এলিস দ্বীপের দরজা বন্ধ করল আমেরিকা

পাখির চোখে এলিস আইল্যান্ডের
ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

আমেরিকাকে বলা হয় বহু জাতিগোষ্ঠীর দেশ। ১৪৯২ সালে আমেরিকা আবিষ্কারের পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসীরা সেখানে পাড়ি জমাতে থাকেন। ‘১৭৯০ ইমিগ্রেশন ন্যাচারালাইজেশন অ্যাক্ট’ চালু হলে আমেরিকায় অভিবাসীদের ঢেউ বাড়তে থাকে।

আমেরিকার অভিবাসন ইতিহাসে এলিস দ্বীপ একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক স্থান। দীর্ঘ সময় ধরে এটি ছিল আমেরিকার প্রধান ফেডারেল অভিবাসন কেন্দ্র। নিউইয়র্ক ও নিউ জার্সির মধ্যে হাডসন নদীর মুখে অবস্থিত এই দ্বীপের আয়তন সাড়ে ২৭ একর। ১৮৯২ সালের ১ জানুয়ারি এই দ্বীপে অভিবাসন কেন্দ্র চালু হয়।

এলিস আইল্যান্ডের প্রথম তল্লাশি কেন্দ্রটি চালু হয় ১৮৯২ সালে, আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায় ১৮৯৭ সালে
ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

১৯৫৪ সালের ১২ নভেম্বর কেন্দ্রটি বন্ধ করার আগে ৬৩ বছরে ১ কোটি ২০ লাখ অভিবাসী এই কেন্দ্র দিয়ে আমেরিকায় প্রবেশ করেন। ধারণা করা হয়, বর্তমান সব মার্কিন নাগরিকের মধ্যে অন্তত ৪০ শতাংশের সঙ্গে এলিস দ্বীপের কোনো না কোনো সম্পর্ক আছে।

১৮৯০ সালের ২২ মার্চ সাপ্তাহিক বিদ্রুপ ম্যাগাজিন ‘জাজ’–এ প্রকাশিত অভিবাসীবিরোধী প্রচ্ছদ
ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

এলিস দ্বীপটির নামকরণ করা হয়েছিল ম্যানহাটনের বণিক স্যামুয়েল এলিসের নামানুসারে, যিনি ১৭৭০-এর দশকে এটির মালিক ছিলেন। তিনি ১৮০৮ সালে নিউইয়র্ক রাজ্য ফেডারেল সরকারের কাছে দ্বীপটি বিক্রি করে দেন।

এলিস দ্বীপ উন্মুক্ত করার পর মার্কিন অভিবাসনে এক বিরাট পরিবর্তন ঘটে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে নতুন প্রজন্ম আমেরিকায় আসতে থাকেন। তাঁদের মধ্যে ইহুদি, রাশিয়ার জারবাদী এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নিপীড়ন থেকে বাঁচতে আমেরিকায় আশ্রয় নেন অনেকে।

এলিস আইল্যান্ডের দ্বিতীয় অভিবাসন কেন্দ্রটি খোলা হয় ১৯০০ সালে (১৯০৫ সালের ছবি)
ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

তা ছাড়া যুদ্ধ, খরা, দুর্ভিক্ষ এবং ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে অনেকে আমেরিকায় অভিবাসনপ্রত্যাশী হয়েছিলেন। আমেরিকায় জমির মালিকানার সুযোগে আকৃষ্ট হয়ে অনেক ইউরোপীয় আমেরিকায় পাড়ি দেন।

১৯১৫ সালে ইউরোপীয় অভিবাসীদের আগমন
ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

১৮৯২ সালের ২ জানুয়ারি আয়ারল্যান্ডের ১৫ বছর বয়সী অ্যানি মুর ছিলেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি এই নতুন প্রবেশপথ দিয়ে আমেরিকায় পা রাখেন। একটা কঠিন সমুদ্রযাত্রার পর অভিবাসীদের চিকিৎসা ও আইনি পরামর্শের জন্য দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে হতো। অধিকাংশই সহজে ইমিগ্রেশন অতিক্রম করতে পারতেন আবার অনেককে কয়েক দিনের জন্য অপেক্ষা করতে হতো।

‘১৭৯০ ইমিগ্রেশন ন্যাচারালাইজেশন অ্যাক্ট’–এর মাধ্যমে দুই বছর ধরে আমেরিকায় বসবাসকারী শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তিরা নাগরিক হওয়ার অনুমতি পান। ১৮৭৫ সালে আমেরিকা যৌনকর্মী ও অপরাধীদের দেশে প্রবেশ নিষেধ করে।

অভিবাসীদের তল্লাশী করা হচ্ছে, ১৯০৪ সালের ছবি
ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

তা ছাড়া ১৮৮২ সালে ‘চায়নিজ এক্সক্লুশন অ্যাক্ট’ পাসের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা নাগরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯২১ সালে অভিবাসী কোটা আইন এবং ১৯২৪ সালে ‘ন্যাশনাল অরিজিন অ্যাক্ট’ পাসের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসীদের সংখ্যা এবং জাতীয়তা সীমিত করে দেয়।

নিউ জার্সি উপকূল থেকে এলিস আইল্যান্ড ও ম্যানহাটন শহরের দৃশ্য
ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এলিস দ্বীপের পরিসর বাড়াতে ভাগাড়কে কাজে লাগিয়ে দুটি নতুন দ্বীপ তৈরি করা হয়। ফলে এর আয়তন ৩ একর থেকে বেড়ে সাড়ে ২৭ একরে গিয়ে দাঁড়ায়। ১৯৭৬ সালে এলিস দ্বীপটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এখন দর্শনার্থীরা এলিস আইল্যান্ড মিউজিয়াম অব ইমিগ্রেশন পরিদর্শন করতে পারেন। ২০০১ সালে ফ্যামিলি ইমিগ্রেশন হিস্ট্রি সেন্টার চালু হলে লাখ লাখ অভিবাসীর তথ্যভান্ডার থেকে মার্কিন নাগরিকেরা তাঁদের পূর্বপুরুষের আগমনের তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। এভাবে এলিস দ্বীপ লাখ লাখ মার্কিন নাগরিকের কাছে জাতীয় ও পারিবারিক ইতিহাসের অংশে পরিণত হয়েছে।