আততায়ীর গুলিতে নিহত হন মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত

আনোয়ার সাদাত (১৯১৮–১৯৮১)
ছবি: সংগৃহীত

মিসরের রাজতন্ত্র উৎখাতের উদ্দেশ্যে জামাল আবদেল নাসেরের নেতৃত্বে ‘ফ্রি অফিসার্স মুভমেন্ট’ গঠিত হলে সেনা কর্মকর্তা আনোয়ার আল-সাদাত ১৯৫০ সালে এ সংগঠনে যোগ দেন। ১৯৫২ সালে রাজা ফারুক বিন ফুয়াদের বিরুদ্ধে নাসেরের নেতৃত্বে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন আনোয়ার সাদাত। নাসের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে নাসেরের মৃত্যুর পর তিনি প্রথমে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে হ্যাঁ-না ভোটে জয়ের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

১৯৬৭ সালে ৬ দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েল মিসরের সিনাই উপদ্বীপ, সিরিয়ার গোলান মালভূমিসহ বেশ কিছু এলাকা দখল করে নেয়। ইসরায়েলের দখল থেকে এই দুটি স্থান পুনরুদ্ধার করার উদ্দেশ্যে ১৯৭৩ সালে মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত ও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল আসাদ যৌথভাবে ইসরায়েল আক্রমণ করেন, ইতিহাসে যা ‘ইওম কিপুর’ যুদ্ধ নামে পরিচিত। যুদ্ধের প্রথম দিকে ইসরায়েলি বাহিনী বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলকে সহায়তার জন্য বিমানবাহিনী পাঠালে যুদ্ধের ফল পাল্টে যায়।

পত্রিকার পাতায় সাদাতের মৃত্যুর খবর
ছবি: সংগৃহীত

যুদ্ধে প্রত্যাশিত বিজয় অর্জিত না হওয়ায় আনোয়ার সাদাত ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করেন। ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রীয় সফরে ইসরায়েল গিয়ে ইসরায়েলের সংসদে মুসলিম ও ইহুদিদের জন্য তুলে ধরেন শান্তি পরিকল্পনা। ১৯৭৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কর্টারের মধ্যস্থতায় মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী মেনাকেম বেগিনের মধ্যে ঐতিহাসিক ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তির কারণে আনোয়ার সাদাত ও মেনাকেম বেগিন যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারও পেয়ে যান। এর পরের বছর মিসর ও ইসরায়েলের মধ্যে ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তির মাধ্যমে মিসর ফিরে পায় সিনাই উপদ্বীপ।

রাষ্ট্রীয় সফরে ইসরায়েল যাওয়া, ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করা—এসব কর্মকাণ্ডে মুসলিম বিশ্বে আনোয়ার সাদাতের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে সংগঠিত হয় চরমপন্থীদের একটি দল। ১৯৮১ সালের ৬ অক্টোবর সামরিক বাহিনীর কুচকাওয়াজের একটি অনুষ্ঠানে মিসরীয় সেনাবাহিনীর এক লেফটেন্যান্টের পরিকল্পনায় চার সেনাসদস্য সামরিক যান থেকে নেমে প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতকে গুলি করেন এবং কিছু সময় পর তিনি মারা যান। আনোয়ার সাদাত আরব বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ১৯৭৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেছিলেন।