথা সবাই জানেন। কিন্তু এর পেছনের আসল রহস্য বা বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণটা কী? এত দিন ধরে এ নিয়ে পরিষ্কার ধারণা ছিল না। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা চকমপ্রদ কিছু তথ্য তথ্য–উপাত্ত পেশ করেছেন।
১৫ শতকে কোকোয়া বীজ থেকে একধরনের পানীয় তৈরি করা হতো। আর ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এসে কোকোয়া বাটারের সঙ্গে তরল চকলেট ও চিনি মিশিয়ে ‘আধুনিক’ চকলেট তৈরি হয় যুক্তরাজ্যে। এরপর ১৮৭৬ সালে সুইজারল্যান্ডে এর সঙ্গে দুধ মিশিয়ে তৈরি করা হয় মিল্ক চকলেট, যা ছেলেবুড়ো সবার প্রিয় হয়ে ওঠে।
কেন এত জনপ্রিয়
বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাঁরা আদতে এত দিনে এসে জানতে পেরেছেন, চকলেট কেন জনপ্রিয়। ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব লিডসের একদল বিজ্ঞানী চকলেটের প্রাকৃতিক উপাদান বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁরা দেখেছেন, এক টুকরা চকলেট মুখে পুরলে এতে থাকা চর্বি মুখের ভেতর একটা পাতলা আবরণ তৈরি করে। এই আবরণ মুখের ভেতর সৃষ্টি করে একটা কোমল অনুভূতি। আবার চকলেটের বিভিন্ন উপাদান ও লালা মিলেমিশে অনুভূতিটা করে তোলে আরও জমজমাট।
বেরসিকের মতো কিছু কথা বলতেই হয়। চকলেটের ভালো–মন্দ দুটোই আছে। এতে সাদা চিনি আর চর্বি থাকে বলে পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই ভালো। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা দিনে দুবারের বেশি ডার্ক চকলেট খেতে নিষেধ করেন। তবে লিডস ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের দল এখন আশা করছে, তাঁদের এ গবেষণার ওপর ভিত্তি করে স্বাস্থ্যকর চকলেট তৈরি করা সম্ভব। এতে অবশ্য চকলেটের স্বাদের কোনো হেরফের হবে না। আর হলেও অমন স্বাস্থ্যকর চকলেট যে গুদামের ইঁদুরও চেখে দেখবে না, তা বলাবাহুল্য।
চকলেট চমৎকার
চকলেটের একটা টুকরা মুখে নেওয়ার পর কী কী হয়, কতভাবে এটি পরিবর্তিত হয়—প্রতিটি ধাপ আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করেছেন লিডস ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা। এই বিশ্লেষণে তাঁরা বলেছেন, মুখে চকলেট নেওয়ার পর যে কোমল অনুভূতির সৃষ্টি হয়, তাতে আদতে বেশ কিছু বিষয় কাজ করে থাকে। চকলেটের উপাদানগুলো ও লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত লালা মিলে কিংবা আলাদাভাবে এ কোমল অনুভূতির সৃষ্টি করতে পারে।
চকলেট জিবের সংস্পর্শে আসামাত্র চর্বি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একই সঙ্গে কোকোয়া বীজের শাঁস যখন মুখের ভেতরে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তা সংবেদনশীল স্পর্শের অনুভূতি সৃষ্টি করতে ভূমিকা রাখে। তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, চকলেটে চর্বির পরিমাণ কমালেও এর স্বাদে তেমন তারতম্য হবে না। লিডস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অন্বেষা সরকার বলেন, চকলেটে ৫ কিংবা ৫০ শতাংশ, যতটুকু চর্বিই থাকুক না কেন, ওই চকলেট মুখে নেওয়ার পরের অনুভূতির কোনো পরিবর্তন হয় না।
যেভাবে হলো গবেষণা
চকলেট নিয়ে এ গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন সিয়াভাশ সোলতানাহমাদি। তিনিসহ বাকি গবেষকেরা এ গবেষণার জন্য একটা কৃত্রিম জিব ব্যবহার করেছেন। আর পরীক্ষার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল ডার্ক চকলেট। কৃত্রিম ওই জিব আদতে একটা যন্ত্র, তবে তা মানুষের জিবের মতো নড়াচড়া করে। মানুষের মুখের মতোই নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপ সহনীয়। এর আবরণও মানুষের জিবের মতো। ডার্ক চকলেট ওই কৃত্রিম জিবে কেমন প্রভাব ফেলে, তা পর্যবেক্ষণ করেছেন গবেষকেরা।
সিয়াভাশ বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, পরবর্তী প্রজন্ম এমন চকলেট পাবে, যার স্বাদ ও অনুভূতি হবে ঠিক এখনকার বেশি চর্বিযুক্ত চকলেটের মতো।’
তথ্যসূত্র: ব্রিটানিকা, স্কাই নিউজ ও দ্য গার্ডিয়ান