অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ রক্ষায় সম্মেলন শুরু

সাদা বরফে ঢাকা অ্যান্টার্কটিকা
ছবি: রেজাউল বাহার

বরফের মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা। পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম মহাদেশটির আয়তন প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ বর্গকিলোমিটার। পৃথিবীর শীতলতম এই মহাদেশের প্রায় পুরোটাই ঢেকে আছে পুরু বরফে। এর পরিবেশ এতটাই প্রতিকূল যে কোনো মানুষের পক্ষে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করা সম্ভব নয়। তারপরও মূলত প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের আশায় ১৯০৮ সালে ব্রিটেন সর্বপ্রথম অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের মালিকানা দাবি করে। এরপর থেকে বিভিন্ন দেশ এই মহাদেশের ওপর নিজেদের সার্বভৌমত্ব দাবি করতে থাকে।

একই সময় বিভিন্ন দেশ অ্যান্টার্কটিকার বিভিন্ন অংশে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। প্রথম দিকে দেশগুলো সহযোগিতামূলক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে কার্যক্রম শুরু করলেও এক সময়ে তা আন্তর্জাতিক উত্তেজনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, চিলি, ফ্রান্স, জাপান, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, নরওয়ে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সোভিয়েত ইউনিয়ন—এই ১২ দেশের কয়েকটি বৈজ্ঞানিক সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগে যৌথভাবে বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়। ফলে এই ১২ দেশ ১৯৫৭ সালের ১ জুলাই থেকে ১৯৫৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘আন্তর্জাতিক ভূ-প্রাকৃতিক’ বর্ষ পালন করে। এই দেশগুলোর দ্বারা অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে ৫৫টিরও বেশি গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়।

অ্যান্টার্কটিকায় গড়ে উঠেছে নানা দেশের বৈজ্ঞানিক গবেষণাকেন্দ্র
ছবি: সংগৃহীত

তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারের আহ্বানে ১৯৫৯ সালের ১৫ অক্টোবর ওয়াশিংটনে ওই ১২টি দেশের সর্বোচ্চ কূটনৈতিক পর্যায়ে সম্মেলন শুরু হয়। এই সম্মেলনে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সে বছর ১ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত হয় ‘অ্যান্টার্কটিকা চুক্তি’। এই চুক্তির মাধ্যমে দেশগুলো অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশকে কোনো ধরনের আন্তর্জাতিক বিরোধের বিষয়বস্তুতে পরিণত না করে একে মানবজাতির কল্যাণের জন্য শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের বিষয়ে অঙ্গীকার করে। একই সঙ্গে অ্যান্টার্কটিকায় কোনো ধরনের সামরিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা, পারমাণবিক অস্ত্রসহ কোনো ধরনের অস্ত্রের পরীক্ষা চালানো এবং খনিজ সম্পদ আহরণও নিষিদ্ধ করা হয়। অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের প্রাণিসম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ এবং পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টিও চুক্তিতে উল্লেখ ছিল। তবে চুক্তিটি এ অঞ্চলে কোনো দেশের জাতীয় সার্বভৌমত্বের দাবিকে অস্বীকার বা সমর্থন করে না। ১৯৬১ সালের ২৩ জুন কার্যকর হওয়া এ ‍চুক্তিতে ২০২২ সাল নাগাদ আরও ৪৩টি দেশ স্বাক্ষর করে।

বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব পুরো বিশ্বের মতো অ্যান্টার্কটিকাতেও পড়েছে। ধীরে ধীরে গলতে শুরু করেছে জমে থাকা বরফ। ফলে পৃথিবীর নিচু এলাকাগুলো সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেও প্রভাবশালী দেশগুলো এখানে একের পর এক গবেষণাকেন্দ্র নির্মাণ করার মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করে চলছে। এ তালিকায় প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে নতুন নতুন দেশ। কিছু দেশ আবার অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন এবং বিদ্যমান বিধিনিষেধ শিথিল করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ফলে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ হয়ে উঠেছে পৃথিবীর জন্য হুমকি।