নাসিরুদ্দিন হোজ্জার গল্প
কে অপয়া?
নাসিরুদ্দিন হোজ্জার জন্ম তুরস্কে ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে। নানা চরিত্রে ও পেশায় তাঁকে তাঁর কয়েক শ গল্পে হাজির হতে দেখা যায়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, হোজ্জা এখন আর তুরস্কের নন, সারা বিশ্বের। ইউনেসকো তাঁর গল্পগুলোকে বিশ্বসাহিত্যিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে। হোজ্জা অবশ্য একেক অঞ্চলে একেক নামে অভিহিত। যেমন উজবেকিস্তান ও চীনে তিনি আফেন্দি বা এফেন্দি। তাঁর গল্প কখনো নির্মল হাস্যকৌতুকে, কখনো বুদ্ধির ঝলকে, কখনো বা নৈতিক শিক্ষার দ্যুতিতে উজ্জ্বল। কখনো নিজেকে নিজেই ব্যঙ্গ করেছেন।
মোল্লা নাসিরুদ্দিন অনেক দিন শ্বশুরবাড়ি যাননি। হঠাৎ সেখানে যাওয়ার শখ হওয়ায় মনের আনন্দে রওনা দিলেন। শ্বশুরবাড়িতে বেশ ভালোমন্দ খেয়ে প্রায় নাচতে নাচতে আবার বাড়ি ফিরে চললেন।
মোল্লা সাহেব যখন বাড়ি ফিরছিলেন, ঠিক তখন বাদশাহজাদা শিকারে বেরোচ্ছিলেন। নাসিরুদ্দিন তাঁর সামনে পড়ে গেলেন। কী মনে হতেই বাদশাহজাদা তাঁর পার্শ্বচরদের নাসিরুদ্দিনকে দেখিয়ে বললেন, ‘লোকটা নিশ্চয়ই অপয়া। আজ আমার শিকার সব পণ্ড হয়ে যাবে। ওকে চাবকে পথ থেকে সরিয়ে দাও।’
সঙ্গে সঙ্গে তাঁর হুকুম তামিল হলো। মোল্লা সাহেবের আনন্দ নিরানন্দে পরিণত হলো। কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই।
মোল্লা সাহেব কাউকেই কিছু না বলে বাড়ি ফিরে মনের দুঃখে গায়ের ব্যথায় চুপচাপ শুয়ে রইলেন। স্ত্রী এসে অনেকবার জিজ্ঞেস করলেন, কিন্তু কোনো উত্তরই দিলেন না তিনি।
বাস্তবে সেদিন কিন্তু শাহজাদার শিকার খুবই ভালো হলো।
বাড়ি এসে তিনি নাসিরুদ্দিনকে ডেকে পাঠালেন।
তিনি আসতেই শাহজাদা কবুল করলেন, ‘নাসির, আমি ভেবেছিলাম তুমি অপয়া। এখন দেখছি তা নয়। তুমি খুবই পয়া লোক।’
নাসিরুদ্দিন খুব ভয় পেয়েছিলেন, কিন্তু এ কথা শোনার পর রীতিমতো লাফিয়ে উঠলেন, ‘আপনি ভেবেছিলেন আমি অপয়া? আমাকে দেখে আপনি ভালো ভালো শিকার করলেন, হরিণ মারলেন—আর আপনার মুখ দেখে আমি বিশ ঘা চাবুক খেলাম। অপয়া যে কে, সেটা নিশ্চয়ই এখন বুঝতে পারছেন।’ এ কথায় শাহজাদা রাগ না করে নাসিরুদ্দিকে পুরস্কৃত করলেন। নাসিরুদ্দিন নাচতে নাচতে বাড়ি ফিরে তাঁর বউকে এবার সব কথা খুলে বললেন।
প্রথমা প্রকাশনের নাসিরুদ্দিন হোজ্জার ১০০ গল্প বই থেকে