আক্কেলদাঁত কেন ওঠে? এই দাঁত কি ফেলে দেওয়া ভালো?

আপনার বয়স কি ১৭ বছর বা তার বেশি? তাহলে হয়তো আপনার এখনো আক্কেলদাঁত ওঠেনি। তবে শুনেছেন নিশ্চয়ই, আক্কেলদাঁত উঠলে প্রচণ্ড ব্যথা হয় অনেকের। কিন্তু কেন ওঠে আক্কেলদাঁত? এ দাঁত কি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ? নাকি আক্কেলদাঁত উঠলে ফেলে দেওয়াই ভালো?

মুখের ভেতরের দিকে দাঁতের পাটির একদম শেষ দিকের দাঁতগুলো মাড়ির দাঁত নামে পরিচিত
ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

প্রথমেই বলে রাখি, আক্কেলদাঁতের সঙ্গে আক্কেল বা জ্ঞানবুদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই। অবশ্য কেউ কেউ মজা করে বলেন, আক্কেলদাঁত ওঠার সময় ভালোই ‘আক্কেল’ হয়! হ্যাঁ, মজা করে বললেও নামটি এসেছে আরবি ‘আকল’ শব্দ থেকে। ইংরেজিতে একে বলা হয় ‘উইজডম টুথ’। নামটি কীভাবে, কোত্থেকে এসেছে, কে এই নাম দিয়েছেন, তা জানা যায় না।

আক্কেলদাঁত কী

আমাদের দাঁতের দুই পাটিতে মোট ৩২টি দাঁত থাকার কথা। তবে মানুষভেদে কমবেশি হতে পারে। মুখের ভেতরের দিকে দাঁতের পাটির একদম শেষ দিকের দাঁতগুলো মাড়ির দাঁত নামে পরিচিত। ওপরে-নিচে মাড়ির দাঁতের একদম শেষ চারটি দাঁতকে বলা হয় আক্কেলদাঁত। তৃতীয় মোলার দাঁত নামেও পরিচিত এগুলো। ৩২টি দাঁতের মধ্যে এগুলোই সবচেয়ে বড় হয়। সাধারণত ১৭ থেকে ২৬ বছরের মধ্যে এ দাঁতগুলো মাড়িতে জায়গা করে নেয়।

মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এ দাঁতগুলো কেন ওঠে? ১৭ বছর এই দাঁত ছাড়া কাটিয়ে দিতে পারলে এরপর আর এ দাঁতের দরকার কী? সত্যি বলতে, এ দাঁত চারটি আমাদের তেমন দরকার না হলেও আমাদের পূর্বপূরুষদের জন্য খুব কাজের ছিল।

আদিম যুগে কেন গুরুত্বপূর্ণ ছিল

আদিম যুগে মানুষ ছিল গুহাবাসী, তখনো আগুন জ্বালাতে শেখেনি। রান্না ছাড়াই মাংস খেত। আবার খাবার কাটার জন্যও কোনো ছুরি বা এ-জাতীয় কিছু ছিল না। ফলে এসব খাবার অনেক বেশি চিবাতে হতো। আর এ জন্য তাঁদের প্রয়োজন ছিল শক্ত চোয়াল ও দাঁত। আমাদের চেয়ে তাদের চোয়াল ছিল অনেক প্রশস্ত। ফলে আক্কেলদাঁত উঠতে কোনো সমস্যা হতো না। আবার দিনের পর দিন এ ধরনের শক্ত খাবার খেয়ে তাঁদের কিছু দাঁত এমনিতেই দ্রুত পড়ে যেত। ফলে মাড়ির শেষ প্রান্তে ফাঁকা থাকত অনেকখানি। সেখানে আক্কেলদাঁত উঠতে কোনো সমস্যাই হতো না।

খাবার অনেক বেশি চিবাতে হতো বলে আদিম যুগের মানুষের প্রয়োজন ছিল শক্ত চোয়াল ও দাঁত
ছবি: সংগৃহীত

কিন্তু এখন আমাদের খাদ্যাভ্যাস বদলে গেছে। তা ছাড়া আমরা বেশির ভাগ খাবারই খাই রান্না করে। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চোয়ালের হাড়গুলো আগের তুলনায় ছোট হয়ে গেছে। ফলে পাটিতে ৩২টি দাঁতের জায়গা হয় না ঠিকভাবে। তাই আক্কেলদাঁত ওঠার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পায় না। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্কেলদাঁত ঠেলে ওপরে আসতে চায়। তখন অন্য দাঁতগুলো জায়গা ছেড়ে দেয়। পর্যাপ্ত জায়গা না পেলে বাঁকাভাবে হলেও উঠে যায় এসব দাঁত। চোয়ালে যথেষ্ট জায়গা না থাকলে প্রচণ্ড ব্যথা লাগে। অনেক সময় মুখ ফুলে উঠতে পারে। এতে খাবার খেতেও সমস্যা হয়।

সবারই কি আক্কেলদাঁত ওঠে

আক্কেলদাঁত ওঠার সময় এককালীন ব্যথা হয়
ছবি: পেক্সেলস

সবার কিন্তু আক্কেলদাঁত ওঠে না। তবে বেশির ভাগ মানুষেরই ওঠে এ নচ্ছার দাঁত। যাঁদের চোয়াল তুলনামূলকভাবে বড়, তাঁরা আবার আক্কেলদাঁত উঠলে টের পান না।

আক্কেলদাঁত কি ফেলে দেওয়া উচিত

এটুকু পড়ে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, আমাদের জীবনে আক্কেলদাঁতের তেমন গুরুত্ব নেই। তাহলে কি আক্কেলদাঁত ফেলে দেওয়াই উচিত? আক্কেলদাঁতের কারণে আপনার কোনো সমস্যা না হলে রেখে দিতে পারেন। তবে বর্তমানে বেশির ভাগ মানুষই আক্কেলদাঁত ফেলে দেন। এটা কিন্তু ব্যথার জন্য। মূলত আক্কেলদাঁত ওঠার সময় এককালীন ব্যথা হয়। সারা জীবন সে ব্যথা বয়ে বেড়াতে হয় না। তবে সমস্যা অন্য জায়গায়।

দাঁত ব্রাশ করার সময় আক্কেলদাঁত পর্যন্ত সাধারণত ব্রাশ পৌঁছায় না। এতে অনেকের দাঁতে জমতে পারে ক্যাভিটি। অর্থাৎ পাথরের মতো আবরণ। খাদ্যকণা জমে জমে এ আবরণ পড়ে। এর ফলে অনেক সময় ইনফেকশনও দেখা দেয়। আবার এ দাঁতের কারণে অনেকের মুখে ঘষা লাগে। ফলে মুখ খুলতে বা খাবার খেতে সমস্যা হয়। এ দাঁতের কারণে মুখের ভেতরে আলসার বা ওই দাঁতসংলগ্ন টিস্যুতে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই আক্কেলদাঁত ফেলে দেওয়া যেতেই পারে।

সূত্র: লাইভ সায়েন্স ও পপুলার সায়েন্স

আরও পড়ুন