ইতালির প্রমোদতরি আকিলে লাওরো ছিনতাইয়ের অবসান

প্রমোদতরি আকিলে লাওরো
ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

প্রমোদতরি আকিলে লাওরো ইতালির জেনোয়া বন্দর থেকে ভূমধ্যসাগরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে ১৯৮৫ সালের ৩ অক্টোবর। ৭ অক্টোবর জাহাজটি মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া বন্দরে পৌঁছালে ফিলিস্তিন লিবারেশন ফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত ৪ জন জাহাজটি ছিনতাই করেন। এরপর নানা নাটকীয়তা শেষে ১০ অক্টোবর ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়।

৪ জন ছিনতাইকারী একে-৪৭ রাইফেল ও হ্যান্ড গ্রেনেড নিয়ে সাধারণ যাত্রীর বেশে জাহাজে উঠেছিলেন। তাঁরা জেনোয়া বন্দরের একটি গাড়ির ট্যাংকিতে লুকিয়ে রেখে অস্ত্রগুলো জাহাজে তুলতে সক্ষম হন। ১২ দিনের ভ্রমণের পঞ্চম দিনে ৭৪৮ জন যাত্রী এবং প্রায় ৩০০ ক্রু আলেকজান্দ্রিয়া বন্দরে পৌঁছায়। এর মধ্যে ৬৫১ জন যাত্রী পিরামিড দেখার জন্য জাহাজ থেকে নেমে যান। পরিকল্পনা ছিল, নেমে যাওয়া যাত্রীরা সে রাতে দেড় শ মাইল দূরে পোর্ট সৈয়দ বন্দরে গিয়ে পুনরায় জাহাজে উঠবেন।

অধিকাংশ যাত্রী নেমে গেলে জাহাজে থাকা ছিনতাইকারীরা অস্ত্রের মুখে ক্রু ও অবশিষ্ট যাত্রীদের জিম্মি করেন এবং ক্যাপ্টেনকে বাধ্য করেন বন্দর ছেড়ে যেতে। ছিনতাইকারীরা ইসরায়েল কারাগারে বন্দী থাকা ৫০ জন ফিলিস্তিনকে মুক্তি দেওয়ার দাবি করেন। কিন্তু ইসরায়েল সরকার ছিনতাইকারীদের দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানায়। এদিকে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট ও পিএলও চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত জাহাজ ছিনতাইয়ের নিন্দা জানান এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে মিসরে একজন প্রতিনিধি পাঠান।

ছিনতাইকারীরা জাহাজটিকে প্রথমে সিরিয়ায় টারটুস বন্দরের দিকে নিতে বাধ্য করেন। মার্কিন ও ইতালি সরকারের অনুরোধে সিরিয়া কর্তৃপক্ষ জাহাজটিকে বন্দরে নোঙর করতে দিতে অস্বীকার করে। এরপর ছিনতাইকারীরা জাহাজটিকে সাইপ্রাসে নিয়ে যান, কিন্তু সেখানেও জাহাজটি নোঙর করতে ব্যর্থ হয়। হতাশ হয়ে ছিনতাইকারীরা জাহাজটিকে পোর্ট সৈয়দ বন্দরে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। উপকূলের কাছে গিয়ে তাঁরা মিসরের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। জাহাজের জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ছিনতাইকারীরা নিরাপদ প্রস্থান ও বিচার থেকে দায়মুক্তির দাবি করেন।

মিসরীয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের দাবি মেনে নিলে তাঁরা আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণ আলোচনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মিসরে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ব্রিটেন ও পশ্চিম জার্মানির রাষ্ট্রদূতেরা। যদিও তাঁরা সব বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন।

এর পরের দিন অর্থাৎ ১০ অক্টোবর ছিনতাইকারীরা একটি মিসরীয় বিমানে তিউনিসিয়ার দিকে রওনা হন। তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান বিমানটিকে আটক করার চূড়ান্ত পরিকল্পনা অনুমোদন করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী যুদ্ধবিমান দিয়ে বিমানটির গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং বিমানটিকে সিসিলি দ্বীপে ন্যাটোর বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করতে বাধ্য করা হয়। ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করে ইতালি নিয়ে যাওয়া হয়। এর পরের বছর ইতালির একটি আদালত ছিনতাইকারীদের এবং ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করার জন্য ৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়।

জাহাজ ছিনতাইয়ের এই ঘটনা ফিলিস্তিন-সংকটকে আরও জটিল করে তোলে। অনেকে মনে করেন, ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে তাঁর বিরোধী চরমপন্থী গোষ্ঠী এই ঘটনা ঘটায়।